কথায় আছে এবং বহুল প্রচলিত প্রবাদ বাক্য বা গ্রাম্য কথা ছিল এমন যে, আগের আল (হাল) যেদিকে যায় পিছনের আল (হাল) সেদিকেই যায়। যেমন হাল-চাষ করাকালীন দেখেছি এবং শিখেছি ও শুনেছি এবং ব্যবহার করেছি যে, তিন বা চারজন মিলে একটি জমি চাষ করতে গেলে আগের হাল বা জন গরুকে যেদিকে নিয়ে যায় পিছনের গুলোও সেদিকেই যায়। আর তখনই বুঝতে পারলাম আগের আল যেদিকে যায় পিছনের আলও সেদিকেই যায় কথার অর্থ। হ্যা সবক্ষেত্রেই এই কথাটির অর্থবহ এবং তাৎপর্যপূর্ণ গ্রহণযোগ্যতা এবং বহুবিধ প্রামানিক অর্জন রয়েছে। অতিতের দিকে তাকিয়ে বিশ্লেষণ করলে এর শতভাগ প্রমান পাওয় যায় এবং বর্তমানের দিকে তাকালে সেই শতভাগই প্রমান হয়। তাহলে কি বুঝলেন? আর কি বলবেন এবং ভাববেন? সেই অনুযায়ী কি কাজ করবেন তা এখনই ঠিক করুন।
আমাদের দেশের পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা এবং কাঠামো এমনকি রাজনৈতিক সংস্কৃতি আর অর্থনৈতিক, কাঠামোগত উন্নয়ন সাধনেও এই একই কথার পুণ:ধ্বনী উচ্চারিত হয়। বাস্ততে যা দেখলাম এবং শিখলাম এমনকি বুঝলাম তার আলোকে এই অভিব্যক্তিই ব্যক্ত করা ছাড়া কোন উপায় নেই। ভুল ভুল এবং ভুলের বেসাতি সাজিয়ে ভুলের রাজ্যে বসবাসই যেন এখন একমাত্র পথ ও অবলম্বন হিসেবে অগ্রগামীতায় স্থান পেয়েছে। অতিত থেকে আমরা কি কোন শিক্ষা নিয়েছি? বর্তমান থেকে আমরা কি কোন দিক্ষা নিয়েছি? অথবা অতিত এবং বর্তমানের সংমিশ্রণে কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছি? যুগের চাহিদা এবং দৃশ্যমান বাস্তবতার আলোকে সুদুরপ্রসারি চিন্তা ও কর্মের সমন্বয়ে কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছি বা নেয়ার চেষ্টা করেছি? এই প্রশ্নগুলো এখন ভেবে দেখার সময় এবং সর্বোপরী পদক্ষেপের সময় আর সেই পদক্ষেপানুযায়ী বাস্তবায় দৃশ্যমান করার সময়।
অতীতের সরকারগুলো যে পথে অগ্রসর হয়েছিল বর্তমানেরও ঐ একই কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। অতিতের সরকারগুলো যে ভুল করেছিল এবং মাসুলও দিয়েছিল সেই একই ভুল এখনও চলমান রয়েছে। অতিত থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুনালোকে কোন পদক্ষেপ এখনও দেখা যায়নি। শুধু যে সরকার তা নয় বরং রাজনৈতিক দলগুলো, সামাজিক বন্ধনগুলো, সরকারী আফিস আদালতের কার্যক্রমগুলো এবং এর সঙ্গে জড়িত লোকবলগুলো, ধর্মীয় মতভেদকারী ও ফ্যাসাদকারী দলগুলো, শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত সকল কর্মকান্ড এবং এর জনবলগুলো, উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবহিক সুচকগুলো এমনকি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকবলগুলো, কথা বলা ও পথ চলার ধরণগুলো, সবই যেন ঐ এক ফ্রেমে বন্দি। ঐ ফ্রেম থেকে বের হওয়ার সুযোগ পেয়েও সেই সুযোগকে কাজে না লাগিয়ে চলমান ধারাবাহিকতার গতি প্রকৃতি বাড়িয়ে দিয়ে গন্তব্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এটাই কি কাম্য এবং জাতির প্রত্যাশা?
আমরা কবে শিখব এবং সভ্যতার সুউচ্চ শিখরে পদার্পণ করবো বলতে পারেন কি? আমাদের করনীয়তে ৫২, ৬৯, ৭১, ৯০ এবং সদ্য বিদায় নেয়া ২৪ কি কোন চেতনা দেয়নি, দিক্ষা ও শিক্ষা দেয়নি এমনকি আগামির গন্তব্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন ধারণা দেয়নি? কি ছিলনা ঐ উল্লেখিত সনের শিক্ষায়; আমরা কি কোন শিক্ষা নিয়েছি নাকি নিজস্ব মনগড়া ইচ্ছাকে সুযোগে বাস্তবায়ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছি? একটু ভেবে দেখবেন কি ঐ গণজোয়ার আমাদের একার প্রচেষ্টা নয় বরং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। তাই যেকোন কিছু করতে গেলে সকলের মনের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের সম্মিলন ঘটানো দরকার। নতুবা এই বিল্পবের সার্থকতা সফলতায় পর্যবসীত হবে না। সমাপ্তি ঘটবে না আগামীর বিপ্লবের।
এই চলমান ধারাবাহিকতা থেকে এই একটি বিষয় স্পষ্ট যে, আগামিতে আরো একটি ভয়ঙ্কর বিপ্লব আসন্ন। আর ঐ বিল্পব থেকে বাঁচার জন্য এমনকি দেশবাসীকে আর নিরীহ জনগণকে বাঁচানোর জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুবা বিপ্লবের বিষবাস্প আগ্নেয়গীরিতে পরিণত হবে। সেই আগ্নেয়গীরীর অগ্নুৎপাতে দেশ ও জাতি, বর্ণ, ধর্ম, উন্নয়ন এবং অগ্রগতি সবই ধ্বংস হবে। অবশিষ্টে নিস্প্রাণ নিভু নিভু প্রদীপ হাতে বিলাপের সুর-লয়-ছন্দে ছয়লাভ হবে আলো, বাতাস এবং পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। ভাবতেই কি ভয়ঙ্কর দৃশ্য! এর থেকে পরিত্রান চাই, মুক্তি চাই, শন্তি ও নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা চাই। কে দিবে এই শান্তি, কে দিবে এই মুক্তি, কে দিবে পরিত্রাণ, নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা? বলতে পারেন কি? জানেন কি? ভাবুনতো একবার এবং এর সন্ধানে নিয়োজিত হউন। বর্তমানে এবং অতিতে যারাই এই পরিত্রাণ, শান্তি, মুক্তি, নিশ্চয়তা আর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল তারা ব্যর্থ। কারণ তারেদই নিরাপত্তার দরকার ছিল। তারা নিজেরাই নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে; তাই তাদের দ্বারা আমাকে ও আপনাকে নিরাপত্তা দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বরং তাদের নিরাপত্তায়, নিশ্চয়তায়, পরিত্রাণে, শান্তি ও স্থিতিশীলতায় এমনকি মুক্তিতে আমাদের ভুমিকার প্রয়োজন। এই হল হালচাল কি করা দরকার এবং করণীয় কি তা ঠিক করতে মনোনিবেশ করুন।
বাংলার ভাগ্যাকাশে কালোমেঘ জমাট বেধেছে, বাংলাকে ছাড়খার করার লক্ষে সেই কালোমেঘ চারিপাশে বিস্তার লাভ করেছে এবং লোভ ও লাভের আশায় সেই কালোমেঘকে সম্প্রসারিত হতে সুযোগ করে দিয়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছেন। তাই আজ সময় এসেছে ঐক্যবদ্য হওয়ার, ভাইয়ে ভাইয়ে বিবেদ ভুলার, দল, মত ও ভিন্ন পথের উদ্ধে উঠে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। জাত বিজাত এবং ধর্ম ও বর্ণ বিবাদ ভুলার সময় এখন। কারণ সকলেই আমরা মানুষ, আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির সেরাজীব। সৃষ্টিকর্তার সিফতে সৃষ্টি মানুষ। প্রথমত মানুষ আর দ্বীতিয়ত বাংলাদেশী। এই দুইয়ের মিলনে আমরা ভাই ভাই এবং ঐক্যবদ্ধ বন্ধনের নি:স্বার্থ ও নি:শর্ত বন্ধনে আবদ্ধ। তাই আসুন আমরা আবার নি:শর্ত ও নি:স্বার্থভাবে ঐক্যবদ্ধ হই। এই সোনার বাংলার আকাশ থেকে কালেমেঘকে বিতারিত করি। কোন বিভেদে নয় বরং ঐক্যবদ্ধতায়ই আগামীর মুক্তি। এই পথেই হাটতে হবে, চলতে হবে এবং সকলকে নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। এটাই আমাদের ভবিতব্য।
আগের আল যেদিকে যায় সেদিকে শুধু হাল চাষের ক্ষেত্রেই ভাল আর বাকি সকল ক্ষেত্রে বাছবিচার করে অগ্রসর হওয়া ভাল। তবে ইতিবাচক ও মঙ্গলজনক কাজে আগের হাল যেদিকে যায় পিছনের হাল সেদিকে যাওয়াই ভাল। তবে বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজনে, কল্যাণের প্রয়োজনে আগের হাল যেদিকে যায় সেদিকে যাওয়া আমাদের সকলেরই উচিত। তবে সর্বশেষে বলি এই ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ও অভিপ্রায় আমাদের জানা উচিত এবং সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে পথ চলার উপায় জানা উচিত। আর সৃষ্টিকর্তার দেখানো ও শিখানো পথে অগ্রসর হওয়া অতিব প্রয়োজন। আমাদের পরিত্রাণ, মুক্তি, শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিশ্চয়তা আর নিরাপত্তা সম্পূর্ণই সৃষ্টিকর্তার হাতে। আর তিনিই আমাদের তা দিয়েছেন, এবং দিবেন এটা নিশ্চিত। তাই তাঁরই কাছে ফিরে যাওয়া এবং তাঁরই কাছ থেকে সকল কিছু নেয়ার মানুষিকতায় মনোনিবেশ করি। তাঁকে অনুসন্ধান করি এবং তাঁর সান্নিধ্য লাভের আশায় বাকি জীবন উৎসর্গ করি মানব কল্যাণে। এই কামনাই করি এবং সকলের জন্য বিনীত আরজি আর করজোরে মোনাজাত অব্যাহত রাখি। আমিন।