অসংলগ্ন আচরণ ও ঐক্যে ফাটল

অসংলগ্ন আচরণ ও কথাবার্তা এবং ঐক্যে ফাটলে ভরাডুবির পথে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ঐক্য। কিন্তু এই ঐক্যে ফাটলের পরিণতি অতি সম্প্রতি হাসিনা সরকারের পতনেও কাজ করেছিল। কিন্তু সেই থেকে শিক্ষা নেয়া অতি জরুরী ছিল। বৃহৎ স্বার্থকে রক্ষায় ক্ষুদ্র সার্থ ত্যাগ করতে না পারাই এর ভিত্তিমূলে কাজ করেছে। ঐক্যের মুলে ছিল হাসিনা সরকারের পতন। তাই মূল সফলতা পাওয়ার পর প্রত্যেকে প্রত্যেকের স্ব স্ব খায়েস পূরণে এখন ব্যস্ত। তাই এখল মূলে আঘাত লেগেছে এবং দিনে দিনে তা প্রত্যক্ষভাবে প্রতিয়মান হচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই পরিস্কার হচ্ছে। এই লক্ষণ কিন্তু ভালোর দিকে যাচ্ছে না বরং খারাপের দিকে এবং পতনের রাস্তা প্রস্তুতের দিকেই যাচ্ছে। যা হাসিনা সরকারের বেলায় হয়েছিল। ইতিহাস সকলেরই জানা।

এই অবস্থান থেকে প্রত্যেকেরই বের হয়ে আসা উচিত। ক্ষুদ্র স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে বৃহৎ স্বার্থকে আকঁড়ে ধরে এগিয়ে যেতে হবে। নতুবা কাঙ্খিত সফলতা ঘরে তোলা যাবে না। বরং বিফলতায় মুখ ডাকতে হবে এবং গভীর বিপর্যয়ের ঢেওয়ে তলিয়ে যাবে বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি ও উন্নয়ন আর অগ্রগতি। হাসিনা পতনে যেভাবে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগীতা করেছিল তার ধারাবাহিকতা ছিল প্রফেসর ড. ইউনুসের সরকার গঠন পর্যন্ত। কিন্তু দিন দিন সরকারের কার্যক্রমের শুরু থেকেই ফায়দা হাসিলে মত্ত ছিল সকলে। সেই ফায়দার সিংহভাগ হাতিয়ে নিয়ে এখন সরকারকে সহযোগিতায় পিছু টান। নিজেদের বৃহৎ স্বার্থ নিয়ে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে।

এই ক্ষেত্রে ইউনুছ সরকার পরিকল্পনায় এমনকি পরিপক্কতায় দূর্বল। তাদের চোখের সামনেই সব ঘটছে কিন্তু কিছুই করতে পারছে না তার কারণ একটাই আর তা হলো বৃহৎ ঐক্যে ফাটল। এই ফাটল পুনরুদ্ধার সম্ভব নয় বরং অসম্ভবের এক সাগরে হাতড়িয়ে বেড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে ইউনুছ সরকার যদি কঠোর না হয় এবং নিজেদের লক্ষ্যে স্থির না থাকে তাহলে তাদের করুন পরিনতি অপেক্ষার প্রহর গুণছে। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার তাঁর কার্যক্রম স্থির করতে হবে। এবং ভেবে নিয়ে এগুতে হবে যে ভাল কজের সঙ্গে বৃহৎ ঐক্যের পুনরুদ্ধার’র আসাধ্য সাধন সম্ভব নয় বরং যা কিছু হাতের কাছে আছে তা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে এবং সফলতার ছাপ রাখতে হবে। নতুবা বিপদের সম্ভবনা ঘনীভূত হবে। মুখে মধু অন্তরে বিষ (মুখে মুখে ঐক্যবন্ধ কিন্তু ভিতরে ভিতরে স্বরযন্ত্র) করে স্ব স্ব স্বার্থ হাসিলে মত্ত্বদের দ্রুত চিহ্নিত করে করণীয় ঠিক করতে হবে। দৃশ্যমান পদক্ষেপ প্রদর্শন করতে হবে। তাহলে হয়তো কিছুটা স্বাচ্ছন্দে কাজ করা যাবে।

নতুন রাজনৈতিক দল এবং সরকারের যুগসূত্র প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ইউনুছ সরকার থেকে শতমাইল দুরত্বে রাখতে হবে। কোন ভাবেই নতুন দলের সঙ্গে যুগসূত্র স্থাপন করা যাবে না। কারণ নতুন দলের প্রতি জনগণের আস্থা অর্জন অসম্ভবের মধ্যে দুরারোগ্য স্বপ্ন। যা অতিতেও হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না এমনকি হতে দিবেও না। তাই এই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত না হওয়াই ভাল।

ছাত্রদেরকে বলতে চাই বাছারা তোমরা যথেষ্ট করেছ এবং এই জাতি তোমাদেরকে স্মরণে রাখবে। কিন্তু তোমাদের মধ্যে অনৈক্য এবং হিংসা ও মারামারিতে জাতি স্তব্ধ। পাশাপাশি তোমাদের পিতামাতারাও হতভাক এমনকি বাকরুদ্ধ। তাই তোমরা তোমাদের ছাত্র ঐক্যের মেলবদ্ধনটা ঠিক করো এবং নি:শর্ত ও নি:স্বার্থ ভালাবাসার বিনিসুতোর বন্ধনে আবদ্ধ হও। নতুবা তোমার/তোমাদের বিপদ প্রতি পদে পদে। তাই তোমাদের নিকট বিবিত আবেদন তোমারা সংশোধন হও এবং তোমাদের স্ব মহিমা আর ঐক্য ফিরিয়ে আনো। কোনক্রমেই বিভেদ কাম্য নয় এমনকি বিভেদ সৃষ্টিকারী আচরণ ও দৃশ্যমানতা বর্জন আশু কাম্য।

আহত ও নিহতদের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং সেবা ও শুস্রেশায় মনযোগী হও। আচরণ এবং সেবার মানোন্নয়নে মনযোগী হও। ভাষা ও আপ্যায়নে বাঙ্গালী হও। বিনয়ী হও, নম্রতা এবং আন্তরিকতায় সাবধানে অগ্রসর হও। অভিজ্ঞতা একটি বিষয় এবং এই প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে গঠনমূলক সৃজনশীল সেবার ব্রতি নিয়ে এগিয়ে যাও। নিহত ও আহতদের এবং তাদের পরিবারের প্রতি আরো সদয় হও এমনকি সামাজিক ও পারিবারিক এর পাশাপাশি রাষ্ট্রিয় দায়িত্বভার গ্রহন করে নাও বিনয়ের সঙ্গে।

ছোট বড় সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে বলতে চাই ঐক্যে ফিরে আসুন নতুবা নিজেদের খুড়া কবরে আবার প্রবেশ করতে হতে পারে। এই ঐক্যই কিন্তু ফিরিয়ে দিতে পারে আপনাদের স্ব স্ব মহিমার জৌলুস। তাই বিচ্ছেদ এবং বিভেদ আর নয়। স্ব স্ব স্বার্থ্য ত্যাগ করুন। জাতির প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ থাকুন। প্রফেসর ইউনুছকে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করুন। আর কোন ফাদে পা দিবেন না এমনকি নিজেদের বিপদ নিজেরা ডেকে আনবেন না। এই জাতি আপনাদেরকে জানে ও চিনে এবং সেই কথার বাস্তব রূপলাভে সহায়তা করবেন না (ঠেডা পরে হাস মরছে আর আপনাদের ফকিরালি জাহির হইছে)।

এই দেশটাকে এগিয়ে নিতে ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। যতটুকু সম্ভব সবাই মিলে ইউনূছ সাহেবকে সহায়তা করুন এবং দৃশ্যমান ঐক্য ও উন্নয়ন এবং সার্বজনিন উন্নতি দৃশ্যমান করুন। সংস্কার, ভোট, নির্বাচন এই তিনটিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে পর্যাক্রমিক সহযোগীতা এবং উন্নয়ন সাধনে এগিয়ে আসুন। সংস্কার না নির্বাচন তা স্থির করুন। যদি সংস্কার প্রয়োজন তাহলে সংস্কার করুন এবং পরে নির্বাচন করুন। আর যদি নির্বাচন প্রয়োজন তাহলে নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রস্তুত করুন এমনকি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান থেকেই করুন। বিচ্ছেদের মধ্যে নয় বরং ঐক্যবদ্ধ অবস্থানই পারে এই দেশ এবং জাতিকে মজবুত ভিতের উপর দাঁড় করাতে। নতুবা গত পরাজিত সরকারের দশা বার বার জাতিকে বিভক্তিতে ক্ষতবিক্ষত করবে। তাই ঐক্যে মনযোগী হউন।

সেনাবাহিনীর ভুমিকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ! কারণ সেনাবাহিনী বিচারকের দায়িত্ব পেয়েও সেই দায়িত্ব পালনে অপারগে পরিণত হয়েছে। আর পর্যায়ক্রমিকভাবে সেনাবাহিনী কিন্তু জনতার কাতারে গিয়ে পৌঁছাবে। বিগত পরাজিত সরকারও সেনাবাহিনীর উপর ভর করেই চলতে চলতে এসে খোচট খেয়েছে। তাই সাবধান সেনাবাহিনীতে অতি নির্ভরতা কমিয়ে আনুন। সেনাদেরকে তাদের ব্যারাকে ফিরে যেতে দিন। তাদের কাজ দেশ শাসন নয় বরং দেশ রক্ষা। তাই দেশ রক্ষায় সদা প্রস্তুত থাকতে তাদেরকে মুক্তি দিন। নতুবা তাদেরকে পুলিশ ও বিডিআরে একিভূত করে প্রশাসনকে ঢেলে সাজান। তাদের মাধ্যমেই সরকার স্থানীয় সরকার এবং লোকাল প্রশাসন এমনিক সকল কাজে মনোনিবেশ করিয়ে এই বাহিনীকে নতুন পরিচয়ে পরিচিত করুন আর সেই আঙ্গিকেই রাষ্ট্র পরিচালনায় এগিয়ে যান।

সাংবাদিকদের এক্রিডিটেনশন কার্ড ফিরিয়ে দিন এবং সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত করুন। সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করুন। নতুবা বৈষম্য বিরোধী সরকার বৈষম্যের সরকারে পরিণত হবে। সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত বিষয়টি নিস্পত্তি করুন। সাংবাদিকদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যান এই মিনতি কল্যাণের তরে, সামগ্রীক অগ্রগতির নিমিত্তে, ভবিষ্যতের মজবুত ভিত প্রদর্শনের দৃশ্যমানতা দৃশ্যমানকরণে। এই ক্ষণে সকলের সফলতা এবং মঙ্গল কামনায় আগামীর ভাবনায় সদা জাগ্রত থেকে বিধাতার নিকট ফরিয়াদ রেখে শেষ করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.