বাআ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রমাণ হয়েছে, বাংলাদেশও পারে। পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্যে দিয়ে বহু প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান হয়ে ওঠার খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। এছাড়া, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে যে সাড়া পড়েছে, তার সমর্থনে প্রবাসীদেরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে ম্যাকলিন সিটিতে টাইসন বুলেভার্ডে অবস্থিত রিটজ কার্লটন হোটেলের সুইটে স্থানীয় সময় রবিবার আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সাক্ষাৎ দেন শেখ হাসিনা। তখন নেতাদের সঙ্গে এক মত বিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
ওয়াশিংটন থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রেস সচিব বলেন, গলব্লাডার অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা প্রধানমন্ত্রীকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট থেকে আসা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
ইহসানুল করিম জানান, পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান হয়ে ওঠায় প্রধানমন্ত্রী নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রমাণ হয়েছে, আমরাও পারি’।
২০১৫ সালের ডিসেম্বর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পদ্মা সেতুর মূল কাজ শুরুর পর শনিবার সকালে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে প্রথম স্প্যানটি বসানো হয়। সেতুর ৪২টি পিলারের ওপর মোট ৪১টি স্প্যান বসানো হলেই শেষ হবে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ জনপদের সরাসরি সড়ক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু।
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের কথা থাকলেও সংস্থাটি দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুললে তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সরকার বিশ্ব ব্যাংককে বাদ দিয়েই কাজটি শুরু করে। এই প্রকল্পে কানাডীয় একটি কোম্পানিকে পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে সেদেশে একটি মামলা হয়েছিল, যা রায়ে নাকচ হয়ে যায়। একই অভিযোগে বাংলাদেশে দুদক মামলা করলেও তদন্ত শেষে অভিযোগের কোনো প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানানো হয়।
প্রেস সচিব বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে যে সাড়া পড়েছে, তার সমর্থনে প্রবাসীদেরও সোচ্চার হওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সকলের কাছে দোয়া চান রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ যে চালেঞ্জ গ্রহণ করেছে তা সফলতার সাথে বাস্তবায়িত করার জন্যে।
এদিকে, শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের জন্যে জড়ো হওয়া কয়েকশত নেতা-কর্মী দিনভর টাইসন বুলেভার্ডে ‘শান্তি সমাবেশ’ করেন। তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে চলমান উন্নয়নের সমথনে স্লোগান দেন। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করে অনেকে বক্তব্য রাখেন। একইসাথে এই প্রবাসে অবস্থানরত জামাত-শিবিরের এজেন্টরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সাক্ষাতের সময় সকলেই শেখ হাসিনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনায় তাকে আরও বহু বছর বেঁচে থাকা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনাকে সকলেই ৭১তম জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জ্ঞাপন করেন।