শিশুদের কারণে বেঁচে যাওয়া ট্রেনের চালকের ভাষ্য

তানজিকা॥ বাংলাদেশে খুবই অল্প বয়সী দুটো শিশুর তাৎক্ষণিক বুদ্ধির কারণে তেল-ভর্তি একটি ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরাঞ্চলীয় রাজশাহী জেলার বাঘায় একটি রেল লাইন ভাঙা দেখে দু’জন শিশু ছুটন্ত একটি ট্রেনের সামনে তাদের লাল মাফলার তুলে ধরলে দুর্ঘটনাটি এড়ানো সম্ভব হয়।           brokent train line and safe passanger
গত সোমবার সকালের দিকে এই ঘটনাটি ঘটেছে। স্থানীয় আড়ানী স্টেশনের মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “লাইন ভাঙা দেখতে পেয়ে বাচ্চারা লাইনের পাশেই তাদের বাড়িতে ছুটে যায়। বাবা মাকে ঘটনাটি জানায়। তারা তখন বলেন তাদের গলায় যে মাফলার আছে সেটি তুলে ধরতে।”
মি. রহমান জানান, ৩২টি বগি নিয়ে তেলবাহী ট্রেনটি খুলনা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিল। “লাইন যেরকম ভাঙা ছিলো আর ট্রেনের যে প্রেশার ছিলো তাতে বড় রকমের দুর্ঘটনারই আশঙ্কা ছিলো,” জানান তিনি। প্রত্যেকটি বগিই তেলে ভর্তি ছিলো বলে তিনি জানান। বাচ্চা দুটোর নাম সিহাবুর রহমান এবং টিটোন আলী। পরে স্টেশন মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান তাদেরকে ধন্যবাদও দিয়েছেন। তিনি বলছেন, বাচ্চা দুটো খুবই বুদ্ধিমান এবং সাহসী। বয়সে খুবই ছোট, তাদের বয়স আনুমানিক ৭/৮ বছর হতে পারে।
ট্রেনের চালক মহিউল আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, আড়ানী স্টেশনে ঢোকার মুখে সাড়ে চারশো গজ দূর থেকে একটি লাল ব্যানার ফ্ল্যাগ দেখার পর ট্রেনের গতি কমিয়ে দেন।  তিনি জানান, প্রথমে তিনি বুঝতে পারছিলেন না কি করবেন। তখন তার ট্রেনের গতি ছিলো ঘণ্টায় ১৬/১৭ কিলোমিটার।
“প্রথমে আমি গাড়িটাকে নিয়ন্ত্রণে আনি। ভাবি যে ওখানে হয়তো কোনো একটা ঘটনা ঘটেছে। বুঝতে পারি ওরা আমাদের রেলের লোক ছিলো না। বাইরের পাবলিক।” তিনি জানান, তখনই তিনি মালগাড়ির গতি কমিয়ে আনেন এবং ১৫ থেকে ২০ ফুট দূরে ট্রেনটি থামাতে সক্ষম হন।
“গতি কম হওয়ার কারণে ট্রেনটি থামাতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি।” এরপর তিনি ট্রেন থেকে নেমে গিয়ে দেখতে পান যে লাইনটি মাঝখান থেকে ভেঙে গেছে। “লাইনটা দুই ভাগে ভাগ  হয়ে গেছে। মাঝখানে আধা ইঞ্চির মতো ফাঁক। একটা লাইন আরেকটা লাইনের দেড় থেকে দুই ইঞ্চিরও বেশি উপরে উঠে গেছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা ছিলো,” বলেন ট্রেনের চালক। ট্রেনের চালক বলেন, “প্রথমে আমি মনে করেছিলাম ব্যানার। কিন্তু পরে নেমে দেখি ওটা আসলে একটা লাল মাফলার।”
ট্রেনের চালক জানান, ওখানে বাচ্চাদের সাথে বড়রাও দাঁড়িয়েছিলো। বাচ্চাদের কাছ থেকে শোনার পর তারা এগিয়ে আসেন। চালক বলেন, “বাচ্চারা আমাকে বলে যে তারা সেখানে খেলছিলো। তখনই তারা এই লাইনটা যে ভেঙে গেছে সেটা দেখতে পায় এবং বাড়ির বড়দেরকে গিয়ে জানায়।”
“তারা যে খুব সচেতন সেটাই তারা দেখিয়েছে। ওরা লাল মাফলার না ধরলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো,” বলেন ট্রেন চালক মহিউল আলম। পরে তিনি কর্তৃপক্ষকে লাইনের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান। তখন ওই পথে সব ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো।
লাইন মেরামত করার পর ট্রেন চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানিয়েছেন আড়ানী স্টেশনের মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.