টিআইএন॥ বাংলাদেশ ও বাঙ্গালি এই দুটো শব্দ যখন উচ্চারিত হয় তখন সামনে যে পবিত্র নামটি চলে আসে সেই পবিত্র নামটি হলো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। বাঙ্গালি ও বাংলাদেশকে কখনও বঙ্গবন্ধু থেকে পৃথক করা যায়না। এমনকি বঙ্গবন্ধু ব্যতিত বাঙ্গালি ও বাংলাদেশকে কল্পনা ও করা যায়না। বাঙ্গালিদের মুক্তির জন্য এই মহামানব পাকিস্তান শাসকচক্রের হাতে জেল, জুলুম, ভয়াবহ অত্যাচার ও নিপীড়ন সহ্য করে গেছেন। তবুও তিনি তার শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও বাংলাকে মুক্তির স্বাদ দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু যেমন বাংলাদেশের জাতির পিতা ঠিক তেমনি তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি। মূলত তিনি বাঙ্গালি ও বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন এবং চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন। কেনোনা কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। আর বঙ্গবন্ধুর মতো কীর্তিমান ব্যক্তি বাঙ্গালিদের মধ্যে আর কেউ নেই, ছিলেনও না এবং কখনও আসবেন ওনা। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভারতের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছেন “শেখ মুজিব বাঙ্গালিদের একজন মহান নেতা। তার অনন্যসাধারন সাহসীকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগনের জন্য ছিল অত্যন্ত প্রেরনাদায়ক”। এখানে স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্তও বাঙ্গালিদের থেকে শেখ মুজিবকে পৃথক করেননি। অর্থাৎ মুজিব মানে বাংলাদেশ, মুজিব মানে বাঙ্গালি। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ বলেছেন “শেখ মুজিব দৈহিকভাবেই মহাকায় ছিলেন, সাধারণ বাঙালির থেকে অনেক উচুঁতে ছিলো তার মাথাটি, সহজেই চোঁখে পড়তো তার উচ্চতা। একাত্তরে বাংলাদেশ ও বাঙ্গালিকে তিনিই
আলোড়িত-বিস্ফোরিত করে চলেছিলেন, আর তার পাশে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে যাচ্ছিল তার সমকালীন এবং প্রাক্তন সকল বঙ্গীয় রাজনীতিবিদ। জনগণকে ভুল পথেও নিয়ে যাওয়া যায়; হিটলার মুসোলিনির মতো একনায়কেরাও জনগণকে দাবানলে, প্লাবনে, অগ্নিগিরিতে পরিণত করেছিলো, যার পরিণতি হয়েছিলো ভয়াবহ। তারা জনগণকে উন্মাদ আর মগজহীন প্রাণীতে পরিণত করেছিলো। একাত্তরের মার্চে শেখ মুজিব সৃষ্টি করেছিলো শুভ দাবানল, শুভ প্লাবন, শুভ আগ্নেয়গিরি, নতুনভাবে সৃষ্টি করেছিলেন বাঙালিকে, যার ফলে আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম।”
মূলত ববঙ্গবন্ধু শুধু বাঙ্গালি ও বাংলার নেতা নন বরং তিনি বিশ্বনেতা। ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু যে ঐতিহাসিক ভাষন দিয়েছেন তা শুধু বাঙ্গালি ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নয় বরং পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে তার সেই ভাষনটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি ভাষন। হঠাৎ করে বাঙ্গালিদের মুক্তির সনদ হিসেবে এরকম ভাষন দেওয়া কোনো সাধারন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। মূলত এই মহামানব হলেন বাংলাদেশ ও বাঙালিদদের গর্ব এবং অবিসংবাদী বিশ্বনেতা। প্রত্যেক বাঙ্গালি ও বাংলাদেশীদের হৃদয়ে তিনি মহামানবের আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন। বাঙ্গালি ও বাংলাদেশিগন হয়তোবা মাঝে মাঝে নিজদেরকে ভুলে যান কিন্তু তাদের পিতাকে কখনও ভুলেন না। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এখন পর্যন্ত যতো ছড়া, কবিতা, গান, প্রবন্ধ ও রচনা লেখা হয়েছে তা পৃথিবীর অন্য কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে লেখা হয়নি। এ হিসেবে বলা যায় বঙ্গবন্ধু ব্যতীত বাংলাদেশ ও বাঙ্গালিদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ কখনও কল্পনা করা যায়না। বাঙ্গালি ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক গগনে শীর্ষে অবস্থান করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙ্গালি ও বাংলাদেশের এমন কোনো সাহিত্যিক নেই যিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দু-চার কলম লিখেননি। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের ও অনেক নবীন লেখক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখছেন। বঙ্গবন্ধু যেমন বাংলাদেশে অমর হয়ে আছেন ঠিক তেমনি অমর হয়ে আছেন পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র বাঙ্গালিদের মাঝে। মূলত বাংলাদেশ ও বাঙ্গালি হলো একটি মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ, আর বঙ্গবন্ধু হলেন তার স্রষ্টা। বাংলাদেশে যেমন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজন করা হয় ঠিক তেমনি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সাহিত্য চর্চা, সাংস্কৃতিক চর্চা এবং বিভিন্ন ধরনের আচার-অনুষ্ঠান ও শোকসভার আয়োজন করা হয়। এই গেলো ১৫ই আগস্ট কলকাতায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শোকসভার আয়োজন করা হয়। উক্ত শোকসভায় পশ্চিমববঙ্গ ও ভারতের অনেক রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। কেননা তারাও বঙ্গবন্ধুকে কখনও ভিন্ন চোঁখে দেখেননা। তাদের নিকটও বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি। তারা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। মূলত হাজার বছর কথাটি ব্যাবহারিত হয় অনির্দিষ্টকাল বা চিরকাল অর্থে।
কবি বলেছেন,
“যতকাল রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌর, যমুনা বহমান,
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।”
কিন্তু আমি কবির এই চরন দুটি মানিনা। কারন এক সময় হয়তোবা পদ্মা, মেঘনা, গৌরী, যমুনা এসব নদীগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে, পলিমাটি পরে ভরে যাবে, কালের অতল গর্ভে হারিয়ে যাবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কীর্তি কখনও হারিয়ে যাবার নয়, ধ্বংস হবার নয়। তাই আমি বলতে চাইঃ-
“যতকাল রবে এই পৃথিবী বহমান,
ততকাল রবে বাঙ্গালিদের মাঝে-
কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।”
মূলত বঙ্গবন্ধু, বাঙ্গালি ও বাংলাদেশ এক সুতোয় গাঁথা, ভিন্ন সুতোয় বা ভিন্ন বন্ধনে নয়। তাই আমি সুধাতে চাই
“তোমাকে আজ স্মরন করে আঠারো হাজার মাখলুকাত,
তোমার কথা না স্মরিলে যেনো হয়না প্রভাত।
তুমি যে বাংলার জনক, বাংলা যে তোমায় করিবেনা নাশ,
বাংলায় যে করিবে তুমি দীর্ঘস্বাশ।।”
মূলত আমি যদি বলি বঙ্গবন্ধু, বঙ্গালি, বাংলাদেশ ও বিশ্ব একই সুতোয় গাঁথা, তাহলে তাও ভুল হবেনা। কেননা বঙ্গবন্ধু যেমন বাংলাদেশ ও বাঙ্গালিদের নেতা ঠিক তেমনি তিনি বিশ্ব নেতা ও বটে। ফিদেল কাস্ট্রো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেছেন—
“শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে, আর বাঙ্গালি হারালো তদের পিতাকে।”
এখানে ফিদেল কাস্ট্রো পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে বাঙ্গালি থেকে পৃথক করেননি। কিভাবে পৃথক করবেন? বাঙ্গালি, বাংলাদেশ মানেইতো বঙ্গবন্ধু।
কবি নির্মলেন্দু গুন তার একটি কবিতায় লিখেছেন
“মুজিব মানে মুক্তি,
পিতার সাথে সন্তানের অলেখা প্রেম চুক্তি।
মুজিব মানে আর কিছুনা, মুজিব মানে রক্ত,
মুজিব বাংলার শক্তিসাহস, মুজিব বাংলার ভক্ত।”
আর আমি আমার এই মহান পিতা সম্পর্কে বলতে চাই,
“মুজিব মানে শুরু, মুজিব মানে ভালবাসা অশেষ,
মুজিব মানে বাঙ্গালি, মজিব মানে বাংলাদেশ।।”
সুতরাং বলাই যেতে পারে যে বঙ্গবন্ধু, বাঙ্গালি ও বাংলাদেশ একই সুতোয় গাঁথা। ইতিহাসবিদগন বলছেন, “একথা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই যে, বাঙালি জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত বিজয় সাধিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দ্বারাই। অর্থাৎ, একদিকে পাকিস্তানের শাসকচক্রের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও ধর্মীয় মৌলবাদীদের রাজনীতি অন্যদিকে দর্শনের অনুসারীদের মোকাবিলায় সুদীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে সংগ্রাম করে একাত্তরে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা লাভের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত বিজয় সাধন করে বঙ্গবন্ধু প্রমাণ করেছেন পাকিস্তানি শাসকচক্রের বিরুদ্ধে তার গৃহীত সিদ্ধান্ত পুরোপুরি সঠিক ছিল। কোনো কোনো ইতিহাসবিদ মনে করেন প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৭-৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অত্র ভূ-খন্ডের রাজনৈতিক ইতিহাসকে কিছুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী থেকে কোনোভাবেই পৃথক করা সম্ভব নয়। তারা মনে করেন, ১৯৪৭-৪৮ থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, সবই একই সুতোয় গাঁথা। অর্থাৎ পরিরিশেষে বলতে পারি বঙ্গবন্ধু,বাঙ্গালি ও বাংলাদেশ এক সুতোয় গাঁথা।।
লেখক: শেখ ইয়াহইয়া