প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ঘোষণা করেছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন। নয় বছর ক্ষমতায় থাকার পর লিবারেল পার্টির দুর্বল নির্বাচনি অবস্থানের কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। ৫৩ বছর বয়সী ট্রুডো কানাডার বিখ্যাত প্রধানমন্ত্রী পিয়ের ট্রুডোর ছেলে। গত কয়েক বছরে ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। খাদ্য ও আবাসনের ক্রমবর্ধমান খরচ এবং অভিবাসন বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলোর কারণে তার জনপ্রিয়তা কমে যায়।
গত মাসে অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলে ট্রুডোর অবস্থান আরও দুর্বল হয়। গত সোমবার তিনি জানান, নতুন নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং লিবারেল পার্টির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
নতুন নেতা নির্বাচনের আগে গত ২৪ মার্চ সংসদ পুনরায় বসলে বিরোধী দলগুলো অনাস্থা প্রস্তাব আনবে বলে জানিয়েছে। এটি দ্রুত নির্বাচন ডাকার পথ প্রশস্ত করতে পারে।
কানাডার ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির সম্ভাব্য নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আলোচনায় রয়েছেন যারা: ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড টরন্টোর সংসদ সদস্য এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে ট্রুডোর উত্তরসূরি হিসেবে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
একজন সাবেক সাংবাদিক হিসেবে ফ্রিল্যান্ড ফিনান্সিয়াল টাইমস, গ্লোব অ্যান্ড মেইল ও রয়টার্সে কাজ করেছেন। ২০১৩ সালে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে টরন্টোর ইউনিভার্সিটি-রোসডেল আসন থেকে লিবারেল প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি ইউএসএমসিএ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি) নিয়ে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তবে ট্রুডো তাকে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন, যা তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে।মার্ক কার্নি কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের প্রথম বিদেশি গভর্নর হিসেবে তার দায়িত্ব পালন তাকে আন্তর্জাতিক পরিসরে খ্যাতি এনে দেয়। তবে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাবে তিনি কিছুটা পিছিয়ে থাকতে পারেন। কার্নি পার্লামেন্টে একটি আসন নিশ্চিত না করলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া কঠিন হবে।ডমিনিক লে ব্লঁ ট্রুডোর দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ডমিনিক লে ব্লঁ- বর্তমানে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ৫৭ বছর বয়সী লে ব্লঁ ২০০০ সাল থেকে নিউ ব্রান্সউইকের বুসেজুর আসনের সংসদ সদস্য।ট্রুডোর পদত্যাগের পর তিনি বলেছেন, সংসদে ও মন্ত্রিসভায় আপনার সঙ্গে কাজ করা আমার জীবনের অন্যতম গৌরবময় অভিজ্ঞতা। মেলানি জোলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত একটি নাম। ট্রুডোর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জোলি বিভিন্ন সময়ে কানাডার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শ্যাম্পেন ৫৪ বছর বয়সী শ্যাম্পেন বর্তমানে উদ্ভাবন, বিজ্ঞান ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার অভিজ্ঞতা তাকে একজন উল্লেখ প্রার্থী হিসেবে হাজির করেছে।
নির্বাচনে লিবারেলদের ভবিষ্যৎ
বর্তমান জনমত জরিপে লিবারেল পার্টি ২১ শতাংশ সমর্থন নিয়ে বিরোধী কনজারভেটিভদের (৪৭ শতাংশ) তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান অধ্যাপক ড্যানিয়েল বেল্যান্ড বলেন, ট্রুডোর পদত্যাগের ঘোষণা লিবারেলদের সাময়িকভাবে কিছুটা সুবিধা দিতে পারে। তবে নতুন নেতা নির্বাচনের জন্য সময়ের স্বল্পতা তাদের প্রস্তুতিকে ব্যাহত করতে পারে।
সূত্র: আল জাজিরা