টিআইএন।। এ্খানে জিডি সম্পর্কে বিশদ আলোনা করা হলো। F I R ও GD কি: আমলযোগ্য বা আমল অযোগ্য যে কোন ধরনের অপরাধ ঘটুক না কেন থানা উহার সংবাদ পেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উহা সম্পর্কে একটি সাধারণ ডায়েরী বা এউ করবেন। অন্যদিকে, আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে সরাসরি মামলা গ্রহণ করলে তখন উহা F I R হিসেবে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ধারা অনুযায়ী লিপিবদ্ধ হবে। F I R বা এজহার লিপিবদ্ধ করা হয় B. P. Form No. ২৭-এ কিন্তু GD লিপিবদ্ধ করা B.P. Form No. ৬৫-এ।
GD বা (General Diary) কত ধরনের হয়: জিডি প্রকৃতিগতভাবে এবং আইনগতভাবে দু’ধরনের হয়: (ক) সাধারণ GD যা কোন অপরাধ সংঘটন সম্পর্কিত, এবং (খ) বিশেষ GD যা কোন অপরাধ সংঘটন সম্পর্কিত নয়। বিশেষ GD করতে হয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে যেমন আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে অবশ্যই আপনাকে থানায় GD করতে হবে যদিও এ GD কোন অপরাধ সম্পর্কিত নয়।
যথাযথভাবে সাধারণ ডায়েরী লেখার নমুনা
তারিখ: ১৮/১১/২০১৭
বরাবর,
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
পল্টন মডেল থানা, ঢাকা।
বিষয়: সাধারণ ডায়েরী।
জনাব,
সম্মানপূর্বক নিবেদন এই যে, আমি মো. শাহজাহান, পিতা: তোরাব বেপারী, বাড়ী নং # ১৫ কাকরাইল, শান্তিনগর বাজার রোড, (৩য় তলা), ঢাকা বিগত ২৫/০২/১৯৮৮ তারিখে আমার স্ত্রী রোজিনা ইসলাম, পিতা: শফিকুল ইসলাম এর সাথে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। বিবাহের পর প্রথম কয়েক বছর আমরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করি এবং আমাদের বৈবাহিক জীবনে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। উল্লেখ্য, কন্যা সন্তান জন্মের পর থেকে আমার এবং আমার স্ত্রীর মাঝে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। আমার স্ত্রী অস্বাভাবিক বদরাগী এবং বদমেজাজী প্রকৃতির। যে কোন তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে দেয়: খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। কথায় কথায় আমাকে পুলিশে দেয়ার ভয় দেখায়। কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ার পর থেকে আমাদের বিবাহিত জীবন কখনোই সুখের ছিল না। আমাদের বৈবাহিক জীবনে জন্ম নেয়া কন্যা সন্তানটির বেড়ে উঠা, তার পড়াশুনা, তার মনোদৈহিক আচরণে যাতে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা প্রভাব না পড়ে তার জন্য কষ্ট করে হলেও এতদিন আমরা সংসার যাপন করেছি যদিও আমাদের মাঝে দূরত্ব অনেক। আমি পেশাগত জীবনে একজন ব্যাংকার। আমার দৈনন্দিন পেশাগত জীবনেও আমার স্ত্রী আমাকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। পারিবারিক জীবনের অতি তুচ্ছ ঘটনা নিয়েও আমার স্ত্রী আমার ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন র্কর্তৃপক্ষের কাছে আমাকে বারবার হেয় এবং অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে ফেলেছে। এরই সূত্র ধরে বিগত ১০.০৯.২০১৭ইং তারিখ সকাল ১১টায় আমার স্ত্রী আমার অফিসে এসে আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ডেকে তার সামনে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং এক পর্যায়ে সে আমার গালে চড় মারে। অন্য কোন মহিলার সাথে আমার সম্পর্ক আছে এরূপ অভিযোগে সে বলে, “তুই অন্য কোন মহিলাকে বিয়ে করলে তোকে মেরে বস্তায় ভরে তোর লাশ নদীতে ফেলবো।” এই কথা বলে সে অফিস থেকে চলে যায়, যার স্বাক্ষী আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জনাব ইমরুল হাসান, ডিজিএম, ওয়ান ব্যাংক। অত:পর ১১.০৯,২০১৭ইং তারিখ রাত আনুমানিক ১১টায় আমার স্ত্রী ০১৭৩১০১৮৩৪৫ নাম্বার থেকে কল করে হুমকি দেয়, “তুই নাকি আমাকে তালাক দিবি। তালাকটা দিয়ে দেখ, তোকে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসাবো।”
আমার স্ত্রী উপরোক্ত হুমকির ফলে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং এ বিষয়ে থানায় বিষয়টি ডায়েরীভুক্ত করার জন্য আবেদন করছি।
মো. শাজাহান
লক্ষ্যণীয়: অপরাধ সংক্রান্ত জিডি দায়েরের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে যে, যেনতেনভাবে কেবলমাত্র ঘটনার বিবরণ দিয়ে জিডি দায়ের করলেই থানা জিডি গ্রহণ করবে না। কারণ, জিডির মৌলিক উপাদান হলো যে, কোন অপরাধ (crime) ঘটেছে অথবা বড় ধরনের অপরাধ ঘটতে পারে এমন সুনির্দিষ্ট সম্ভাবনা থাকতে হবে।
লক্ষ্য করুণ: “গালে চড় মারা” সুনির্দিষ্টভাবে সময় ও তারিখসহ উল্লেখ আছে। “মেরে বস্তায় ভরে তোর লাশ নদীতে ফেলব” সুনির্দিষ্টভাবে জীবননাশের হুমকি। সুতরাং এখানে অপরাধ সংঘটনের আশু সম্ভাবনা রয়েছে।
বি: দ্র: উপরোক্ত GD টি থানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথা Duty Officer এর কাছ থেকে করিয়ে নিবেন এবং নাম্বারসহ মূল কপিটি আপনি ভবিষ্যত রেফারেন্সের জন্য সংরক্ষণ করবেন।
থানায় এজাহার না নিলে কি করবেন: থানা মামলা গ্রহণ না করলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে CR (Complaint Register) বা নালিশী মামলা দায়ের করতে পারেন। ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারায় এরূপ মামলা গ্রহণ করে থাকেন।
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে বাংলাদেশের অনেক থানায় অনলাইনের মাধ্যমে সাধারণ ডায়েরী ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুলিশ হেড কোয়ার্টারের ওয়েব সাইড www.pcc.police.gov.bd এ বিস্তারিতভাবে দেয়া আছে।