বাআ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ভবিষ্যতে আইসিটি খাতই দেশের রপ্তানীতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে। যশোরে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’-এর উদ্বোধনকালে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে আমাদের উৎপাদিত পণ্য ভবিষতে আমাদের রপ্তানীতে সব থেকে বড় অবদান রাখবে। কাজেই আমাদের ছেলে-মেয়েদের সেভাবেই আমরা প্রশিক্ষণ দিতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রবিবার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই আইটি পার্কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উন্নয়নের ছোঁয়াকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়াই তাঁর সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক জেলাতে আমরা একটা করে হাইটেক পার্ক করে দেবো।’
সরকার আশা করছে, ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি খাতের আয় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে এবং জিডিপিতে সফ্টওয়্যার ও আইসিটি সেবাখাতের অবদান ৫ শতাংশে উন্নীত হবে। অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন। গণভবনে এসময় ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইমরান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের ৪৬ বছরের মধ্যে প্রায় ২৯ বছর হেলায় হারিয়ে গেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখেনি তারা, এমনকি বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র অব্যহত রেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে, মানুষ তখন কম্পিউটার ব্যবহার করতেন না। কেউ কেউ শখ করে কম্পিউটার কিনলেও শো’পিসের মতো সাজিয়ে রাখতেন আর ব্যবহার করতেন টাইপরাইটার মেশিন হিসেবে। তিনিই ছাত্রলীগের হাতে কম্পিউটার তুলে দিয়ে পার্টির কাজে এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে ক্ষমতায় থাকা বিএনপি সরকার প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে খেয়াল করেনি, শুধুমাত্র হাওয়া ভবন খুলে অনিয়ম-দুর্নীতি করে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তখনতো হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতির একটা আখড়া করা হয়েছিল। সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটা সরকার সেখানে ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৯ সালের ১৭ জুলাই আমাদের বিনিয়োগ বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম আমরা একটা হাইটেক পার্ক করবো। কালিয়াকৈরে বিশাল জায়গা থাকাতে সেখানেই এই পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হলো। জয়ই (প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং আইসিটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়) আমাকে পরামর্শ দিল। সেখানে একটি হাইটেক পার্ক করলে আমাদের কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ, রপ্তানী বৃদ্ধিসহ অনেক কাজ আমরা করতে পারবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু সেই সময় আমাদের এত আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও আমাদের সীমিত ছিল। তাই চিন্তা করলাম সেখানে কেউ বিনিয়োগ করতে এলে তাকে আমরা সুযোগ দেব বা কারো সাথে যৌথভাবে এটা আমরা করবো। দুর্ভাগ্যটা হলো ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। বিএনপি ক্ষমতায় আসলো এবং যথারীতি অন্যান্য কাজের মত এই কাজটিও পরিত্যক্ত পড়ে থাকলো। তারা আর কোন উদ্যোগ নেয়নি। বরং আল্লাহর কাছে শোকর করি যে এটা নিয়ে যে হাউজিং করে ফেলেনি বা হাওয়া ভবন সেটা যে দখল করে নেয় নাই। এইটুকুই আমাদের একটা সাত্ত্বনা। আগেই যেহেতু জায়গাটা চিহ্নিত করে ফেলেছিলাম কাজেই জায়গাটা আর নিতে পারে নাই।
এ সময় বিনে পয়সায় সাবমেরিন কেবলে সংযুক্ত হবার সুযোগকে দেশের তথ্য পাচারের ভয়ে হাতছাড়া করার অজ্ঞতার জন্য বিএনপি-জামায়াত সরকারের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী । প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে যাত্রা আমরা শুরু করেছিলাম ২০০৮এর নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণা অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সেটা কিন্তুু আমরা করে ফেলেছি।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি’র প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে তার কেউ আর ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে পারবে না। কারণ, তখন বিদ্যুৎ সংকটের জন্য বিদ্যুৎ চলে গেলে আমাদের প্রতিপক্ষ (বিএনপি) বলে উঠতো, ঐতো ডিজিটাল বিদ্যুৎ গেল। এখন আর কেউ ঠাট্টা-তামাশা করে না, সবাই অন্তত ব্যবহার করে ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে সরকারের আসার পর আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে যেসব পদক্ষেপ নেই সেসবেরই একটা অংশ আজকের আইটি পার্ক। আর কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কও তৈরী হচ্ছে, সেটার কাজও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে এই টেকনোলজি পার্কটা যশোরে করা হয়েছে- আমি মনে করি আমাদের বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকাকে উন্নয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট করেই আমাদের কাজ করা উচিত। সেটাই আমরা করে যাচ্ছি। যশোরের মত জায়গায় সমস্ত সুযোগ-সম্বলিত আধুনিক এই পার্কটি মানুষকে আকৃষ্ট করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন- এখানে বহুলোকের যেমন কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি আমাদের দেশকেও আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন দেশ হিসেবে গড়ে তোলার পথে একটা ধাপ আমরা অতিক্রম করতে পারলাম।
পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যশোরের বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।