প্রশান্তি ডেক্স ॥ দেশে গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গত ১২ ফেব্রুয়ারি। ওই প্রতিবেদনে ঘটনাবলি প্রকাশের পাশাপাশি ৪০টি সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন করা হবে, কীভাবে করা হবে, কে করবে এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু না বলা হলেও সুপারিশ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বলে মনে করেন সরকারি কর্মকর্তারা। তাদের মতে, প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তা নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ করছে বিভিন্ন অংশীজন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের আমন্ত্রণে ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন ঘটনাবলি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। সরকার প্রথম থেকেই জানতো এ প্রতিবেদনের একটি অংশ হচ্ছে সুপারিশমালা। তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত আইন, বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বা নাগরিক অধিকার নিয়ে আগে থেকেই কাজ শুরু হয়েছে।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ইতোমধ্যে কোনও কোনও কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়েছে। তাদের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তার সঙ্গে মিল আছে ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিশনের সুপারিশের।’
সংস্কার কমিশন মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য যা যা সুপারিশ করেছে, সেটি নিয়ে কাজ করছে সরকার। ফলে সেগুলো বাস্তবায়িত হলে জাতিসংঘ সুপারিশের পুরো না হলেও বেশির ভাগই বাস্তবায়িত হবে বলে তিনি জানান।
ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের সুপারিশ: ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের ৪০টি সুপারিশকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, জবাবদিহি এবং বিচার বিভাগ (১৩টি সুপারিশ), পুলিশ ও নিরাপত্তা বিভাগ (১০টি সুপারিশ), নাগরিক পরিসর (৭টি সুপারিশ), রাজনৈতিক ব্যবস্থা (৪টি সুপারিশ) ও অর্থনৈতিক সুশাসন (৬টি সুপারিশ)
এ বিষয়ে সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এর প্রতিটি বিষয়ের ওপর সংস্কার কমিশন কাজ করেছে। তাদের সুপারিশগুলো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে করা হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়েছে।’
কতটুকু বাস্তবায়িত হবে : জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের সুপারিশ কতটুকু বাস্তবায়িত হবে, সেটি নির্ভর করবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর।
সরকারের পররাষ্ট্র দফতরের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেকোনও সংস্কার একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে জড়িত অংশীজন এবং বৃহত্তর সমাজ কীভাবে এই সংস্কারকে গ্রহণ করছে, সেটি বিবেচনায় নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।’
আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশ্বের কোনও দেশেই সংস্কার কার্যক্রম খুব সহজে বাস্তবায়ন হয়নি। এটি একটি জটিল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং সময়সাপেক্ষ বিষয়।’
অভিযুক্তদের ফেরত আনা : ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অনেককে দায়ী করা হয়েছে। তাদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবার অনেকে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। তাদের ফেরত আনার বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেটি এখনও পরিষ্কার নয়।
এ বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি একটি সরকারি সিদ্ধান্ত। যদি নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নেন যে অভিযুক্তদের বিদেশ থেকে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করবেন, তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’