প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ কেনেডির নামযুক্ত প্রতিষ্ঠানে নিজের নাম জুড়ে দেওয়া নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জন এফ কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টসে ট্রাম্পের নাম যুক্ত করা নিয়ে মামলা ঠুকে দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট পার্টির আইনপ্রণেতা জয়েস বিটি।

মার্কিন আইনের অধীনে কেনেডি সেন্টারের বোর্ডের সদস্য হিসেবে মনোনীত কয়েকজন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতার একজন বিটি। তিনি মামলায় দাবি করেছেন, নাম পরিবর্তনের উদ্যোগটি অবৈধ। কারণ কেন্দ্রের নাম পরিবর্তনের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন।
মামলায় বলা হয়েছে, নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত বোর্ড সভায় বিটি ফোনে যুক্ত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আপত্তি জানাতে গেলে তাকে ‘মিউট’ করে দেওয়া হয়।
গত সপ্তাহে কেনেডি সেন্টারের পরিচালনা পর্ষদ ভোটের মাধ্যমে এই পারফর্মিং আর্টস কেন্দ্রটির নাম পরিবর্তন করে “ট্রাম্প-কেনেডি সেন্টার” করার সিদ্ধান্ত নেয়। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটিতে ট্রাম্পের বহু মিত্র বসে আছেন।
কেনেডি সেন্টারের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বর্তমানে বোর্ড অব ট্রাস্টিজে ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত ৩৪ জন সদস্য এবং আইনের মাধ্যমে মনোনীত আরও ২৩ জন সদস্য রয়েছেন।
দায়িত্ব নেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই ট্রাম্প কেনেডি সেন্টারের একাধিক বোর্ড সদস্যকে বরখাস্ত করে নিজের মিত্রদের নিয়োগ দেন। এরপর বোর্ড তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে এবং তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা রিচার্ড গ্রেনেল বোর্ডের সভাপতি হন।
১৯৫০-এর দশকে ওই পারফর্মিং আর্টস সেন্টার নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট কেনেডি হত্যাকান্ডের পর কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেয়, কেন্দ্রটির নাম তার নামানুসারেই রাখা হবে।
বিটির মামলায় বলা হয়, বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং তার হাতে বাছাই করা অনুগতরা এই ঐতিহাসিক কেন্দ্রটির নাম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নামে পুনর্নামকরণ করেছেন। (অথচ) কংগ্রেস এই কেন্দ্রটিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির জন্য একটি “জীবন্ত স্মারক” হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল। এটি মার্কিন প্রজাতন্ত্রের চেয়ে বরং স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দৃশ্যের মতো।
অবশ্য হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে জানায়, কেনেডি সেন্টারকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করা, ভবন আধুনিকীকরণ এবং বিভাজনমূলক ‘ওয়োক’ কর্মসূচির অবসান ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে বরং রক্ষা করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প কংগ্রেস থেকে প্রায় ২৫৭ মিলিয়ন ডলার অর্থায়ন নিশ্চিত করেন, যা কেন্দ্রটির বড় ধরনের সংস্কার ও অন্যান্য ব্যয় মেটাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি “খুবই খারাপ অবস্থায়” ছিল।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র লিজ হাস্টন বলেন, এসব কারণেই কেনেডি সেন্টারের বোর্ড সর্বসম্মতভাবে এর নাম ট্রাম্প-কেনেডি সেন্টার রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রতীকী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সাফল্য, মর্যাদা ও পুনরুদ্ধারকৃত গৌরবের নতুন যুগের সূচনা।
শুক্রবার ভবনের বাইরের অংশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম যুক্ত করা হয় এবং কেন্দ্রটির ওয়েবসাইটের লোগোতে এখন লেখা রয়েছে “দ্য ট্রাম্প কেনেডি সেন্টার।” এই নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত দেশের বিভিন্ন মহলে, বিশেষত ওয়াশিংটন ডিসিতে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সঙ্গীতশিল্পী চাক রেড এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কেনেডি সেন্টারে তার পূর্বনির্ধারিত বড়দিনের আগের রাতের জ্যাজ কনসার্ট বাতিল করেছেন, যে অনুষ্ঠানটি প্রায় দুই দশক ধরে একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল।
গত বুধবার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে রেড বলেন, ওয়েবসাইটে নাম পরিবর্তন দেখার পর এবং কয়েক ঘণ্টা পর ভবনেও সেই নাম দেখে আমি কনসার্ট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিই।
২০০৬ সাল থেকে কেনেডি সেন্টারে বার্ষিক ‘ক্রিসমাস ইভ জ্যাজ জ্যামস’ আয়োজন করে আসছিলেন রেড, যিনি বেজবাদক উইলিয়াম ‘কেটার’ বেটসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। কেনেডি সেন্টারের ওয়েবসাইটে এখন ওই অনুষ্ঠানটিকে বাতিল হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
নাম পরিবর্তনের সমালোচনায় কেনেডি পরিবারের একাধিক সদস্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন। সাবেক কংগ্রেস সদস্য ও প্রেসিডেন্ট কেনেডির প্রপৌত্র জো কেনেডি থার্ড বলেন, কেনেডি সেন্টার নিহত একজন প্রেসিডেন্টের জন্য একটি জীবন্ত স্মারক এবং ফেডারেল আইনে প্রেসিডেন্ট কেনেডির নামেই এটি নামকরণ করা হয়েছে। এটির নাম পরিবর্তন করা অসম্ভব, লোকজন যা-ই বলুক না কেন। সূত্র: বিবিসি