সরকারের মনোভাব ও নির্বাচন

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারীতে নির্বাচন হবে এবং সেই নির্বাচন নিয়ে এখন তোড়জোড় চলছে। সবাই এই নির্বাচন কে কেন্দ্র করে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করছেন। তবে পর্দার অন্তরালে চলছে নির্বাচনী খেলা। পর্দার বাইরের দৃশ্য যদিও এলোমেলো তারপরও বলছি নির্বাচন হবে এবং এই নির্বাচন হবে সমঝোতার নির্বাচন। এই নির্বাচন কেন্দ্রীক জনআকাঙ্খা পূরণে কতটুকু ভুমিকা রাখবে তা পরবর্তীতে দৃশ্যমান হবে। তবে আন্দাজ করা যাচ্ছে এই নির্বাচন পুর্বের নির্বাচনের মতই একটি সাদামাটা নির্বাচন হবে। যা কারো কাছে গ্রহণযোগ্য আর কারো কাছে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হবে। তবে গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে শতভাগ উর্ত্তীর্ণ হতে হলে এই নির্বাচন হাসিনা মার্কা বা তার আদলের নির্বাচন হলে চলবে না।

ঘটনাদৃশ্যে মনে হচ্ছে হাসিনা মার্কা আরেকটি নির্বাচন জাতি প্রত্যক্ষ করবে। পরাজিত সরকার প্রধান বিভিন্ন বক্তব্য এবং সাংবিধানিক দোহাই দিয়ে ঐসকল নির্বাচনগুলোকে জায়েজ করতে মরিয়া ছিল। কিন্তু সর্বস্তরের জনগণ ও সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ঐসকল নির্বাচন দৃশ্যমান ছিলনা। যেমন বর্তমানে যারা নির্চাচন নিয়ে কথা বলছেন এবং নির্বাচন করবেন বলে মাঠে নামছেন ঐ পরাজিত সরকারের আমলে তারা নির্বাচন থেকে দুরে ছিলেন। আর আজ দুরে আছেন এবং সরকার রাখছেন ঐসময় যারা নির্বাচন করেছেন সেইসকল দলগুলোকে। তাহলে এই দুই নির্বাচনের ফলাফল একই সূত্রে গাথা এবং তা জনআকাঙ্খার প্রতিফলন নয়। নির্বাচন হবে সরকার আসবে কিন্তু জনআকাঙ্খা পূরণের সরকার হবে না এবং স্থায়ীত্ব আর নিশ্চয়তা ও নিরাপত্বার সরকার হবেনা তা কি করে হয়? উন্নয়ন আর গতিশীলতার সরকার হবে না। জবাবদিহীতার শতভাগ পুরণের সরকার হবে না। তবে যদি তাই হয় তাহলে কিভাবে এই আসন্ন নির্বাচনকে শতভাগ গ্রহণযোগ্য বলা যায় এবং জনআকাৃঙ্খায় পরিণত করা যায় সেই দিকে দৃষ্টি দেয়া জরুরী নয়? নতুবা জাতির সামনে আরো একটি বিপ্লব অত্যাসন্ন।

সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য এখণ প্রকাশ্যে। জুলাই ২৪এর ঐক্যে ফাটল দৃশ্যমান। তাই ক্ষমতার মোহে এবং ক্ষমতার পালাবদলে রাষ্ট্র একটি অনিশ্চয়তার দিকে এগুচ্ছে। এমনিতেই প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্থবির। আর এর উপর এসে চেপে বসেছে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিভাজন। এইসকলক দৃশ্যমানতা জাতিকে অস্থিতিশীলতার দিকেই ধাবিত করছে। ক্ষতির পরিসীমাকে ছাড়িয়ে যেতে জাতি যেন দৌঁড় প্রতিযোগীতায় নেমেছে। তাই এই সময় আবার আন্তর্জাতিক লোভাতুর শ্রেণীর থাবা এসে পড়েছে আমাদের ঐক্যের ঐ দুর্বলতায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা তাদের মনের খায়েস পুরণে শতভাগ সফল এবং সেই খায়েসকে উজ্জ্বীবিত করে রাখার জন্য যা যা করার তাই করে যাচ্ছে প্রকাশ্যে এবং পর্দার অন্তরালে। তাই এই অবস্থার উন্নতি সাধনের জাতিকে আরো একটিবার দেশমার্তৃকার তরে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দল, মত ও পথ এবং স্বাধীনতার পক্ষে ও বিপক্ষে এই বিভক্তির ভেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশের সকল মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরেকটি সংগ্রাম পরিচালনা করতে হবে। তাহলেই জাতি মুক্ত এবং দেশ স্বাধীন আর রাষ্ট্র কাঠামো নিঝঞ্জালভাবে জাতির আকাঙ্খা পুরণে এগিয়ে যাবে।

সরকারে যারা আছেন তাদের মধ্যেও ঐক্যবদ্ধতা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। অক্ষমতার ছাপ দৃশ্যমান হচ্ছে। মনে হচ্চে তারা এখন দলীয় আচরণে পক্ষপাতদুষ্ট। তাই তাদেরকে বুঝতে হবে তারা কোন দলের নয় বরং তারা জাতির আকাঙ্খার ফসল এবং জাতির আকাঙ্খা পুরণে সকলের উদ্ধে উঠে সকল দায়িত্ব সঠিক ও ন্যায়পরায়নতায় এবং কঠোরতায় পরিপালন করতে হবে। এতোদিনের কর্মকান্ডে তা দৃশ্যমান হয়নি। কি করলে দৃশ্যমান হবে এবং কি কারণে দৃশ্যমান হয়নি তা তারা ভাল করেই জানেন কিন্তু কেউ কেউ যদি মনে করেন এখনও বুঝতে এবং জানতে পারেননি তাহলে ক্ষমতা ছেড়ে সাধারণের ভুমিকায় অবতীর্ণ হউন। যারা জানে এবং বুঝে ও অভিজ্ঞ সেই ব্যক্তিদ্বয়কে দায়িত্ব দিয়ে জাতির আকাঙ্খা পুরণে ভুমিকা রাখুন।

পরাজিত সরকারের আমলে জেল-জুলুম এবং অত্যাচার সহ্যকরে শতঅভিজ্ঞার সংগ্রহশালায় ভাসছি কিন্তু বর্তমানের সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো ঐসকল অভিজ্ঞতার কোন মূল্যায়নই করেনি বরং ঐ অত্যাচার জুলুম এবং অন্যায়ের ষ্টিমরোলার চলমান রাখারই দৃশ্যমান কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। আইন ও আদালতকে স্বচ্ছ করুন এবং সকলের জন্য সমান অধিকারে উন্মুক্ত করুন। পুর্বের বিচারাধীন মামলাগুলো পরিচালনায় গুরুত্ব দিন। মামলা থেকে অব্যাহতি নয় বরং মামলা পরিচালনায় সুযোগ ও ন্যার্যতা আনয়ন করুন। পুলিশ প্রশাসনকে কার্যকর করুন। প্রশাসনিক সংস্কারে সকল সমন্বয়কে পারস্পারিক যোগসাজসে দৃশ্যমান করুন। প্রশাসনের কোন বিভাগকেই একে অন্যের মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না; কাউকে বেশী গুরুত্ব আর কাউকে কম গুরুত্ব এই মনোভাবও প্রত্যক্ষ করাবেন না। উভয়ের সঙ্গেই সংযুক্তি এবং যোগাযোগ সম্বন্ধ বৃদ্ধি করুন; উভয়কেই মূল্যায়ন করুন এবং যথাযোগ্য সম্মানে সম্মানিত করুন। স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদানের জন্য স্বীকৃতি দিয়ে উৎসাহিত করুন।

যাই করুন জনআকাঙ্কা পুরণের লক্ষ্যে করুন। আগামীর জনআকাঙ্খা পুরণে ভুল হলে জনবিস্ফোরণ সৃষ্টিতে যে ভুমিকম্প এবং অগ্নোউৎপাত হবে তা ঠেকানোর ক্ষমতা এই বাংলায় কারো নেই। বরং সকলকিছু ধ্বংসের পরই আবার পুন:গঠন হবে। আর সেই পুন:গঠন জাতি আশা করে না। বরং এখই পুন:গঠন হউক এবং সকল ধ্বংস ও নৈরাজ্য থেকে জাতি মুক্তিপাক। ৬৯, ৭১, ৯০ থেকে ২৪ এই অভ্যুত্থানের বিসর্জনের অর্জনগুলোকে স্থায়ীত্ব দিতে কাজ করুন। নতুবা বার বার জাতির সামনে প্রজ্জ্বলিত হবে ৬৯,৭১,৯০-২৪। আসুন আমরা সকলে মিলে এই ধ্বংসাত্মক অভিপ্রায় থেকে গঠনমুলক এবং শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের পুন:নিশ্চয়তার বাংলাদেশে পরিণত করি এবং ঐক্যের সূদুঢ় ভিত্তিকে আরো মজবুত করি। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করুন এবং পথ দেখিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যান এই কামনাই করি। আমিন

Leave a Reply

Your email address will not be published.