কসবায় কোল্লাপাথর সমাধিস্থলে ঘুমিয়ে আছে ৫০জন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তার ক্ষত রয়ে গেছে বাংলাদেশ জুড়েই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কোল্লা পাথর শহীদ সমাধিস্থল সেগুলোরই একটি।

কোল্লাপাথর গ্রামের একটি পাহাড়ের উপর এই সমাধিস্থলে ঘুমিয়ে আছেন স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী ৫০ বীর মুক্তিযোদ্ধা।

সমাদির নাম ফলক থেকে জানা গেছে, এখানে ঘুমিয়ে থাকা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দুজন বীর উত্তম, দুজন বীর প্রতীক এবং একজন বীর বিক্রম খেতাব পাওয়া। এখানে আরো তিনজন রয়েছেন, যাদের পরিচয় আজও পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধার সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে প্রাণ হারানোর পর অন্য সঙ্গীরা তাদের এখানে সমাহিত করেন। ওই জমিটি পানীয় বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিমের বাবার। পরে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সেখানে অবকাঠামো  নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালে করোনায় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিমই এটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন । এখন তার ছেলে মাহাবুব করিম এটির দেখভাল করেন। এখানে ঘুমিয়ে থাকা যোদ্ধাদের অধিকাংশই ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নন কমিশনার অফিসার বা সিপাহী। একাত্তরে বাঙালি জাতির মুক্তির ডাকে সাড়া দিয়ে তারা অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

ইতিহাস বলে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় কোল্লাপাথরছিল মুক্তাঞ্চল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কখনোই এ অঞ্চলে ঢুকতে পারেনি। মুক্তিযোদ্ধারা এই এলাকাকে নিরাপদ ব্যবহার করতেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফরিদপুর আর ঢাকার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ২ নম্বর সেক্টরে অংশ ছিল কোল্লাপাথর। দুই নম্বর সেক্টরকে ছয়টি সাব-সেক্টরে ভাগ করা হয়। যার মধ্যে তিনটি সাব-সেক্টর ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকা। কোল্লারপাথরে সমাহিত

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় সবাই দুই নম্বর সেক্টরে তিনটি সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করে শহীদ হন। হাবিলদার তৈয়ব আলী হচ্ছেন প্রথম শহীদ, যাকে সর্বপ্রথম এখানে সমাহিত করা হয়।

এখানে ঘুমিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন ু ঠাকুরগাঁয়ের সৈনিক দর্শন আলী, আর কে মিশন রোড ঢাকার মো. জাকির হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মো. আব্দুল জব্বার, সিলেটের হাবিলদার তৈয়ব আলী, বগুড়া ল্যান্স নায়েক আব্দুল সাত্তার (বীর বিক্রম),কুমিল্লা সিপাহি আক্কাছ আলী,ব্রাহ্মণবাড়িয়া  মো.ফখরুল আলম, মো, ফারুক আহমেদ, মুজাহিদ নুর মিয়া, ময়মনসিংহের নায়েক মোজাম্মেল হক,

নোয়াখালীর নায়েক সুবেদার মোঃ আব্দুল সালাম (বীরবিক্রম), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোঃ নোয়াব আলী, ফরিদপুরের সিপাহি মুসলিম মৃধা, শরীয়তপুরের প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোঃ আব্দুল অদুদ, কুমিল্লার সিপাহী জসীমউদ্দীন, কুমিল্লার মোঃ আব্দুল কাশেম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী), কুমিল্লার মোঃ মোশারফ হোসেন,কুমিল্লার নায়েক সুবেদার মইনুল হোসেন (বীরউত্তম), চাঁদপুরের সিপাহী মোঃ নুরুল হক , ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, কুমিল্লার সিপাহী হুমায়ুন কবির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ল্যান্স নায়েক মোঃ আব্দুল খালেক,

কুমিল্লার ল্যান্স নায়েক আজিজুর রহমান, কুমিল্লার মোঃ তারু মিয়া,চট্টগ্রামের নায়েক সুবেদার বেলায়েত (হোসেন বীরউত্তম), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোঃ রফিকুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোঃ মোরশেদ মিয়া, কিশোরগঞ্জের আশু রঞ্জন দে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মোঃ তাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মোঃ শওকত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মোঃ আব্দুল সালাম সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মোঃ আমির হোসেন, চাঁদপুরের মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরেশ চন্দ্র মল্লিক, কুমিল্লা মোঃ জামাল উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মোঃ আব্দুল আউয়াল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোঃ জাবেদ  আহাম্মদ, কুমিল্লার মোঃ সিরাজুল ইসলাম, কুমিল্লার মোঃ ফরিদ মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মোঃ মতিউর রহমান, কুমিল্লার মোঃ শাকিল মিয়া, চাঁদপুরের এলাহী বক্স পাটোয়ারী (বীরপ্রতীক), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোঃ আব্দুর রশিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিপাহি শহিদুল   হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিপাহি আনোয়ার হোসেন, কুমিল্লার সিপাহি মোঃ আব্দুল বারী খন্দকার স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অবকাঠাম নির্মাণের পর আশপাশের এলাকার  অনেকে থেকে  অনেকেই এই  সমাধিস্থলে দেখতে আসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.