চট্টগ্রামে খাল-নালার ৫৬৩ স্থান ঝুঁকিপূর্ণ, দেওয়া হচ্ছে বাঁশের বেড়া

প্রশান্তি ডেক্স ॥ চট্টগ্রাম নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে খাল, নালা ও ড্রেনের ৫৬৩টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিটি করপোরেশন (চসিক)। এসব অরক্ষিত খাল, নালা ও ড্রেনে পড়ে প্রাণহানি ঠেকাতে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সম্প্রতি এ তালিকা চসিকের প্রধান প্রকৌশলীকে দেওয়া হয়। সেগুলোতে বাঁশের বেড়া দেওয়ার কথা জানালেন মেয়র।

চসিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল রাতে নগরের চকবাজার থানার কাপাসগোলা এলাকায় হিজড়া খালে পড়ে মৃত্যু হয় ছয় মাসের শিশু সেহরিশের। পরদিন সকাল ১০টা ১০ মিনিটে কাপাসগোলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চাক্তাই খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মায়ের কোলে থাকা ছয় মাস বয়সী ওই শিশুসহ তিন জনকে নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উল্টে ওই খালে পড়ে যায়। রিকশায় থাকা শিশুটির মা সালমা বেগম ও দাদি আয়েশা বেগম খাল থেকে উঠে এলেও শিশুটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। বৃষ্টিতে বা জোয়ারের পানিতে অরক্ষিত খাল, নালা, ড্রেনে পড়ে প্রাণহানি ঠেকাতে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের তালিকা করার নির্দেশ দেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

নির্দেশনা অনুযায়ী গত সপ্তাহে খাল, নালা ও ড্রেনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই তালিকা জমা দেওয়া হয় চসিকের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে। তালিকা অনুযায়ী ৪১টি ওয়ার্ডে মোট ৫৬৩টি জায়গাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে ১ নম্বর জোনে ৪৭টি, দুই নম্বর জোনে ৭৮টি, ৩ নম্বর জোনে ৬৮টি, চার নম্বর জোনে ৭৪টি, ৫ নম্বর জোনে ৩৩টি এবং ৬ নম্বর জোনে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত হয় ২৬৩টি। তালিকা অনুযায়ী দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন স্থানে ৮৬৩টি ¯্ল্যাব বসাতে হবে। এ ছাড়া বেষ্টনী নেই ১৫৬টি জায়গায়। সেগুলোতেও নিরাপত্তাবেষ্টনী দিতে হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে নগরের এসব খাল ও নালা-নর্দমায় পড়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৫ জন। এর মধ্যে ২০১৭ সালে এক, ২০১৮ সালে এক, ২০২১ সালে পাঁচ, ২০২২ সালে এক, ২০২৩ সালে তিন, ২০২৪ সালে তিন ও চলতি বছর এক জন। এতো প্রাণহানির পরও টনক নড়েনি সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। উন্মুক্ত নালাগুলো এখনও অরক্ষিত। কোনও ধরনের ¯্ল্যাব কিংবা নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে নিয়ে ক্ষুব্ধ নগরবাসী।

এর আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে নগরের ঝুঁকিপূর্ণ খাল, নালা-নর্দমার একটি তালিকা প্রস্তুত করেছিল সিটি করপোরেশন। ওই তালিকায় দেখা যায়, নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে খাল, নালা-নর্দমা আছে এক হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়া খালের পাড় আছে ১৯ হাজার ২৩৪ মিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে পাঁচ হাজার ৫২৭টি স্থানে। যেগুলোকে সেসময় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে দেওয়া হয়নি নিরাপত্তাবেষ্টনী।

এ বিষয়ে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘নগরের খাল, নালা ও ড্রেনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করেছেন কর্মকর্তারা। তালিকা হাতে পেয়েছি। আপাতত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া হবে। পরে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘খাল, নালা ও ড্রেনে পড়ে প্রাণহানির ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। ঝুঁকিপূর্ণ খাল বা নালাগুলোতে আপাতত বাঁশ দিয়ে নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া হবে। পরে স্থায়ী নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.