বাংলাদেশ জন্মগ্রহণ করার পূর্ব থেকেই জনপ্রীয়তার ধ্বস শব্দটির প্রয়োগ বা ব্যবহার এবং অতি পরিচিতি রয়েছে। এখন বহুল প্রচারে রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের জীবনে। বিশেষ করে আগে এই শব্দটির বহুল ব্যবহার ছিল সরকার এবং বিরোধীদলের নেতাদের ক্ষেত্রে। কিন্তু বর্তমানে শক্তিশালী কোন বিরোধীদল বা সরকার বিরোধী পক্ষ না থাকায় সরকার দলীয় এমপি ও মন্ত্রিদের বেলায়ই বহুল প্রচলিত হচ্ছে। জনপ্রীয়তা এবং ধ্বস এই দুইটি শব্দ বিপরীতাক্ষক কিন্তু কালের পরিক্রমাই এখন একই সুত্রে গাথা। বিভিন্নভাবে গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা পরিচালিত জরিপ এবং দলীয় নিরপেক্ষ জড়িপ পাশাপাশি বিরোধী দলীয় জরিপ সব মিলিয়েই এখন তৈরী হয় আমলনামার নতুন সুচক। যা নির্ভর করেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চুড়ান্ত হবে। সেই হিসেব নিকেশ নিয়ে এখন হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যপার বা তুলকালাম কান্ড ঘটে যাচ্ছে।
রাজনীতির মাঠ সরব রয়েছে ঐ তুলকালাম কান্ডের পরিসমাপ্তির জন্য। তবে এই ব্যাপক ধ্বস একটি সতর্কবানী মাত্র এবং সংশোধন হওয়ার মাপকাঠিও বটে। মানুষ অনেক সময়ে তার অতীতকে ভুলে যায় এবং সঠিক ও ন্যায় কাজটুকু করতে লজ্জা পায়। কখনো কখনো অজ্ঞতা থেকেও এই উদ্ভব ঘটে। বিশেষ করে নেতা ও নেত্রীরা মাঠে কাজ করেন এবং করতে গেলে কাউকে না কাউকে প্রাধান্য দিতে হয়। আর ঐ প্রধান্য দেয়া ব্যক্তিদ্বয়ের দ্বারাই ঘটে বিশাল বিপত্তি বা ব্যাপক ধ্বস নামের জনস্তুতি। অনেক নেতা নিজে থেকেই জনবিমুখ হয়ে পড়েন। আবার অনেক নেতা নিজের কাজ ও গুন দ্বারা জনসংযোগ গড়ে তুলেন কিন্তু তার কাছের লোকদের দ্বারা তিনি হয়ে পড়েন বিভাজিত এবং এক পর্যায়ে আখ্যায়িত হন জনপ্রিয়তার ব্যাপক ধ্বস নামক উপাধিতে।
আমি মনে করি এই কারনগুলির পিছনে যে ডালপালা বা অন্তনীহিত কারণ রয়েছে তার দিকে যদি নেতা বা নেতৃবৃদ্ধ দৃষ্টিপাত দিয়ে সকলের পরামর্শ নিয়ে একটি সমাধানমুলক কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যায় তাহলে হয়ত ঐ ধ্বস শব্দটির বিলুপ্তি ঘটবে। ধরা যাক কোন এলাকার মন্ত্রী বা এমপি মহোদয়ের সঙ্গে দলীয় কর্মী সমর্থকদের দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে যারা খুব কাছের তাদের আচরণ এবং কাজ ও চলন বলন গভীরভাবে নিরীক্ষা করে তারপর যাদের সঙ্গে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সেই লোকদের কাছে ডেকে সমস্যা শুনে সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে সমাধান করলে ঐ দুরুত্ব ঘুচবে এবং আগামী দিনে আরো শক্তিশালী জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি ব্যাপক ধ্বসের বিপরীতে ব্যাপক জনসমর্থন অর্জিত হয়ে আগামীর ভিত্তি আরো মজবুত হবে।
অপরদিকে ধরা যাক, এমপি, বা মন্ত্রী মহোদয় খুব সৎ এবং নির্লোভ। কিন্তু খোলামনে জনগনের জন্য এমনকি দলের জন্য পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মকান্ড ইর্ষনীয় হারে এগিয়ে নিচ্ছেন। যা মানুষের মুখে মুখে এমনকি বাস্তবে দৃশ্যমান। কিন্তু দুভাগ্য হলো ঐ নেতা বা নেত্রীর সঙ্গে দলীয় নেতাদের দুরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে গ্রুপিং এবং লবিং এর জন্য। কিন্ত ঐ নেতা তা বুঝতে বা বিশ্বাস করতে চায় না। কারণ তিনি সৎ। তার কাছে হয়ত কেউ প্রকাশ্যে এই মনোভাবের কথা বলেননি। বা যারা বলেন বা বলতে চান তাদের সেই সুযোগ নেই। কারণ কাছের চাটুকারদ্বয় সেই সুযোগটুকু নানাহ কুটবুদ্ধি বা কুটচালে সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও কেউ কেউ হয়ত বলতে চাই কিন্তু কুটচালবাজদের কুটচালের কারণে আর কুলোয়ে উঠতে পারে না। হয়ত নিজেয় খেয়ে কে যায় বার বার ঐ লোকের উপকার করতে। এমন পরিস্থিতিতে কি করনীয় হতে পারে? তবে নেতা এবং নের্তৃবৃন্দের সঙ্গে দুরত্বের ফল কিন্তু প্রতিয়মান হবে আগামী নির্বাচনে। নির্বাচন পুর্বে আসলে তেমন কিছুই বোঝা যাবে না। তবে আমার পরামর্শ ঐ নেতার উচিত কাছের লোকজন ছাড়া বা কম গুরুত্ব পাওয়া লোকদের দ্বারা খবর নেওয়া এমনকি নিরপেক্ষ দলীয় বা দলের বাইরের লোকদের কাছে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করে খোজ খবর নিয়ে আগামীর করনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। তবে নিরপেক্ষ বা বিরোধী দলীয় লোকদের কাছ থেকে প্রকৃত চিত্রটুকু উদ্ধার করা একরকম সহজ।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে দলের মধ্যে কোন্দল। বিভিন্ন লোকদের মধ্যে ব্যক্তিগত বা কোন সুযোগসন্ধানী উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না করার ফলে কোন্দল সৃষ্টি হয়। কোন কোন সময় সম্মান না পাওয়ার কারণেও কোন্দল সৃষ্টি হয়। তবে ঐ দলীয় কোন্দল মিটানো জরুরী। কারণ পরিবারে সকল সদস্যরা যেমন একমত হয়ে কাজ করতে পারে না তেমনি আওয়ী লীগও একটি পরিবার এবং এই বৃহৎ পরিবারে নানা মত ও পথের লোকজন আছে। তবে সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই হবে মোক্ষম কাজ। পাতিলে পালিতেও টক্কর লাগে। তাই দলীয় নেতা ও কর্মীদের মধ্যেও ঐ সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে কিন্তু কোন ক্রমেই সমস্যা জিইয়ে রাখা যাবে না। হাতের পাঁচটি আঙ্গুল যেমন সমান নয় তেমনি দলীয় নেতা কর্মীরাও নয় তাই তাদের মনোভাব এবং প্রয়োজন ও চাহিদা বুঝে নেতা ও এমপি এবং মন্ত্রীদের কাজ করতে হবে। প্রত্যেকের কথা শুনতে হবে এবং প্রত্যেককে সুযোগ দিতে হবে নেতার কাছে যাওয়ার এবং মনের কথা বা প্রয়োজনের কথা বলার। নেতাও সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কোন্দলের বা ব্যক্তি আক্রোশের স্বীকারে যেন কেউ দল থেকে বিচ্ছিন্ন না হয় বা নতুন করে কোন স্বরযন্ত্র করতে না পারে সেই দিকে লক্ষ রাখতে হবে। কারণ পরিবারে ফাটল ধরলে বৃহত্তর ক্ষতির কারণ হয়। মামলা, হামলা ও পুলিশী হয়রানীমুক্ত রাখতে হবে দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের। তাহলে হয়ত ঐক্যের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে।
আমরা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য তাই বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কাউকে দুরে ঠেলে দিয়ে নয় বরং বুকে আগলে রেখে অভিমান দুর করে দলীয় কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করে আগামীর ফসল ঘরে তুলতে হবে। অভিমানীদের কাছে টানুন এবং কোন্দলে জড়ানোদের মূল্যায়ন করে আগামীর দিকনির্দেশনা ঠিক করুন। বিতর্কীতদের গুরুত্ব কমিয়ে দিন; তারা যতই কাছের হোক না কেন। এপি এস ও পি এস অপনার বেতনভুক্ত কর্মচারী তাই পি, এস বা এ, পি এসদের গুরুত্ব কমিয়ে দলীয় লোকদের মূল্যায়ন বৃদ্ধিকরুন। স্বচ্ছ ভাবমুর্তির লোকদের দলীয় কর্মকান্ডে আরো বেশী সক্রিয় করুন। কর্মী ও সমর্থকদের মূল্যায়ন এবং দলীয় কর্মকান্ডে আরো সম্পৃক্ত করতে নির্বাচনমুখী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যান। ইতিবাচকভাবে জনপ্রিয়তার ব্যাপক ধ্বস শব্দটিকে কাজে লাগিয়ে আগামীর সমৃদ্ধি মজবুত করুন এবং জনমতের তুঙ্গে উঠে আসুন।