আশঙ্কাজনক হারে কমছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনা: বিশ্বব্যাংক

প্রশান্তি ডেক্স ॥ বিশ্ব অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনা দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ে জোর না দিলে দুর্বল রাজস্বভিত্তি নিয়ে ভবিষ্যতের ধাক্কা সামলানো এ অঞ্চলের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে।

গত বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্রাক্সিং টাইমস’ শীর্ষক অর্ধ-বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে— দক্ষিণ এশিয়ায় ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে, যা পূর্ববর্তী পূর্বাভাসের চেয়ে ০.৪ শতাংশ পয়েন্ট কম। তবে ২০২৬ সালে এটি কিছুটা বেড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার বলেন, ‘গত এক দশকে একের পর এক ধাক্কায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। কর কাঠামো সংস্কার, কৃষি খাতের আধুনিকায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

বিশ্বব্যাংক বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় করহার তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও আদায় কম। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার গড় সরকারি রাজস্ব ছিল জিডিপির মাত্র ১৮ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের গড় ২৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় জিডিপির ১ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত ঘাটতি রয়েছে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি ও ব্যাপক অনানুষ্ঠানিক খাত এই ঘাটতির অন্যতম কারণ হলেও প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নীতিগত দুর্ব্যবস্থাপনাও দায়ী।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওহনসরগে বলেন, ‘রাজস্ব ঘাটতি দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক অস্থিতিশীলতার মূল কারণ। এতে করে একদিকে যারা কর দেন, তাদের ওপর বাড়তি বোঝা পড়ে। অপরদিকে সরকার প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়।’

প্রতিবেদনে রাজস্ব আয় বাড়াতে কর ফাঁকির সুযোগ বন্ধ, কর কোড সরলীকরণ, কর প্রশাসন শক্তিশালীকরণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দূষণ কর আরোপ করে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং রাজস্ব বৃদ্ধির যুগপৎ প্রস্তাবও করা হয়েছে।

দেশভিত্তিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস

১. বাংলাদেশ: রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আর্থিক দুরবস্থার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশে নেমে আসবে। পরের বছর কিছুটা উন্নতি হয়ে ৪.৯ শতাংশ হতে পারে।

২. ভারত: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৫ শতাংশ, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কিছুটা কমে ৬.৩ শতাংশে দাঁড়াবে।

৩. পাকিস্থান: প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কা কাটিয়ে ২০২৪-২৫ সালে ২.৭ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ সালে ৩.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।

৪. শ্রীলঙ্কা: ঋণ পুনর্গঠনের অগ্রগতির ফলে ২০২৫ সালে ৩.৫ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ৩.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনা রয়েছে।

৫. নেপাল: প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আর্থিক খাতের দুর্বলতায় ২০২৪-২৫ সালে প্রবৃদ্ধি ৪.৫ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ সালে ৫.২ শতাংশ হতে পারে।

৬. ভুটান: কৃষি খাতে দুর্বলতার কারণে প্রবৃদ্ধি ২০২৪-২৫ সালে ৬.৬ শতাংশ হলেও ২০২৫-২৬ সালে হাইড্রোপাওয়ার নির্মাণ কার্যক্রমে গতি পেয়ে ৭.৬ শতাংশ হতে পারে।

৭. মালদ্বীপ: বিমানবন্দর টার্মিনাল নির্মাণ শেষ হওয়ায় ২০২৫ সালে ৫.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা, তবে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে ঝুঁকি রয়েছে।

৮. আফগানিস্থান: আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ২.৫ শতাংশ এবং পরবর্তী বছর ২.২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস।

বিশ্বব্যাংক বলছে, রাজস্ব বৃদ্ধির উদ্যোগই দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক স্থিতিশীলতার মূল চাবিকাঠি হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.