মানুষের চাওয়া পাওয়ার শেষ কোথায়

তাজুল ইসলাম নয়ন॥ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আশরাফুল মাকলুকাত। আর এই সেরার সেরাদের চাহীদাও কম নয়। তাই সৃষ্টিকর্তা আমাদের চাহিদার যোগান দিতে দিতে আজ প্রায় অসন্তুষ্টির তলানীতে। আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল সেবা করা এবং সকল কিছু দেখাশুনা করার লক্ষ্যে। কিন্তুু আমরা সেই সেবা এবং দেখাশুনা ভুলে গিয়ে এখন ব্যস্ত হয়েছি নিজেদের চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে এমনকি সেবা গ্রহণের লক্ষে। আমাদের চাহিদাগুলি এবং চাওয়া পাওয়াগুলি  নিম্নরূপ নয়কি? end of needs where
উকিল চায় আপনি ঝামেলায় পড়ুন। ডাক্তার চায় আপনি অসুখে পড়ুন। পুলিশ চায় আপনি বেআইনী কাজ করুন। ইলেকট্রিশিয়ান চায় আপনার বাড়ির ওয়্যারিং জ্বলে যাক। বাড়িওয়ালা চায় আপনি যেন জীবনে বাড়ি করতে না পারেন। মুচি চায় আপনার নতুন জুতো ছিঁড়ে যাক। ব্যাংকার চায় আপনি টাকা লোন নিয়ে ঋনগ্রস্থ হোন। প্রাইভেট টিউটর চায় আপনার সন্তান পাঠ্যপুস্তকের পড়া কম বুঝুক। শুধুমাত্র চোর চায় আপনি ধনী হোন আর মহাসুখে নাক ডেকে ঘুমান।
বিভিন্ন জনের চাহিদা ভিন্ন। কেউ চায় পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ তার নিজের হউক। আবার কেউ চাই সে পৃথবীর ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি হউক। একটি দিক স্পষ্ট যে চোরই আপনার প্রকৃত বন্ধু। সে তার চুরির প্রয়োজনে হলেও আপনার মঙ্গল এবং উন্নতি চায়।
এবার আসা যাক আরেকটি দিকে যা আমাদের কখনোই করা উচিত নয়। যাকে আমরা বলি ভরসা। হ্যা ভরতে করতে হলে আগে যাচাই বাছাই অথবা ইতিহাসের স্বাক্ষীকে প্রাধান্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। যেমন:- ১। নদীর পাড়ের বাড়ি। ২। ব্রেক ছাড়া গাড়ি। ৩। ঘর ছাড়া নারী। এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়েই আমাদের চাওয়া ও পাওয়ার যোগান দেয়া এখন সময়ের দাবী।
চাওয়া ও পাওয়ার হিসেব থেকে শুধু একবারই আসে যা তা হলো: ১। মাতা-পিতা; ২। সৌন্দর্য্য; ৩। যৌবন।  এই জন্য জীবনের হিসেব মিলাতে গিয়ে এই বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।
চাওয়া ও পাওয়ার হিসেবে কষতে গিয়ে যা আর ফিরিয়ে আনা যায় না তা হলো: ১। বন্দুকের গুলি;  ২। কথা; ৩। রূহ। এই বিষয়টি অতিব জরুরী তাই স্মরণে রেখে পদক্ষেপ নিলে সামনের দিনে সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
জীবন নিশ্চিন্ন হলেও তিনটি জিনিস মৃত্যুর পর উপকারে আসে। আর সেই উপকারী বিষয়গুলো স্মরণে রখে জীবদ্দশায় পথ চললে জীবনের পরিসমাপ্তিতে তৃপ্তি থাকে। যেমন:- ১। সু-সন্তান; ২। ভাল কাজ;  ৩। ইলম।
তিনটি জিনিস সম্মান নষ্ট করেঃ ১। চুরি;  ২। চোগলখুরী ;  ৩। মিথ্যা। জীবদ্দশায় সাবধান হউন এই তিনটি বিষয়ের চর্চা থেকে। তাহলে জীবনের হিসেব নিকেশ স্বচ্ছতার সঙ্গে মিলে যাবে।
তিনটি জিনিস পিছনেতে রাখোঃ ১। হিংসা; ২। অভাব; ৩। সন্দেহ। এই বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রেখে অগ্রসর হলে জীবনের চাকা সচল থাকবে। এই তিনটি উপাদানই আমাদেরকে সৃষ্টিকর্তা এবং এর সৃষ্টি থেকে দুরে সরিয়ে দেয়।
তিনটি জিনিসকে সর্বদা মনে রেখঃ ১।  উপদেশ;  ২।  উপকার;  ৩। মৃত্যু। জীবনের চলার পথের পাথেয় হিসেবে জড়িয়ে রেখে অগ্রসর হলে জীবনের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও উন্নতি সাধিত হবে। আগামীর এবং পরকালের ফজিলত পূর্ণ হবে।
সর্বদা তিনটি জিনিসকে আয়ত্বে রাখতে হবে। এই তিনিটি উপাদানই আমাদের খারাপ জীবনের প্রতিফল দেখতে ও ভোগ করতে সাহায্য করে। এই তিনটি বিষয় হলো:- ১। রাগ;  ২। জিহবা;  ৩। মন। এদেরকে আয়ত্বে বা বসে রাখতে পারলে খোদায়ী জীবনের প্রতিচ্ছবি প্রত্যক্ষ করা সুনিশ্চিত।
চাওয়া ও পাওয়ার একটি হলো অভ্যাস। আর অভ্যাস চর্চায় স্বচ্চ থাকতে পারলে জীবনের প্রতিটি স্তরেই সফলা প্রতিয়মান হবে। এই তিনটি জিনিস অভ্যাস করা আবশ্যক: যথাক্রমে ১। সততা;  ২। ভক্তি;  ৩। ভালোবাসা।
চাওয়া ও পাওয়ার ক্ষেত্রে এই তিনিটি জিনিস থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। যথাক্রমে ১।  মিথ্যা;  ২। অহংকার;  ৩। অভিশাপ।
চাওয়ার পাওয়ার হিসেবে এই তিনটি জিনিসকে চিন্তা করে ব্যবহার করা আবশ্যক। যথাক্রমে ১।  কলম; ২।  কথা;  ৩।  কদম।  এই হলো আমাদের চাওয়া ও পাওয়ার ব্যবধান ও এর চর্চার সিড়ি। নুপুরের দাম হাজার টাকা; কিন্তু তার স্থান পায়েই হয়। টিপের দাম এক টাকা হলেও তার স্থান কপালে। “যে নুনের মতো তিতকুটে জ্ঞান দেয়, সে আসল বন্ধু”। ইতিহাস সাক্ষী আছে, নুনে কখনো পোকা ধরেনি… আর মিষ্টিতে তো প্রতিদিনই পোকা ধরে, পিঁপড়ারাও ছাড়েনি। “আল্লাহর কালাম বলে- তোমরাই দুনিয়ার নূর; তোমরাই দুনিয়ার লবন”
মোমবাতি জ্বালিয়ে মৃত মানুষকে স্মরণ করা হয়…আর মোমবাতি নিভিয়ে জন্মদিন পালন করা হয়। মানুষ সোজা পথে চলতে চায় না…আর বাঁকা পথের প্রতি সবারই আগ্রহ বেশী। এজন্যই তো মদ বিক্রেতাকে কারো কাছে যেতে হয় না…আর দুধ বিক্রেতাকে পাড়ায় পাড়ায় যেতে হয়।
আমরা দুধ বিক্রেতাকে সর্বদা বলি, “জল মেশাননি তো?” আর মদে নিজেরাই জল মিি শয়ে খাই। আজ পর্যন্ত মানুষকে এটুকুই বুঝলাম …যে “তাকে জানোয়ার বললে ক্ষেপে যায়…কিন্তু সিংহ বললে খুশি হয় !!
মানুষ বড়ই আজব প্রাণী, যা নিজেরা নিজেদের নিবুদ্ধিতা দিয়ে অর্জন করেছেন।
জীবনের হিসেব নিকেশ মেলানো এবং সেই হিসেব ও নিকেশে এই চরম ও পরম ভাবনাগুলোকে স্থান দিয়ে সামনে এগুলো মনে হয় আমাদের জীবনে নিত্যদিনের পরিবর্তন আসবে। আশা করি এই সিড়িতে ধাপে ধাপে উঠতে থাকলে হয়ত হিসেব নিকেশে কোন গন্ডগোল হবে না এমনকি জীবনের সর্বস্তুরে একটি স্বচ্ছতা ও জবাবদীহিতা দৃশ্যমান থাকবে। এই হিসেবে গড়মিল হলেই ইহকাল ও পরকাল উভয় স্থানেই অশান্তি ও যন্ত্রনার ভোগান্তীর স্বিকারে পরিণত হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.