বিচার এবং ব্যবস্থা

পৃথিবীর বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ এই পৃথিবীর সকল বিচারই হয় মানুষের আইন এবং ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ের দ্বারা। আর এই ইচ্ছা ও অভিপ্রায় পরিচালিত হয় ব্যক্তি এবং স্বার্থের উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্য। তাই ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কখনো ন্যায় পরায়নতা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা একসঙ্গে কাজ করে না। এই পৃথিবীতে যত বিচার সংঘটিত হয়েছে তার কোনটিই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং ন্যায়পরায়নতার আঙ্গিকে হয়নি। তারপরও সত্য বলেই চালিয়ে দেয়া হয়েছে অথবা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই বিচার ব্যবস্থা আজও চলমান রয়েছে।

ঈসা মসীহের বিচার ব্যবস্থায় দেখা গেছে কিভাবে মিথ্যাকে সত্য বলে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এই কাহিনী থেকেই এই পৃথিবীর বিচার ব্যবস্থার মিথ্যা প্রতিচ্ছবি প্রতিষ্ঠীত হয়েছে। আর সমস্ত বিচার ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছে। সাময়িকভাবে বিচার ব্যবস্থায় আস্থা ও উচ্ছাস প্রকাশ করা হলেও স্থায়ীভাবে কিন্তু একটি উম্মা বা দু:খ অথবা অনুশোচনা থেকেই যায়। আর এর থেকেই পরবর্তী প্রজন্ম বা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ইতিহাস রচনা করে। আর ঐ ইতিহাসটি হয় মিথ্যা আর সত্যের। কিন্তু সেই ইতিহাস নিয়ে কিছু মানুষ তাদের সময় নষ্ট করে আগামীর ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হয়। নতুন ইতিবাচক ইতিহাস লিখা থেকে বিচ্যুতি ঘটিয়ে নেতিবাচক ইতিহাসের দিকে বাক নিয়ে পৃথীবির রঙ্গমঞ্চ এগিয়ে যাচ্ছে।

সেই দিক দিয়ে পৃথিবীর সকল কিছুই আজ পৃথিবীর সকল মানুষই জানে। তবে আমি পৃথিবীর সকল কিছু অল্প সময়ে উল্লেখ করতে না পারলেও জন্মসূত্রে পাওয়া অধিকার এবং অর্জিত অভিজ্ঞতা থেকে আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত যা হয়েছে তার সবই বলতে পারি। আর এই পারাই কিন্তু আমাকে আজকের এই লিখা লিখতে সহায়তা করেছে। এমন লিখাই কিন্তু আমার জীবনকে ৪৫দিন কারাবাসের অভিজ্ঞতা অর্জনের সহায়তা করেছিল। তবে এই লিখার যাত্রা অব্যাহত থাকবে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় থেকেই মিথ্যার অথবা দ্বন্ধের সুত্রপাত হয়েছিল। আর ঐ মিথ্যা এবং সত্যের দ্বন্ধ আজও অব্যাহত। তবে এই দন্ধ কিন্তু বাংলাদেশ নয় বরং পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই শুরু হয়েছিল যা আজও চলমান রয়েছে এবং পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত চলমান থাকবে। তবে এই মিথ্যার অবসান ঘটবে সেইদিন যেদিন কিয়ামত ঘটবে এবং ন্যায়বিচারক তার বিচার কাজ সম্পন্ন করিবেন। সেই সময় পর্যন্ত আমাদেরকে অপেক্ষা এবং ধৈয্য ধারন করতে হবে। পৃথিবীর যন্ত্রণায় শান্তির পরশ বুলিয়ে যেতে হবে। সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে হবে। সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করে তাঁর ইচ্ছা ও অভিপ্রায় অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে।

আমি জিয়ার শাসন ও বিচার দেখেছি আর দেখেছি এরশাদ এবং খালেদার শাসন ও বিচার এমনকি প্রত্যক্ষ করেছি শেখ হাসিনার শাসন ও বিচার আর বর্তমানে দেখছি ড. মুহম্মদ ইউনূছের শাসন ও বিচার। তবে সবই দেখেছি এবং উপভোগ করেছি। কোন শাসন ও বিচারেই ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং মানবাধিকারের মুল্যবোধ একসঙ্গে কাজ করেনি। শুধু ক্ষমতাসীনদের অথবা ক্ষমতাধরদের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় প্রকাশ পেয়েছে আর ক্ষমতার সমর্থকদের উত্তাল উন্মত্ততা ও উচ্ছাস প্রকাশ পেয়েছে। তবে সবই কিন্তু জনগণের কাঁধে দায় চাপিয়েই করা হয়েছে। জনগণকে মুখে উচ্চারণ করেই সকল অন্যায় ও অপকর্ম পরিচালিত হয়েছে। তবে এই সময়ে এসে বলতে হয় যে, সকল কিছুর মাঝেও কিছু ভাল কাজ হয়েছে যা জনগণ ভোগ করে আজ পর্যন্ত এগিয়ে আসতে পেরেছে এবং আগামী দিনেও ঐ সুযোগগুলো উপভোগ করেই এগিয়ে যাবে।

তবে বিচারকদেরও একজন বিচারক আছে জেনে বিচারকরা বিচার করা উচিত আর এই কথাটি স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা সতর্কতার জন্য জানিয়েছেন। কিন্তু আজও বিচারকরা এই কথাটি স্বরণে না নিয়েই বিচার করেন বলে প্রতিয়মান হয়েছে। তবে পৃথিবীতে বিচার কাজ পরিচালিত হয় ফোন, ক্ষমতা, অর্থ আর মিথ্যা তথ্যের উপর দাঁড়িয়ে। আর এর বাইরেও যে কিছু হয় না তা কিন্তু নয় বরং তা খুবই নগন্য বা অল্প। হিসেব কষে নয় বরং দৃশ্যমান বাস্তবতার নিরীখেই এই বলা। আমার একটি মামলার প্রত্যক্ষদর্শী আমি ছিলাম; আর ঐ মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যার এবং ক্ষমতার ও অর্থ ও বিত্তের যৌলুষের আলোকে পরিচালিত হয়েছিল। বিচারক তার বিচার কাজের কোন নীতি বা আদর্শ এমনকি বাস্তবতার কিছুই তোয়াক্কা না করে শিখানো বুলি আওড়িয়েছেন। এমনি হাজারো বা লক্ষ্য দৃষ্টান্ত আজ দৃষ্টিসিমায় দৃশ্যমান। তাই এই বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা বা বিশ্বাস কোনটিই ছিলনা এমনকি নেই। তবে পৃথিবীর নিয়মানুযায়ী এই বিচারালয়কে শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে হয় তাই করি কিন্তু তা মন থেকে আজও আসেনি। কারণ মন থেকে আসার মত কোন কাজ আজও পরিলক্ষিত হয়নি। যেখানে ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য অর্থ ব্যায় হয় সেখানে কিভাবে ন্যায় বিচার আশা করা যায়। বিচারালয় আজ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে উপনিত হয়েছে। তাই এই ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে ন্যায্যতা এবং সততা বর্তমানে অন্তত আশা করা যায় না।

এই ক্ষেত্রে শুধুই বলব যিনি একমাত্র বিচারক এবং এই বিচার কাজ তাঁরই হাতে রেখেছেন সেই তিনিই ন্যায্যতা এবং সততায় পূর্ণ হয়ে ন্যায় বিচার করবেন। যা, স্বচ্চতায় ভরপূও, সেই বিচারে শতভাগ আস্থা ও বিশ্বাস এবং ভরসা ও নির্ভরতা রয়েছে। আর সেই বিচার পাওয়ার আশায় অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি। দুনিয়ার বিচার দেখে হাসি ও কান্না এই উভয়ই আমাকে তাড়িত করে আর আখেরাতের পূর্ণ বিচারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই বিষয়ে একটি উদাহরণ দিয়ে শেষ করছি। “একদিন এক বেশ্যাকে ধরে হযরত ঈসা মসীহের কাছে নিয়ে গিয়ে তার বিচার প্রার্থনা করা হয়েছিল। সেইদিন বিচারের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছিল। সেই দৃষ্টান্তটি এইভাবে ঘটেছিল যে, ঈসা বিচার কাজ শুরু করার পূর্বে সবাইকে ডেকে জড়ো করে জিজ্ঞাসা করলো যে, আসামীকে কাঠঘড়াই দাঁড় করাতে। সেই সময় বিচারের ব্যবস্থা ছিল গর্তে ঢুকিয়ে  অথবা বেধে উন্মুক্ত স্থানে পাথর মারা। যতক্ষণ দেহ থেকে প্রাণ বিসর্জন না হয় ততক্ষণ পাথর মারা। সেই মোতাবেক ঈসা বললেন “তোমাদের মধ্যে যে নির্দোষ সেই-ই প্রথম পাথর মারুক। এইভাবে পর্যায়ক্রমে পাথর মারা শুরু হউক। তখন কেউ নিজেকে নির্দোষ মনে করে আর পাথর মারতে পারেনি বরং একে একে সবাই চলে গেল। তখন ঈসা বললেন মা কেউ যখন তোমাকে নির্দোষ হয়ে পাথর মারতে পারেনি এবং বিচারও করেনি তাই আমিও তোমার বিচার করলাম না। তুমি নির্ভয়ে যাও” ।

সুতরাং দুনিয়ায় বিচার করার কেউ নেই। কারণ কেউই নির্দোষ নয়। বরং একজন দোষি হয়ে আরেকজন দোষির বিচার কিভাবে করে? বরং একমাত্র নির্দোষ যিনি তিনিই একমাত্র বিচারের মালিক এবং বিচার একমাত্র তিনিই করবেন। আর সেই তিনি হলেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা মাবুদ আল্লাহ\ আসুন আমরা আল্লার উপর ভরসা করি এবং তাঁর ন্যায় বিচার দেখার আশা ও প্রত্যাশা করে তাঁরই সঙ্গে দিন কাটাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.