টিআইএন॥ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী এবং বিমান বাহিনী একসঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। এরপর থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ এই দিনটিকে সশস্ত্র দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
স্বাধীনতার পর ৪৬টি বছর কেটে গেছে। অনেক পরিবর্তন হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অস্ত্র কিনছে। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে অন্যতম শক্তিশালী করারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বিশ্ব এমনকি এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায়ও সামরিক অস্ত্রের দিক থেকে এখনো অনেকটা পিছিয়ে।
বাংলাদেশ সামরিক শক্তিতে ১৩৩টি দেশের মধ্যে ৫৭ তম অবস্থানে আছে। সেনাবাহিনীতে দুই লাখ পাঁচ হাজার সদস্য আছে। নৌবাহিনীতে বর্তমান ১২’শ অফিসার এবং ১২ হাজার নাবিক এবং দুই হাজার ৫০০ মতো সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে। এছাড়া বিমান বাহিনীতে ১৭ হাজার জন কর্মরত আছেন যাদের মধ্যে ১৭শ বৈমানিক। বাংলাদেশের বিমান বাহিনীতে বিমান রয়েছে ১৬৬টি এবং নৌবাহিনীতে ৮০টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। বাংলাদেশের ট্যাংকের সংখ্যা ৫৩৪টি, সাঁজোয়া যান ৯৪২টি এবং ১৮টি কামান ও ৩২টি ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপের যান রয়েছে। নৌবাহিনীর ছয়টি ফ্রিগেট, চারটি করভেট ও দুটি সাবমেরিনসহ ৯১টি রণতরী আছে। তবে বাংলাদেশের সামরিক এই অস্ত্র বলতে গেলে অন্যান্য দেশের তুলনায় অত্যন্ত কম।
প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, চীন, মায়ানমার ও বিশ্বের প্রধান দুই সামরিক অস্ত্রধারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অস্ত্র সমৃদ্ধি দেখলেই তা বোঝা যাবে।
ভারত: বিশ্বে সামরিক সক্ষমতায় ভারত চতুর্থ অবস্থানে আছে। যুদ্ধের জন্য দেশটির ১৩ লাখ ২৫ হাজার সক্রিয় সদস্য আছে। আর সক্রিয় সংরক্ষিত সদস্য ২১ লাখ ৪৩ হাজার। ভারতের মোট ট্যাংকের সংখ্যা ছয় হাজার ৪৬৪টি। অস্ত্রবাহী যুদ্ধযানের (এএফভি) সংখ্যা আছে ছয় হাজার ৭০৪টি ও সেলফ-প্রপেল্ড গান (এসপিজি) ২৯০টি। তাদের টাওয়ড-আর্টিলারি আছে সাত হাজার ৪১৪টি ও মাল্টিপেল লান্স রকেট সিস্টেমস (এমএলআরএস) আছে ২৯২টি। দেশটির মোট সামরিক এক হাজার ৯০৫টি বিমান এবং ৬২৯টি যুদ্ধবিমান আছে। এর বাইরে ফিক্সড-উইং অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফট ৭৬১টি, পরিবহন বিমান ৬৬৭টি, প্রশিক্ষণ বিমান ২৬৩টি, হেলিকপ্টার ৫৮৪টি এবং অ্যাটাকহেলিকপ্টার আছে ২০টি। ২০২টি নৌ-সক্ষমতা ও বিমানবহনে সক্ষম রণতরী আছে দুটি। তাদের ফ্রিগেটের সংখ্যা ১৫টি। ডেস্ট্রয়ার নয়টি, করভেট ২৫টি, সাবমেরিন ১৫টি, কোস্টাল ডিফেন্স ক্র্যাফট ৪৬টি ও সাতটি মেরিনওয়ারফেয়ার নিয়ে সুসজ্জিত যুদ্ধ প্রস্তুতি আছে দেশটির।
পাকিস্তান: পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী সেনা, নৌ, বিমান, মেরিন, আধা-সামরিক এবং এসপিডি বাহিনী নিয়ে গঠিত। দেশটির নিয়মিত সেনা সদস্য ছয় লাখ ১৭ হাজার, রিজার্ভ আর্মি পাঁচ লাখ ১৩ হাজার, এবং আধা-সামরিক বাহিনীতে তিন লাখ চার হাজার জন সদস্য আছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তান। তাদের ক্ষেপনাস্ত্র প্রযুক্তিতেও অগ্রগামী।
পাকিস্তানের সাঁজোয়া ট্যাংক আছে চার হাজার, চারটি ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ, ১৪টি ফ্রিগেট, আটটি করভিট যুদ্ধজাহাজ, ২৮টি পেট্রল বোট ও আটটি সাবমেরিন আছে। তাদের যুদ্ধবিমানের সংখ্যা ৩২৫টি, বোমারু বিমান ৩০টি, জঙ্গিবিমান ২৫০টি, সাঁজোয়া হেলিকপ্টার ও পরমানু অস্ত্র আছে একশ ১০টি করে। দেশটি সামরিক খাতে মোট জিডিপির দুই দশমিক সাত শতাংশ বরাদ্দ রেখেছে। অর্থের হিসেবে সাত দশমিক আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
চীন: সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে চীন। যুদ্ধের জন্য দেশটির সক্রিয় ২৩ লাখ ৩৩ হাজার ও সক্রিয় সংরক্ষিত সদস্য আছে ২৩ লাখ। স্থল যুদ্ধের জন্য চীনের ট্যাংক আছে নয় হাজার ১৫০টি। অস্ত্রবাহী যুদ্ধযান (এএফভি) চার হাজার ৭৮৮টি। সেলফ-প্রপেল্ড গান (এসপিজি) এক হাজার ৭১০টি, টাওয়ড়ে-আর্টিলারি ছয় হাজার ২৪৬টি ও মাল্টিপোল লান্স রকেট সিস্টেমস (এমএলআরএস) আছে এক হাজার ৭৭০টি। তাদের মোট সামরিক বিমান দুই হাজার ৮৬০টি, যুদ্ধবিমান এক হাজার ৬৬টি, ফিক্সড-উইং অ্যাটাক এয়ারক্র্যাফট এক হাজার ৩১১টি ও পরিবহন বিমান আছে ৮৭৬টি। প্রশিক্ষণ বিমানের সংখ্যা ৩৫২টি, হেলিকপ্টার ৯০৮টি ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার ১৯৬টি। দেশটির মোট নৌ-সক্ষমতা ৬৭৩টি, বিমান বহনে সক্ষম রণতরী একটি, ফ্রিগেট ৪৭টি, ডেস্ট্রয়ার ২৫টি ও করভেট ২৩টি। এছাড়া ৬৭টি সাবমেরিন, ১১টি কোস্টাল ডিফেন্স ক্র্যাফট ও মেরিনওয়ারফেয়ার আছে ছয়টি।
মিয়ানমার: ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশটিতে সেনাবাহিনী বেশ ক্ষমতা সম্পন্ন। রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের সাথে সংকটমান মিয়ানমার সামরিক দিক থেকে অনেক এগিয়ে। দেশটির সেনাবাহিনীর আকার পাঁচ লাখ ১৬ হাজার, এবং তাদের চার লাখ ছয় হাজার নিয়মিত ও এক লাখ ১০ হাজার রিজার্ভ সেনা সদস্য রয়েছে। দেশটির সামরিক অস্ত্রের মধ্যে আছে ১২৭টি যুদ্ধবিমানসহ মোট ২৬৪টি সামরিক বিমান। এছাড়া নয়টি অ্যাটাক হেলিকপ্টারসহ ৮৬ হেলিকপ্টার, ৮৮৬টি অত্যাধুনিক ট্যাংক, চার হাজার ২১২টি বিভিন্ন ধরনের মিসাইল ও একহাজার ২০০ সাঁজোয়া সামরিক যান। দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষায় জন্য অন্তত ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র, ৩৯২টি গান সিস্টেম, ১২০০ অ্যান্টি ট্যাংক অস্ত্র, ২৭টি নেভাল ফ্রিগেড, ৪০টি পেট্রল ক্রাফটসহ মোট ১৫৫টি রণতরী। সামরিক শক্তিধর দেশের তালিকায় তাদের অবস্থান ৩১ নম্বর।
যুক্তরাষ্ট্র: সামরিক সক্ষমতায় এক নম্বরে আছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের যুদ্ধের জন্য সক্রিয় সদস্য ১৪ লাখ এবং তাদের ১১ লাখ সংরক্ষিত সক্রিয় সদস্য। তাদের স্থলযুদ্ধ ট্যাংক আট হাজার ৮৪৮টি ও সাঁজোয়া যান (এএফভি) ৪১হাজার ৬২টি। আর স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র (এসপিজি) এক হাজার ৯৩৪টি, টাওযড়ে-আর্টিলারি এক হাজার ২৯৯ টি ও মাল্টিপল লান্স রকেট সিস্টেমস (এমএলআরএস) আছে এক হাজার ৩৩১ টি।
মার্কিনদের সামরিক বাহিনীর মোট বিমান ১৩ হাজার ৮৯২টি, যুদ্ধবিমান দুই হাজার ২০৭টি ও ফিক্সড-উইং অ্যাটাক এয়ারক্রাফট দুই হাজার ৭৯৭ টি। এছাড়া পরিবহন বিমান পাঁচ হাজার ৩৬৬ টি, প্রশিক্ষণ বিমান দুই হাজার ৮০৯টি, হেলিকপ্টার ছয় হাজার ১৯৬ টি ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার আছে ৯২০টি। তাদের নৌপথে সক্ষমতা বাড়ানোর মতো নৌযান ৪৭৩টি, বিমান বহনে সক্ষম রণতরী ২০ টি, ফ্রিগেট ১০ টি ও ডেস্ট্রয়ার ৬২ টি, সাবমেরিন ৭২ টি, কোস্টাল ডিফেন্স ক্র্যাফট ১৩ টি এবং মেরিন ওয়ারফেয়ার আছে ১১ টি।
রাশিয়া: মার্কিনদের পরেই সামরিক সক্ষমতায় বিশ্বে রাশিয়ার অবস্থান দ্বিতীয়। দেশটির সামরিক বাহিনীতে যুদ্ধের জন্য সক্রিয় সদস্য সাত লাখ ৬৬ হাজার এবং সক্রিয় সংরক্ষিত সদস্য ২৪ লাখ ৮৫ হাজার। স্থল যুদ্ধের জন্যরাশিয়ার ট্যাংক আছে ১৫ হাজার ৩৯৮ টি ও অস্ত্রবাহী যুদ্ধযান (এএফভি) আছে ৩১ হাজার ২৯৮টি। সেলফ-প্রপেল্ড গান (এসপিজি) পাঁচ হাজার ৯৭২টি, টাওযড়ে-আর্টিলারি চার হাজার ৬২৫টি ও মাল্টিপেল লান্স রকেট সিস্টেমস (এমএলআরএস) আছে তিন হাজার ৭৯৩টি। তাদের মোট সামরিক বিমান তিন হাজার ৪২৯টি ও যুদ্ধবিমান ৭৬৯টি। ফিক্সড-উইং অ্যাটাক এয়ারক্রাফট আছে এক হাজার ৩০৫ টি, পরিবহন বিমান এক হাজার ৮৩টি, প্রশিক্ষণ বিমান ৩৪৬টি, হেলিকপ্টার এক হাজার ১২০টি ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার একশ ১১টি। এছাড়া তাদের মোট নৌ-সক্ষমতা ৩৫২টি, বিমানবহনে সক্ষম রণতরী একটি, চারটি ফ্রিগেট, ১২টি ডেস্ট্রয়ার, ৭৪টি করভেট, ৫৫টি সাবমেরিন, কোস্টাল ডিফেন্স ক্র্যাফট ৬৫টি এবং মেরিনওয়ারফেয়ার আছে ৩৪টি।