এই বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে ক্ষমতা আর অর্থের দিকে। অর্থ এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীক আচরণে অভ্যস্ত বিশ্ব এখন ক্ষমতাকে পাকাপোক্তকরণে মত্ত। তবে এই ক্ষমতা কারো কাছে পাকাপোক্তকরণের চুক্তিতে আবদ্ধ হতে চায়নি এবং চাইবেও না। তাই যারাই ক্ষমতা এবং অর্থকে পাকাপোক্তকরণের চুক্তিতে আবদ্ধ করতে চায় বা চেয়েছে তাদেরই পতন সুনিশ্চিত হয়েছে। আর এই দৃষ্টান্ত চিরকালের। তবে ইতিহাস কখনো কখনো এই দৃষ্টান্তকেও পাশ কাটিয়ে স্বভাবসুলব নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে চাই। সেখানেও খোচট খায়। প্রকৃতির নিয়মে সৃষ্টিকতার অভিপ্রায়ে চিরকালের স্থায়ী দৃষ্টান্ত অবিচল থেকে তাঁর কাজটুকু নিখুতভাবে করে যাচ্ছে। সদ্য বিদায়ী বাংলাদেশ সরকার একটি উদাহরণও বটে। তবে শুধু বাংলাদেশ কেন? অবাক বিশ্বের দিকে তাকিয়ে দেখুন স্বভাবশুলভ ইতিহাসের কোন বদল হয়নি বরং এর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি এবং চর্চার অগ্রগতিই হয়েছে।
আমেরিকার ক্ষমতায়ও পালাবদল ঘটেছে এবং বারংবারই তার প্রতিচ্ছবি দৃশ্যমান হয়ে প্রতিয়মান হয় যে, ক্ষমতা এবং অর্থ কখনো কারো একক দখলে থাকতে পছন্দ করে না বরং এই ক্ষমতা এবং অর্থ সকলকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পছন্দ করে। একত্রে থেকে ক্ষমতার অধিকারীকে গৌরবান্বিত করা এবং অর্থের সাম্য বিরাজমান রাখাই মুল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তাই এই ক্ষমতাকে আকড়ে ধরে না থেকে বরং ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরন অথবা ক্ষমতাকে সেবার মানদন্ডে রেখে ক্ষমতার ব্যবহার সেবায় পরিণত করা উচিত। ক্ষমতার অধিকারীরা কখনোই ক্ষমতাকে ব্যবহার করা এবং অন্যকে ক্ষমতার দ্বারা বেকায়দায় ফেলা উচিত নয়। বরং ক্ষমতাকে ব্যবহার করে অন্যকে উপকার করার মানুষিকতাই ক্ষমতার ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে। এই ক্ষমতা ব্যবহারে কারো উপকার আর কারো ক্ষতি হওয়া চলবে না বরং উভয়েরই উপকারে ক্ষমতার ভারসাম্যে সাম্যের নীতি ও ভিত্তিকে প্রতিস্থাপন করতে হবে। এটাই হলো সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায় এবং সৃষ্টির প্রতি একমাত্র ইচ্ছা ও আকাঙ্খা।
পৃথিবীর এই ক্ষমতার বলয়ের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেয়ে সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের দিকে মনযোগী হওয়া উত্তম। কারণ পৃথিবীর ক্ষমতার বলয় ব্যবহার করে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করা যায়না। যেমন সদ্য বিদায়ী সরকার (বাংলাদেশ এবং অ্যামেরিকা) দিকে তাকিয়ে নিজেদেরকে উপযুক্ত স্থানে প্রতিস্থাপন করুন। বাংলাদেশ এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে যেখানে শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থার মুখোমুখি। তাই এই অবস্থায় ক্ষমতামোখি না হয়ে জনতামোখি হওয়া ফরজে আইন। জনতার কল্যাণে সমতার মা্যধ্যমে ন্যার্য্যতা প্রতিষ্ঠিত করা এখন সময়ের দাবি। বাংলাদেশকে কাছে টানতে চাইছে যারা তারা কিন্তু বাংলাদেশের জনতার প্রয়োজনে তা চাইছে না বরং তা চাইছে শুধুই তাদের নিজেদের প্রয়োজনে। আর এই ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরী। অপরদিকে নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্তকরণের লক্ষ্যে কারো ডাকে সাড়া দেয়া একটি বোকামি ছাড়া কিছুই না বরং নিজেদের প্রয়োজন এবং নিজেদের জন্য সাম্য প্রতিষ্ঠা করা আর ন্যায্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করাই শ্রেয়। তাহলে রাষ্ট্রের কাছ থেকে রিওয়ার্ড এবং জনতার কাছ থেকে সম্মান ও সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে সাহায্য ও আশির্বাদ এবং সকল প্রয়োজনীয়তা পূরণের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা শতভাগ সফল হবে।
আসুন আমরা ক্ষমতা আর অর্থের জন্য বিভিন্ন কূটকৌশলে মনযোগী না হই বরং ক্ষমতা এবং অর্থকে সকলের জন্য উন্মুক্তকরণের কাজে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে কার্যকর ভুমিকায় অবতীর্ণ হই। কাউকে বাদ দিয়ে নয় বরং সকলকে একত্রে নিয়ে দেশ গঠনে এমনকি মানুষের ও সৃষ্টির কল্যাণে নিবেদিত হই। এইক্ষেত্রে পুর্ববর্তী সরকারের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়ার ছিল ও আছে এবং থাকবে। কারণ পূর্ববর্তী সরকার সকলকে ঐক্যবদ্ধ করেনি বরং নিজে নিজে অথবা একা একা এমনকি নিজস্ব বলয়ের মানুষদের নিয়েই অগ্রসর হয়েছে। আপামর জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেনি এমনকি সকলের জন্য কিছু করলেও সকলকে বোঝাতে পারেনি অথবা সকলকে ঐ কল্যাণকর কাজের অংশীদ্বার বা অংশীজন হিসেবে বোঝাতে সক্ষম হয়নি। তাই তাদের ঐ করুন পরিণতি এবং সেই পরিণতি আগামীর একটি শিক্ষাও বটে। তবে যদি কেউ উপকার নিতে না চাই অথবা সামষ্টিক বা সার্বজনিন উপকার হলেও যদি কেউ গ্রহন করতে না চাই তাহলে ঐ উপকার করার কোন প্রয়োজন নেই। বরং যেই উপকার সকলের চাওয়া সেই উপকারে মনযোগী হওয়া উচিত।
আগামীর ভাবনায় বাংলাদেশ ভালো কি মন্দ তা নয় বরং আগামীর ভাবনায় বাংলাদেশের ঐক্য এবং সার্বজনীন কল্যাণ। সকলের চাওয়া ও পাওয়ায় মনযোগী হয়ে সরকার সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা। তবে বিভদ নয় এবং বিভাজনও নয় বরং ঐক্য এবং ঐকবদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সরকার মনযোগী হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা ও কামনা। রাজনৈতিক দলগুলো এবং সাধারণ জনতা ও পরাজিত শক্তির মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন আর সেই ঐক্যের সাথে সরকারের যুক্ত হওয়া নৈতিক দায়িত্ব। তবে সকলের ঐক্যবদ্ধতাই আমাদেরকে এই অশান্তময় বিশ্ব প্রতিযোগীতা এবং বিশ্ব ক্ষমতার মহড়া থেকে রক্ষা করতে পারে। তবে যেভাবে বিভিন্ন বলয়ে বিভক্তি পরিলক্ষীত হচ্ছে তাতে আগামীর মঙ্গলের পরিবর্তে অমঙ্গলই সাধিত হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তাই ঐ অমঙ্গল থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন বৃহত্তর ঐক্য।
আসুন আমরা সবাই সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতা ও অর্থের দিকে ফিরে তাকাই এবং তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার আর অর্থের ব্যবহার সম্পর্কে একটু জানি এবং সেই অনুযায়ী আমাদের জীবন ও কর্মকে সাজিয়ে সামনে অগ্রসর হই। তাহলের আগামীর কল্যাণ এবং নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে। যার যার অবস্থান থেকে সেইদিকেই অগ্রসর হওয়া উচিত। রাষ্ট্র, সরকার, রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ জনগণ সকলেরই এখন সৃষ্টিকর্তার মুখাপেক্ষি হওয়া উচিত। কারণ অল্পদিনের মধ্যেই নিজেদের জিবনের শেষ পরিণতি দৃশ্যমান হবে তাই শেষ পরিণতির কথা সবাই জানি এবং দেখি আর দেখবও তাই সময় ও সুযোগ থাকতেই সেই সময় এবং সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বময় শান্তির বাতায়ন উন্মুক্ত করি। সৃষ্টিকর্তার পূর্বপরিকল্পনার দৃশ্যায়ন পুর্ণপ্রতিষ্ঠা করি এবং সকলের সমঅধিকার সুনিশ্চিত করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন এবং আমাদের প্রত্যেককে আপনার পরিকল্পনানুযায়ী পৃথিবীতে ব্যবহার করুন।