লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান

প্রশান্তি ডেক্স॥ চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় লালদিয়ার কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস।

গত বুধবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।

দীর্ঘ আলোচনার পর এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার। জানা গেছে এপিএম টার্মিনালস একটি বৈশ্বিক বন্দর ও টার্মিনাল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, যা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ডেনিশ শিপিং কোম্পানি ম্যারস্ক গ্রুপের একটি অংশ।

আশিক চৌধুরী জানান, টার্মিনাল নির্মাণে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সাইনিং মানি হিসেবে দেওয়া হবে ২৫০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, “এপিএম টার্মিনালস আমাদের সঙ্গে লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল তৈরি কাজ নিচ্ছে। আমরা তাদের একটা খোলা ময়দান দিচ্ছি। সেখানে তারা টার্মিনাল নির্মাণ করবে, জেটি নির্মাণ করবে, তারপর তারা পুরোটা পরিচালনা করবে। এখানে মালিকানা পুরোটাই থাকছে বন্দরের হাতে। তারা আমাদের জায়গার ওপরে নিজেরা একটা টার্মিনাল করবে এবং ৩০ বছর পরে এটার একটা সময় বর্ধিত করার সুযোগ আছে, যদি ওনারা কেপিআই সঠিক ভাবে ব্যবস্থাপনা করে তাহলে সময় বাড়ানো হবে। না হলে পুরোটা আমাদের কাছে হস্তান্তর করে দেবে।”

তিনি বলেন, এই প্রকল্পে তাদের প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন ডলারের মতো খরচ হবে, যা ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা প্রায়। এই পুরো টাকাই তারা দেবে, বাংলাদেশ সরকারের কোনও খরচ হবে না। সুতরাং এই পুরো অর্থ আগামী তিন বছরে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ হিসেবে ঢুকবে।”

আশিক চৌধুরী বলেন, “আমরা আশা করছি লালদিয়া টার্মিনাল একটা বিশ্বমানের প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি হবে এবং আমাদেরকে বিশ্বমানের সেবা দিতে পারবে। চট্টগ্রামের নিউমুরিং টার্মিনাল থেকে এটায় কিছুটা পার্থক্য আছে। এখানে দ্বিগুণ সংখ্যায় জাহাজ ভিড়তে পারবে। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় লাইটার জাহাজে করে পণ্য টারমিনালে আনা আমরা এড়াতে পারবো। আরেকটা বড় পার্থক্য হচ্ছে এই টার্মিনাল আমরা সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চালাতে পারবো। এতে করে কনটেইনারের যে ব্যাকলগ তৈরি হয় সেটা আমরা আশা করছি এখানে কমে যাবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ইউরোপের কোনও দেশ থেকে প্রত্যক্ষ বড় বিনিয়োগ এই প্রথম , এরকম আগে কখনো আসেনি।”

তিনি বলেন, “শুধু ইউরোপ নয় এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশে তাদের বন্দর পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে এই প্রকল্প বাংলাদেশে বিশ্বমানের প্রযুক্তি, দক্ষতা ও কার্যকারিতা নিয়ে আসবে। লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল হবে দেশের প্রথম গ্রীন ও স্মার্ট পোর্ট, যা বর্তমান সক্ষমতার দ্বিগুণ আকারের জাহাজ ধারণ করতে পারবে এবং ২৪ ঘণ্টা নাইট ন্যাভিগেশন সুবিধাসহ পূর্ণমাত্রায় পরিচালিত হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরাসরি বৈশ্বিক শিপিং সংযোগ পাবে এবং রফতানিকারক ও আমদানিকারকদের জন্য পরিবহন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।”

বিডা চেয়ারম্যান জানান, এপিএম টার্মিনালের মতো একটি বিশ্বমানের বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসলে তা দেশের অন্যান্য খাতে অতিরিক্ত বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে। টার্মিনাল চালু হলে বন্দরটির কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ৮ লাখেরও বেশি টিইইউ প্রতি বছর বৃদ্ধি পাবে, যা বর্তমান সক্ষমতার তুলনায় প্রায় ৪৪ শতাংশ বেশি। টার্মিনালটি ২০৩০ সালের মধ্যে চালু হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি রাজস্ব ভাগাভাগি ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, যার মাধ্যমে সিপিএ প্রতি কনটেইনারে নির্দিষ্ট ডলার-নির্ভর রাজস্ব পাবে। একইসঙ্গে কর, শুল্ক এবং সামুদ্রিক আনুষঙ্গিক সেবার মাধ্যমে সরকারের আয়ও বাড়বে।

আশিক চৌধুরী জানান, এই প্রকল্পের নির্মাণ ও পরিচালনা পর্যায়ে ৫০০-৭০০ জন সরাসরি কর্মসংস্থান এবং ট্রাকিং, স্টোরেজ, লজিস্টিকস ও স্থানীয় এসএমই খাতে কয়েক হাজার পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এপিএম টার্মিনালস বিশ্বমানের হেলথ, সেফটি, সিকিউরিটি ও এনভায়রনমেন্ট নীতিমালা প্রয়োগ করবে, যা দুর্ঘটনার হার কমিয়ে কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.