প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ ব্রিটিশ কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে পারেন। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এই ঘোষণা আসতে পারে বলে তাদের ধারণা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।

ব্রিটেনের সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা তাকে বসতি স্বীকৃতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আবার আরব নেতারা জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত ঠেকানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা বলেন, এই প্রেসিডেন্ট কোন পথে যাবেন তা অনুমান করা কঠিন, তবে আমরা উদ্বিগ্ন।
হোয়াইট হাউজ আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প অতীতের ব্যর্থ কাঠামোর মধ্যেই থাকতে রাজি নন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও আরও কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, শান্তি ও দুই রাষ্ট্র সমাধানের আশা জাগিয়ে তুলতেই এই স্বীকৃতি। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জাতিসংঘে বলেছেন, এখন সময় এসেছে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপকে নাটকীয় বলে সমালোচনা করেছে।
ইসরায়েল ইতোমধ্যেই নতুন বসতি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছে। এটি কার্যত পশ্চিম তীরকে দুই ভাগে ভাগ করবে। দেশটির কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেছেন, এই প্রকল্প ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণাকে চিরতরে সমাধিস্থ করবে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজ মন্ত্রিসভার চাপের মুখে আছেন পুরো পশ্চিম তীর বা এর অংশ বিশেষ দখল করার সিদ্ধান্ত নিতে। তবে তিনি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পরেই সিদ্ধান্ত নেবেন।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্রৃদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি ইউরোপীয় দেশগুলোর ফিলিস্তিন স্বীকৃতিকে ইসরায়েলের জন্য সবুজ সংকেত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার তাকে সতর্ক করে বলেছেন, যেন দুই রাষ্ট্র সমাধানকে দুর্বল না করা হয়।
টনি ব্লেয়ারের উদ্যোগে হোয়াইট হাউজে এক বৈঠকে গাজা যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে প্রস্তাব দেওয়া হয়, গাজা জাতিসংঘ-সমর্থিত আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হবে। তবে ট্রাম্প যদি পশ্চিম তীরে বসতির স্বীকৃতি দেন, আরব নেতারা এটিকে রেড লাইন অতিক্রম হিসেবে দেখবেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্যেষ্ঠ কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ সতর্ক করে বলেছেন, সংযুক্তিকরণ আমাদের জন্য রেড লাইন। শান্তির পথে এগোতে হলে দুই রাষ্ট্র সমাধানই একমাত্র পথ।
২০২০ সালে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের মধ্যে আব্রাহাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তবে তখন ইসরায়েল পশ্চিম তীরের অংশ সংযুক্ত করার পরিকল্পনা থেকে সরে দাড়িয়ে ছিল। এখন পরিস্থিতি আবার অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘ অধিবেশনের প্রান্তে ট্রাম্পের ভাষণ ও আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেই নির্ধারণ হবে, মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ ভূরাজনীতিতে নতুন কোনও মোড় আসে কি না।