রাইসলাম॥ আসিফ নজরুল, একজন বাংলাদেশী গবেষক, কলামিস্ট ও সুশীল সমাজের কর্মী। বর্তমানে কর্মরত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে। বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবি হিসেবে তিনি তাদের কাছে খুবই জনপ্রিয় এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ সেই দলের প্রায় সকল বড় বড় নেতার সাথেই তার ঘনিষ্ঠতা ও গ্রহণযোগ্যতার সুবাদে বি এন পি সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা ও মন্তব্য যথেষ্ঠ গুরুত্ব বহন করে। সেই আসিফ নজরুলের বয়ানে যখন প্রিয় দল সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য শোনা যায় তখন তা অষ্টম আশ্চর্যের মতই মনে হয়। কিন্তু কেন এমনটাই ঘটলো।
সম্প্রতি ৭১ টিভির টকশোতে আসিফ নজরুল বলেন, ১৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির চাইতে আওয়ামী লীগ জিতে আসাই দেশের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে। উক্ত টকশোতে বিএনপি ঘরানার এই বুদ্ধিজীবি তার অভিজ্ঞতার আলোকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে আরো যেসব বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তা নিন্মরুপ:
কোন প্রকার জনপ্রিয়তা, জনভিত্তি বা জনগ্রহণ যোগ্যতা ছাড়া টিকে যেতে পারত আওয়ামী লীগ? উত্তরে আসিফ নজরুল বলেন, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা নিয়ে তো আমি প্রশ্ন তুলিনাই, গাধা ছাড়া কেও এমন প্রশ্ন তুলবে না। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দানকারী দল, বঙ্গবন্ধুর দল, আওয়ামী লীগ কোনদিন স্বজনপ্রিয় দলে পরিনত হবে না। মনে আছে, নতুন এয়ারপোর্ট নির্মাণর জন্য একটা যায়গা ঠিক করেছিল, খুব শখের একটা প্রকল্প ছিল প্রধানমন্ত্রীর, সামান্য আন্দোলনের পর জনগনের মনোভাব বুজতে পেরে তা বাদ দিয়ে দিয়েছে।
ভারতের সাথে যখন দরকসাকসি করত, ক্যাটাগোরিকালি বলেছে, ট্রান্সজিট দিবো না যদি তিস্তা নদীর পানি না পায়। কারন তিনি জানেন যে ক্ষমতার ভিত্তি হল জনগন। এটা বিএনপির আন্দোলন না, সেখানে তারা বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করতে রাজি না বরং ষড়যন্ত্রকারী বলে আখ্যায়িত করছে।
বিএনপিকে অসংখ্যবার জনসভা করতে দিয়েছে আওয়ামীলীগ, আমার মনে আছে এক বছরে বিএনপি ঢাকাতে তিনবার বড় জনসভা করেছে। শুধু বিএনপিকে না যে কোন সামাজিক শক্তিকে চলাফেরার অধিকার, সমাবেশের অধিকার দিয়েছে। সঞ্চালকের উত্থাপিত ২০১২/১৩ সালে বিএনপির সহিংস আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে আসিফ নজরুল বলেন, অবশ্যই আমি মনে করি যে, বিএনপির প্রচন্ড দায়-দ্বায়িত্ব আছে। আপনারা সহিংসতার কথা বলেন তার চেয়ে বড় অপরাধ বিএনপি করেছে। কেয়ারটেকার সরকার তার কনসিস্ট করে বাদ দিয়েছে, আপানর যতই খারাপ লাগুক লিগ্যালি তো আনভ্যালিড। যখন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল নির্বাচনকালীন সরকারের এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাখা হবে।
বিএনপি নেত্রীর সাথে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন ফোনে কথা বলেছিলেন, তখন আওয়ামী লীগের সাথে যে আচরন করা হয়েছে এটা শুধু হটকারী না। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাস যারা লিখবে তারা বলবে এই গণতন্ত্রকে বিনষ্ট করার পেছনে এই দায় বিএনপির উপর সকল সময় থাকবে। আমি বিশ্বাস করি, যদি ২০১৯ সাথে ফেয়ার নির্বাচন হয় তবে সেই নির্বাচনে বিএনপি জিতে আসার চেয়ে আওয়ামী লীগ জিতে আসা মঙ্গলজনক হতে পারে। এটা হওয়ার চান্স বেশি। কারন আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে দেশ শাষনের ক্ষেত্রে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
আওয়ামী লীগের নেত্রীর দৃঢ়তা, সাহস, আত্মসম্মানবোধ অনেক ক্ষেত্রে বজায় রেখে দেশকে অনেকদুর এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে। যদি বিএনপি ফেয়ার নির্বাচনে জিতে আসে তবে বিএনপি আওয়ামী লীগের উপর যে প্রতিশোধ নিবে সেটা আওয়ামী লীগ জিতে আসলে ব্যপারটা আর থাকবে না। কারন আওয়ামী লীগ মনে করবে আমরাতো জনগনের মন জয় করে জিতে এসেছি। ফলে আওয়ামী লীগ এই আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে ভাল পারফর্ম করবে।
আসিফ নজরুলের হঠাৎ এমন বিষ্ফোড়ক মন্তব্যে সুশীল সমাজে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কেও বলছেন, আরিফ নজরুল পদ পরিবর্তন করতে চাইছেন। আবার কেও বলছেন, তিনি আওয়ামী লীগ বিএনপি দুদলেরই তীব্র সমালোচক-এটা তারই অংশ। তবে তার ঘনিষ্টজনরা বলেছেন, বিএনপির সাথে তার দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্টতার সুবাদে তীক্ত অভিজ্ঞতার আলোকেই এমন মন্তব্য। এমন বোধদয়।