টিআইএন॥ প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসে নিজেদের উদ্যোগে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসা তরুণ তরুণীদের বাংলাদেশের আগামী দিনের নেতা অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। গত শনিবার ঢাকার সভারে শেখ হাসিনা যুব কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উন্নয়নে ভূমিকা রাখা তারুণ্যনির্ভর ৩০টি সংগঠনের হাতে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেওয়ার সময় তাদের এই অভিধা দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে তরুণ উদ্যোক্তাদের দেখিয়ে সজীব ওয়াজেদ বলেন, “অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করে, কে আমাদের ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবে। আমি তাদেরকে আমার সামনে দেখতে পাচ্ছি।” সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেশন (সিআরআই) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জয় বলেন, “সারা দেশের তরুণ-তরুণীরা বিভিন্নভাবে কাজ করছে। আমরা চেষ্ট করছিলাম, কীভাবে এই স্বপ্নকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এরপর আমরা ইয়াং বাংলা প্রতিষ্ঠা করি।
“আমরা খুঁজে বের করি সেই সব তরুণ তরুণীদের, যারা দেশের জন্য কাজ করছে। আমরা তাদের খুঁজে পেয়েছি। তারা যেভাবে দেশের জন্য কাজ করছে, আমি সজীব ওয়াজেদ জয়, তাতে অনুপ্রাণিত।” “এই তরুণদের দেখে, তাদের গল্প শুনে আনন্দ ও গর্ব লাগছে। আমি তাদের থেকে অনুপ্রাণিত। এই ছেলে মেয়েরা নিজের চিন্তায় বা চেষ্টায় কাজ করছে। প্রতিবন্ধী, মাদক ও মেয়েদের খেলাধুলার সুযোগ দিতে তারা কাজ করছে।”
লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জনের পরও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হওয়ার জন্য জাতির জনককে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধে চেতনার বিপরীত দিকে হাঁটাকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। “আমরা লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ৪ বছরেই নিজেদের পায়ে দাঁড়াচ্ছিলাম। সেই সময়ে আসে ৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট। এরপর স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি ক্ষমতায় আসে।”
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর চিত্র বদলাতে শুরু করেছে বলে জয়ের মন্তব্যে।
“আমাদের দেশের তরুণরা এখন দেশের জন্য কাজ করতে যেভাবে এগিয়ে আসছে, আগে সেটা দেখা যেত না। দেশের সমস্যা আমরা সমাধান করতে পারব কি না, দেশকে এগিয়ে নিতে পারব কি না, সেই বিশ্বাস আমরা হারিয়ে ফেলছিলাম। কারণ স্বাধীনতার চেতনা আমরা হারিয়ে ফেলছিলাম।” এই প্রসঙ্গে বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের সমালোচনা করে জয় বলেন, “তিনি বলেছিলেন, আত্মনির্ভরশীল হলে বিদেশি সাহায্য পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ আত্মনির্ভরশীল হোক, তারা সেটা চায়নি। কারণ তারা বাংলাদেশও চায়নি।
“আগে আমাদের সামাজিক সমস্যা নিয়ে সুশীলরা কাজ করত। তারা বিদেশে ঘুরতে যেত। এটা তাদের একটা ব্যবসা ছিল। তারা কী করেছে? তারা টাকা পাচার করেছে।” বাংলাদেশের এখনকার অবস্থা তুলে ধরে জয় বলেন, “এখন আমাদেরকে শাইনিং স্টার বলা হচ্ছে। ‘নেক্সট ইলেভেন’-অর্থনীতির দেশের একটি আমরা।”
উদ্বাস্তু প্রসঙ্গে ধনী দেশগুলোর সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জয় বলেন, “সিরিয়ায় যুদ্ধ বাঁধিয়ে তারা সেই দেশ থেকে উদ্বাস্তু নিতে চায় না। পাশের দেশের মানুষের সাহায্য করতে চায় না। “অন্য দিকে ছোট দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে। কারও কাছে এ জন্য হাত পাতি নাই। ১৭ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে এদেরকেও খাওয়াতে পারব।”
এই প্রসঙ্গে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ আটকানোর কথাও বলেন জয়।
“বিশ্ব ব্যাংক ভেবেছিল, তারা পদ্মা সেতুতে অর্থ বন্ধ করলে বাংলাদেশ তাদের পা ধরবে, মাফ চাইবে। আজ দেখেন বাংলাদেশ কোথায় চলে গেছে, কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।” আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলেই তা সম্ভবপর হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
উপস্থিতদের সবার উদ্দেশে জয় বলেন, “স্বাধীনতার চেতনা কোনোদিন ভুলবেন না। ভুলতে দেবেন না। আর কাউকে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেবেন না। এমন মিথ্যা প্রচারের সুযোগ দেবেন না, যাতে জাতি শহীদদের ভুলে যায়।”
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “যারা স্বাধীনতার বিশ্বাস করে না, তারা বাংলাদেশের উপর কী বিশ্বাস রাখবে?” বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান জয়। “অনেকে বলে, আমরা কেন মালয়েশিয়া হতে পারি না। সেখানে যারা স্বাধীনতা এনেছে, তাদেরকে একটানা ৪-৫বার ক্ষমতায় রেখেছে।
“আমরা এবার এক নাগাড়ে আট বছর আছি। তাতেই দেখেন, কী পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে। আরও ১০-১৫-২০ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারলে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে।”