তাজুল ইসলাম নয়ন॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার কাছে দাবি করার প্রয়োজন নেই। উন্নয়ন কীভাবে করতে হয় তা তিনি জানেন। গত বৃহস্পতিবার বিকালে রাজশাহীর পবা উপজেলায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। উপজেলার হরিয়ানে চিনিকল মাঠে এই জনসভার আয়োজন করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সারাদেশের উন্নয়নের জন্য ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সার্বিক উন্নয়নে কারও দাবি করার প্রয়োজন নাই। আমি জাতির পিতার মেয়ে, আমি জানি দেশের উন্নয়ন কিভাবে করতে হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাইয়ের জন্ম হয়। মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যায়। এমনকি জনগণের টাকা, এতিমখানার টাকাও তারা চুরি করে খায়।’
তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে একটি মোবাইলের দাম ছিল এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। তখন মোবাইলে কথা বলতে প্রতি মিনিটে খরচ হতো ১০ টাকা। আওয়ামী লীগ সরকার মোবাইলের দাম হাজার-বারশো টাকায় নামিয়ে এনেছে। এখন মানুষ সস্তায় কথা বলতে পারছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তার লক্ষ্য-দেশে শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। উত্তরবঙ্গে এখন আর কোনো মঙ্গা নেই। ভবিষ্যতে কোনো দিন আসবেও না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যার কারণে কিছু কিছু জায়গায় ফসল নষ্ট হয়েছে। তাই আমরা খাদ্য কেনা শুরু করেছি। নদী ভাঙ্গণে যাদের ঘর-বাড়ি নষ্ট হয়েছে তাদের ঘর তৈরি করে দেব। এজন্য তালিকা প্রণয়ন করেছি। খুব তাড়াতাড়ি এর কাজ শুরু করবো।
রাজশাহীর উন্নয়নে সরকার সবই করবে এমনটা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমি এখানে খালি হাতে আসিনি। আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। আজকে আমি অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। রাজশাহীর উন্নয়নে যা যা করা দরকার তার সবই করবে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশে ১১০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছে। রাজশাহীতেও এই বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন হবে। ইতোমধ্যে সরকার এখানে আইটি পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। সেখানে কম্পিউটার, ল্যাপটসহ নানা ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন হবে। এ অঞ্চলের কৃষি নিয়ে আরও বেশি গবেষণা করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তার সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ২০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করছে। বিনা পয়সায় দেয়া হচ্ছে বই। দেশের এক কোটি ৭৩ লাখ শিক্ষার্থী এখন সরকারের বৃত্তি পাচ্ছে। এক কোটি ৩০ লাখ মায়ের মোবাইলে চলে যাচ্ছে বৃত্তির টাকা।
৩০ মিনিটের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরেন। ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই মেয়াদে রাজশাহীর কি কি উন্নয়ন হয়েছে, তাও তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আগামীতেও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানান। বলেন, দেশের উন্নয়ন চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদেরই ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ আপনাদের সংগঠন। জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে আপনাদেরকে দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের উন্নয়ন হয়। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই, মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যায়। কেউ যেন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য অভিভাবক, শিক্ষক ও মসজিদের ইমামদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
জনসভায় আরও বক্তব্য দেন- স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি ও এমপি আয়েন উদ্দিন।
পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীর সভাপতিত্বে জনসভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএম মোজাম্মেল হক, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন আসনের এমপি এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জনসভায় বক্তব্য দেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীর ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ছয়টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এর আগে সকালে তিনি জেলার চারঘাট উপজেলার সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পরে বিকালে জনসভায় বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভা উপলক্ষে দুপুরের আগেই নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় চিনিকলের মাঠ। তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুপুর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করেন দূর-দূরান্ত থেকে যাওয়া নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে উপস্থিত হওয়া সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের আন্তরিকতা এবং আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন আমরা কখনো ভুলবো না। ঢাকা টাইমসের সৌজন্যে।