প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ অযোগ্য ও আমার একটি ভাবনা

তাজুল ইসলাম (হানিফ): ভাল-মন্দ বোঝার বয়স থেকেই পশ্চিম পাকিস্তান রাষ্ট্রটিকে চরমভাবে ঘৃনা করে আসছি। ঘৃনার কারণ তো সবার-ই জানা। মোটা-দাগে কিছু উল্লেখ করা যায়, ৫২’তে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণা করে বাংলার অনেক তাজা প্রাণ নিভে দেওয়া, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে চরমভাবে বৈষম্য করা। আরও একটি কারণ, ৭০’ এর জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল মেনে বাঙ্গালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে নেতা হিসাবে স্বীকৃতি না দেয়া। আর ৭১’ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের বর্বরতা ও অসর্ভতা তো সবাই জানে। যার ফলাফল, তাদেরকে সারাজীবন গালি দিলেও কিংবা গায়ে সারা জীবন থুথু দিলেও তা কম হবে। তবে, ৯০’ এর দশকে স্কুলে পড়াকালীন, পাকিস্তান ক্রিকেটের প্রতি ছিল অসম্ভব ভালবাসা। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, আকিজ জাবেদ, সেলিম মালিক, সাইদ আনোয়ার, সাক্লাইন মোস্তাক, মোস্তাক আহমেদ, ইঞ্জামামালুল হক, ইজাজ আহমেদ, রমিজ রাজা, শহীদ আফ্রিদি, আব্দুর রাজ্জাক, শোহেব আক্তার, মইন খান সহ অন্যন্যাদের খেলা ছিল মুগ্ধ করার মত। কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান আমার কাছে, এক ঘৃন্য, জঙ্গি, বর্বর, অসর্ভ্য ও এক অরাজক দেশ। আর এই ভঙ্গুর দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে আমি সত্যি-ই চমকে গেলাম।

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি মামলার রায়ে নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ফলে, প্রধানমন্ত্রীত্ব হারালেন তিনি।কাঠগড়ায় তাঁর পুরো পরিবার। কত বড় সাহসী ও যুগান্তকারী রায়।তবে, পর্দার আড়ালে মজার ব্যাপার হল ঐ দেশের তাঁর চেয়েও সাহসী ও শক্তিশালী  “সেনাবাহিনী”। আমরা জানি, স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তানী রাজনীতিকরা নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বের জন্যে  ভারতের মতো মেচুর্ড পার্লামেন্টারী গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তুলতে পারেনি। সেই অক্ষমতার সুযোগে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে বার বার। ইতিহাস শুধু বলছে রক্তপাত আর বিশ্বাসঘাতকতার গল্প। পাকিস্তানের ৭০ বছরের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। কিন্তু  তাদের বিচারবিভাগ এতটাই প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়ে গেল ? ? ?

 

আমি চিন্তা করি, এই প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ আমার সোনার বাংলাদেশে বিচারবিভাগের  কতটুকু হয়েছে ? আর্টিকেল ৭০ দিয়ে এমপিদের মুখ বন্ধ রাখা কতটা উচিত ? ৫৭ ধারা দিয়ে সমাজে কতটুকু শৃংখলা আনয়ন সম্ভব ? আইনবিভাগ দারা বিচারপতিদের অপসারণ কতটা যৌক্তিক ?  নির্বাচন কমিশন, দুদক, সরকারি কর্মকমিশনসহ অন্যন্যা সাংবিধানিক পদ কিংবা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ আমরা কেন করিনা ? এসবের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ কি মঙ্গলগ্রহ থেকে কেউ এসে করে দিয়ে যাবে ? আর এই জন্যে দায় কি শুধু সরকারের ? নাকি সরকার, জনগণ, সুশীল সমাজ,রাজনৈতিক নেতৃত্ব, মিডিয়া  ও সাংবিধানিক সংস্থার পদ-দারিদের সমন্বয়ের ফসল ?

তাই আমি জোর গলায় বলতে চাই, আমরা রাষ্ট্রের জনগণ হিসেবে সকলেই যতবেশী কথা-বার্তা, আচার-আচরণে,ব্যবহারে, কাজে-কর্মে, শিক্ষা-দিক্ষায়, দায়িত্বশীলতায়, সচেতনতায়, সততাই মেচুরিটি দেখাতে পারবো  তত বেশী সাংবিধানিক সংস্থার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হবে এবং উন্নত দেশ হওয়ার দিকে এগিয়ে যাব। আমাদেরকে হতে হবে গণতান্ত্রিক, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং তাঁর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। সুতরাং আমরা জনগণ, সরকার, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সুশীল সমাজ, মিডিয়া ও সাংবিধানিক সংস্থার পদ-দারিগণ কতটা প্রস্তুত ?

Leave a Reply

Your email address will not be published.