কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥জেলা প্রশাসক থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া সত্তেও কসবা প্রেসক্লাবের নিজস্ব ৪শতক ভূমিতে রাতের আঁধারে ঘর তুললেন বিএনপি নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের ভাই যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম । সাংবাদিকদের মিথ্যাভাবে হয়রানী করার জন্য তিনি নানা ধরণের ষড়যন্ত্র আঁকছেন। এ ঘটনায় কসবায় সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, কসবা প্রেসক্লাবের একটি স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য কসবা প্রেসক্লাবের সদস্য কার্তিক কর্মকার কসবা প্রেসক্লাবের নিকট দুই শতক ভূমি দান দুই শতক ভূমি বিক্রি করেছেন। ২০১৭ সালে ২৪ মে ওই দলিলটি কসবা সাব রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়।
ওই জায়গায় তৎকালীন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে ১০ লাখ টাকা অনুদান দিয়ে ঠিকাদারের মাধ্যমে বাউন্ডারি নির্মাণ করে দেন। এর পর ২০২২ সালে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কসবা প্রেসক্লাবকে ১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ তলা নান্দনিক প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণ করার ঘোষণা দেন।
কসবা পৌরসভা থেকে প্ল্যান, ডিজাইন, সয়েল টেস্ট সবকিছু সম্পন্ন করা হয়। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে ৫৩৫৯ খারিজ খতিয়ান সৃজন করে মোকদ্দমা নং ১৬৫৭/২০১৬-২০১৭, জোত নং ৫৭১৭ মুলে প্রেসক্লাব ভোগ দখল করে আসছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জাহাঙ্গীর আলম তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে ওই ৪শতক ভূমিতে ২৪টি বাউন্ডারি পিলার ভেঙ্গে রড, সিমেন্ট, বালি ও কনক্রিটসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়।
ইতোমধ্যে ওই স্থান দখলপূর্বক জাহাঙ্গীর আলম বাউন্ডারির কাজ শুরু করতে চাইলে কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি ও সংগঠনের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের সংগে দেখা করেন এবং তাঁর পরামর্শ অনুসারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজধারী কার্যবিধিতে ২৬ জানুয়ারি ১৪৪/১৪৫ ধারা প্রার্থনা করেন। বিজ্ঞ আদালত কসবা থানার ওসিকে এ ব্যাপরে ভূমিদস্যূ জাহাঙ্গীর আলমকে নোটিশ প্রদানের নির্দেশ দেন। জাহাঙ্গীর আলম ওই নোটিশ পেয়েও রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে রাতের আঁধারে ঘর উঠিয়েছেন।
এ বিষয়ে কসবা থানা ও.সি আবদুল কাদির ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানান, তাকে যথারীতি নেটিশ দেয়া হয়েছে এবং প্রেসক্লাবের জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তার ভাই বিএনপি নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী। বরং তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পুলিশকেও হুমকী দিচ্ছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার এহতেশামুল হককে ফোনে জানানো হলে তিনি মামলার কপিটি পাঠাতে বলেন এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
এ প্রসংগে বিএনপি কসবা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সফিকুল আলম স্বপন বলেন, জাহাঙ্গীর আলম আরও অনেকের জায়গা দখল করে বিএনপির মুখে চুনকালি দিয়েছে। তার সাথে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।
কসবা-আখউড়ার বিএনপির সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী কবির আহম্মেদ ভূইয়ার সংগে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এসকল ভূমিদস্যূ ও জুলুমবাজদের সংগে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এরা বিএনপির নাম বিক্রি করে জনগনের অধিকার হরণ করে নিজেদের ফায়দা লুটছে।
ভূমি দাতা কার্তিক কর্মকার বলেন, জাহাঙ্গীর আলম আমার ৫৪শতক জায়গা যার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা অবৈধভাবে দখল করেছে। দখলকৃত জায়গাগুলো নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা করলেও আদালত তার মামলা খারিজ করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলমকে থানার পক্ষ থেকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসার কথা বললেও তিনি থানায় আসতে রাজি হননি বলে অফিসার ইনচার্জ আবদুল কাদির সাংবাদিকদের জানান।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। প্রেসক্লাবের ভূমিতে রাতের আঁধারে গৃহনির্মাণ করায় সারা কসবায় নিন্দার ঝড় উঠেছে।