নজরুল ইসলাম॥ সহায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থন দেয়নি ভারত। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশেও অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিকাশ প্রত্যাশা করে। তবে বর্তমানে এ দেশে যে ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তা থেকে ভিন্ন কোনো সরকার ব্যবস্থার ব্যাপারে ভারতের কোনো প্রত্যাশা নেই।
গত রবি ও সোমবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এমন বার্তা মিলেছে। বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিকে ভারত সমর্থন দেয় না বলে তিনি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর উপদেষ্টারা তাঁদের দলের নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবির বিষয়টি তুলেছিলেন। সুষমা স্বরাজ নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা এখন তাঁদের ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করেন, নির্বাচনের সময় তাঁরাই রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দাঁড়িয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন এবং ওই রিটার্নিং অফিসার বসা অবস্থায় তা গ্রহণ করেন।
সুষমা স্বরাজ বিএনপি নেতাদের জানিয়েছেন, তাঁর দেশ ভারতসহ ওয়েস্টমিনস্টার ধারার গণতন্ত্রগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভারতে নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পুরো মন্ত্রিসভা বহাল থাকে। সুষমা স্বরাজ বিএনপি নেতাদের বার্তা দিয়েছেন, তিনি এমন কোনো ব্যবস্থার জন্য এ দেশকে বলতে পারেন না যেটি তাঁর নিজের দেশেই নেই।
সুষমা স্বরাজের সফরের বার্তা বিষয়ে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছে, বাংলাদেশে যত বেশি সম্ভব অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রত্যাশা করে ভারত। বাংলাদেশে যে দল ক্ষমতায় থাকবে তার সঙ্গেই কাজ করবে ভারত। বাংলাদেশে অতীতে সামরিক ও একনায়ক সরকারগুলোর সঙ্গেও ভারত কাজ করেছে।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে ভারত ওই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট এক কূটনীতিক বলেন, ‘নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হলো কি হলো না তার স্বীকৃতি দেওয়ার আমরা কেউ নই। এ স্বীকৃতি দেবে এ দেশের জনগণ। ’
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পরামর্শক কমিশনের সভায় অংশ নিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর আমন্ত্রণে প্রায় ২৪ ঘণ্টার সফরে গত রবিবার ঢাকায় আসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সভায় অংশ নেওয়া ছাড়াও তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ রাজনীতিক, সম্পাদকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যু : ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুতে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মিয়ানমার থেকে আসা বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের জন্য বোঝা। তাদের নিরাপদে ও টেকসই প্রত্যাবাসনের ওপর তিনি জোর দিয়েছেন। তিনি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের কথা বলেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশের মতো মিয়ানমারও ভারতের প্রতিবেশী। তারা এমন কোনো চাপ সৃষ্টি করতে চায় না যার ফল উল্টো হতে পারে। তাই সতর্কতার সঙ্গে মিয়ানমারের সঙ্গে এ ইস্যুটির সমাধানে ভারত কাজ করছে।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের কথিত নমনীয় অবস্থানের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় বিএনপি নেতারা সমালোচনা করেছেন। এমনকি ‘বাস্তুচ্যুতরা ফিরে গেলেই রাখাইনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরবে’ ঢাকায় সুষমা স্বরাজের এমন বক্তব্যের পরও দলটির নেতারা গণমাধ্যমে ভারতের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বা তাঁর সঙ্গীরা কী বলেছেন জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ‘তাঁরা ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছেন।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাঁর ঢাকা সফরে এ দেশে বিনিয়োগ ও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সব দেশের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ (সমান সুযোগ) থাকার এবং ভারতীয় ঋণ রেখার আওতায় বাংলাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ ত্বরান্বিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন। ভারত স্থলপথে এ দেশে আসা ভারতীয়দের বাংলাদেশ সরকার আরোপিত ভ্রমণ করের বিষয়টি বৈঠকে তুলে ধরে এর সুরাহা চেয়েছে। ভারত মনে করে, এটি বৈষম্যমূলক। কারণ ভারত স্থলপথে যাওয়া বাংলাদেশিদের ওপর কোনো ভ্রমণ কর আদায় করে না।
এ ছাড়া ভারত তার ত্রিপুরা রাজ্য থেকে স্থানীয় পণ্য বাংলাদেশে ঢোকার ক্ষেত্রেও সমস্যার কথা তুলে ধরেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আখাউড়া-আগরতলা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য ভারতে যেতে পারে, আসতে পারে না। ত্রিপুরার পণ্য বাংলাদেশে ঢুকতে অন্য সীমান্ত ব্যবহার করতে হয়। সূত্রে: নিউজ৭১