রিপন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে॥ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল এখানে আমেরিকার শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এখানে গ্রান্ড হায়াত হোটেলে বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ) আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
ইউটিসি অ্যাসোসিয়েটস’র সিইও আজিজ আহমেদ, ওয়ালমার্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট পল ডাইক, ওআরবিআইএস’র প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা (সিডিও), গভর্নমেন্ট রিলেশনস এন্ড কমিউনিকেশনস অফিসার টেমার ইউনিস, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট-এর ভারপ্রাপ্ত বিশেষ প্রতিনিধি অ্যালিস জি ওয়েলস, স্কাইপাওয়ারের সিনিয়র পরিচালক মারিয়া বোরোবিয়েভা, পাওয়ারপ্যাকের রন সিকদার, এফইডিএকস-এর ডেভিড শর্ট, স্কট প্রাইস অব ওয়ালমার্ট ইন্টারন্যাশনালের জে প্রেয়র, কোকা কোলা পরিচালক মিসি ওয়েনস, শেভরন ম্যানেজার জে জে অঙ, কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স’র চৌধুরী নাফেজ শরাফত, ডেনহাম ক্যাপিটালের সৌরভ আনন্দ, ম্যালারটি অ্যাসোসিয়েটস’র রবার্ট ও ব্লেক (জে আর), ইল্লিকট ড্রিডগেজ’র পিটার বোওয়ি, মটোরোলা সলিউশনের রিচার্ড ব্রেচার, এপিআর এনার্জির জন চ্যাম্পিয়ন, উবার টেকনোলজির আশহাউনি চানপরা অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
শীর্ষ ব্যবসায়ীদের এ সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিন্ন স্বার্থ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দল ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত দুই দেশের সম্পর্ক বিকশিত হয়ে চলেছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সর্বোত্তম সম্পর্ক উপভোগ করছে।
তিনি বলেন, ‘সরকার ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করছে এবং এ বিষয় আপনাদের কাছে তুলে ধরতে চাই।’ এনুয়াল পার্টনারশিপ ডায়ালগ, টিকফা (ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষর এবং এসব ফোরামে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। নিরাপত্তা, সামরিক ও কাউন্টার টেররিজম নিয়ে আলোচনা দুই দেশের সম্পর্কের উচ্চতা নির্দেশ করে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন আমাদের ঘনিষ্ট অংশীদার।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য গত বছর মোট ৭ বিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে, এতে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক প্রতিফলিত হয়। তবে এই সম্পর্ক সম্প্রসারণের পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে কিছু ক্ষেত্রে হোচট খাওয়ায় এই সম্ভাবনা প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশী পোশাকের ওপর অত্যন্ত উচ্চ শুল্ক আরোপ। তিনি বলেন, এলডিসিভুক্ত বেশিরভাগ দেশ বিভিন্ন অগ্রাধিকার স্কিমের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে। উচ্চ শুল্কের কারণে শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্ত এলডিসি দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে।
এমনকি কিছু উন্নয়নশীল দেশ এজিওএ’র অধীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে। এই ক্ষেত্রে সকল প্রতিযোগীদের সমতার সুযোগ দিতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, দোহা রাউন্ডের অঙ্গীকর অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সকল উন্নত দেশ এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশ এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিয়েছে। তিনি বলেন, দারিদ্র্য নিরসন পুষ্টি, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অর্জন প্রশংসিত হচ্ছে। ২০০৯ সালে আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে। গত দুই বছরে এই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাথাপিছু আয় ৮০ শতাংশ বেড়ে ১৬০০ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৭ শতাংশে ধরে রেখেছে, রফতানি আয় দ্বিগুণ বেড়ে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ দাঁড়িয়েছে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (যা ৮ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমতুল্য), খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।