এশিয়ায় বাড়ছে এইচএমপিভির সংক্রমণ, মহামারির শঙ্কা কতটা?

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥  চীনে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ভারতে এ ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে দুই শিশু এবং গুজরাট ও পশ্চিমবঙ্গে একজন করে দুই শিশুর দেহে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এছাড়া হংকং ও মালয়েশিয়াতেও এইচএমপিভি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। চীনের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও ভাইরাসটির গতিবিধি নজরদারি করা হচ্ছে। তবে এই ভাইরাস এখনই মহামারির রূপ নেওয়ার আশঙ্কা কম বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতে এইচএমপিভির সংক্রমণ

ভারতে চারজন এইচএমপিভি আক্রান্তকে শনাক্ত হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে তিন মাস বয়সী এক শিশুকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অপর আট মাস বয়সী শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠছে। কলকাতাতেও এক শিশু আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কর্ণাটকের দুই রোগীর কারও বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস নেই।

আইসিএমআর-এর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে এইচএমপিভির উপস্থিতি ধরা পড়েছে। মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ভারতে ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় অসুস্থতা বা মারাত্মক তীব্র শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার (এসএআরআই) কোনও অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ঘটনা দেখা যায়নি।

চীনে সংক্রমণ

চীনে এইচএমপিভির সংক্রমণ বাড়ছে, বিশেষত ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে। চীনের উত্তরাঞ্চলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তীব্র শ্বাসযন্ত্রের রোগের ঘটনা বেড়েছে।

চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে দেশটির সরকার এই সংক্রমণকে কোভিড-১৯ এর মতো আরেকটি মহামারির আশঙ্কা করছে না।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, শীতকালীন ঋতুতে শ্বাসযন্ত্রজনিত সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। তবে এ বছরের সংক্রমণগুলো তুলনামূলক কম এবং এর বিস্তারও সীমিত।

চীনের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ প্রশাসন অজানা উৎসের নিউমোনিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য একটি পাইলট প্রোগ্রাম চালু করেছে। সংস্থাটি বলছে, এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ল্যাব এবং স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো দ্রুত সংক্রমণ শনাক্ত ও মোকাবিলা করতে পারবে।

এালয়েশিয়া হংকংয়ে পরিস্থিতি

এালয়েশিয়ায় ২০২৩ সালে ২২৫টি সংক্রমণের তুলনায় ২০২৪ সালে ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩২৭টি সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

হংকং, তাইওয়ান এবং কম্বোডিয়াও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। কম্বোডিয়ার সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ কোভিড-১৯ ও ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গে এইচএমপিভির সাদৃশ্যের কারণে সতর্কবার্তা জারি করেছে।

এইচএমপিভি আক্রান্তের লক্ষণ

হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) একটি শ্বাসযন্ত্রজনিত ভাইরাস, যা নিউমোভাইরিডি পরিবারের সদস্য। এ পরিবারের অন্যান্য ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি), হাম ও মাম্পস।

২০০১ সালে প্রথম বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাস শনাক্ত করেন। এটি প্রধানত মৃদু সংক্রমণ ঘটায়। তবে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি ও দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য এটি গুরুতর হতে পারে।

এইচএমপিভি-এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, জ্বর, গলা ব্যথা, হাঁপানি, ত্বকে ফুসকুড়ি ও শ্বাসকষ্ট। গুরুতর ক্ষেত্রে এটি ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ায় পরিণত হতে পারে।

ভাইরাসটি সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে বা দূষিত পৃষ্ঠ স্পর্শ করার মাধ্যমে ছড়ায়।

মহামারির আশঙ্কা কতটা?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এটি নতুন ভাইরাস নয়। ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে প্রথম শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়।

ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেসের কর্মকর্তা ডা. অতুল গোয়েল বলেছেন, এইচএমপিভি অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রজনিত ভাইরাসের মতো। এটি সাধারণ ঠান্ডা লাগার মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। বয়স্ক ও শিশুদের জন্য এটি কিছুটা গুরুতর হতে পারে।

তিনি আরও বলেছেন, দেশের শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কোনও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়া যায়নি। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বড় কোনও প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি।

চীনের চ্যচিয়াং ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের চিলড্রেনস হাসপাতালের শ্বাসযন্ত্র রোগ বিভাগের প্রধান থাং লানফাং জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইচএমপিভি সংক্রমণ মৃদু হয়। তবে কিছু শিশুর সংক্রমণের পর নিউমোনিয়া হতে পারে। শিশু, বয়স্ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তিদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, দুর্বলতা, কাশি এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্নও হতে হবে।

এই ভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট কোনও অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা বা টিকা নেই বলে উল্লেখ করেছেন চীনের বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রর (সিডিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী চীনের বিশেষজ্ঞরাও যত্নের ওপর জোর দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্রাম, হালকা খাবার এবং উপযুক্ত পোশাক পরা।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া, পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখা এবং জনাকীর্ণ স্থান এড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

সূত্র: ফার্স্টপোস্ট, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, সিজিটিএন

Leave a Reply

Your email address will not be published.