তৌহিদুল ইসলাম টিপু॥ রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের তাবলিগ-জামাতের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মসজিদের বাইরে এবং ভেতরে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, মতবিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়েছে।
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মইনুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে কাকরাইল মসজিদে তাবলিগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। ওসি জানান, মতাদর্শগত বিরোধের কারণে দুই গ্রুপের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পূনরায় সংঘর্ষের আশংকায় মসজিদের ভেতরে ও বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি জানান, আমরা দুই পক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় চেষ্টা করছি। বিকেলে আপাত বৈঠকে কিছুটা সুরাহা হয়েছে। তাবলিগ জামাতের সাথীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে কাকরাইল মসজিদে মাসোয়ারা (বৈঠক) ছিল সুরা সদস্যদের। এ সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তাবলিগ-জামাতের সাথী মোঃ শরফুল ইসলাম খান জানান, এর আগে মাসোয়ারায় ঝামেলা হওয়ায় কোনও বৈঠক হতো না। অনেকদিন পর মঙ্গলবার সকালে ১১ সুরা সদস্য নিয়ে মাসোয়ারা বৈঠক শুরু হয়। এ সময় ওয়াসিবুল ইসলাম ও জুবায়ের গ্রুপ একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করতে থাকেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। প্রথমে ধাক্কাধাক্কি, এরপর হাতাহাতি হয়। এ সময় কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জুবায়ের গ্রুপের পক্ষ হয়ে ওয়াসিবুল ইসলামের গ্রুপের ধাওয়া করে। তখন পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মাসোয়ারা কক্ষসহ কয়েকটি কক্ষ ভাঙ্গচুর হয়। সুমন নামে তাবলীগের এক সাথী জানান, গত সপ্তাহে পাকিস্তানে তাবলিগ-জামাতের এক আয়োজনে ওয়াসিফুল ইসলাম ও হাফেজ মাওলানা জুবায়েরের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জুবায়ের সেখানে যান। মাওলানা জুবায়ের পাকিস্তান গিয়ে একটি জামাত অংশ নিয়ে আহমেদ লাকশাহ নামের একজনের সঙ্গে দেখা করে। তিনি জুবায়েরের কাছে বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের সদস্যদের জন্য একটি বার্তা দিয়েছিলেন। তবে জুবায়ের বাংলাদেশে এসে সে বার্তা জানায়নি। তিনি জানান, সুরা সদস্যরা অন্য মাধ্যমে বার্তার বিষয়টি জানতে পারেন। মঙ্গলবার সকালে সুরা সদস্যদের বৈঠকের সময় বিষয়টি উঠে আসে। তখনই দুইপক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের পর ওয়াসিবুল ও মাওলানা জুবায়েরকে খুঁেজ পাওয়া যায়নি। পরে সাংবাদিকের তাদের বক্তব্য না পেয়ে ফিরে আসেন। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, তাবলিগ-জামাতের দিল্লির মারকাজের মুরব্বি মাওলানা সা’দকে ঘিরে দুই পক্ষের এই সংকট তৈরি হয়েছে। এক পক্ষ আগামী ইজতেমায় তাকে বাংলাদেশে আনার পক্ষে। অন্য পক্ষ আসতে দিতে নারাজ। এছাড়া দেশে ফেরার পর অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে বললেও জুবায়ের কিছু জানাননি। এ নিয়েও ঝামেলা হয় দুই পক্ষের মধ্যে। সূত্রগুলো জানায়, এর আগেও তিন-চার বছর ধরেই দুই গ্রুপের দলাদলি চলছে। এ নিয়ে বিরোধের জেরে তাদের মধ্যে হাতাহাতি ঘটনা ঘটেছে কয়েক দফা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মামলা-পাল্টা মামলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল তাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। এদিকে দিল্লির মারকাজের মুরব্বি মাওলানা সা’দকে ঘিরে তৈরি হওয়া সংকট নিরসনে উলামা মাশায়েখ পরামর্শ সভা হয়েছে একাধিকবার। গত ১৪ নবেম্বর উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের আয়েশা মসজিদে এ ইস্যুতে এক বৈঠক হয়। সেখানে হেফাজতপন্থী আলেমরা হুঁশিয়ারিতে জানান, মাওলানা সা’দকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া হবে না।