তাজুল ইসলাম নয়ন॥ সততা কি তা কিন্তু প্রতিটি মানুষই জানেন, দেখেন ও বুঝেন। তারপরও এই সততা হয় অবহেলিত। অভাবেব কাছে স্বভাবের পরাজিত হওয়া বারবারই চোখে পড়ে। কিন্তু হওয়ার কথা ছিল স্বভাবের কাছে আভাবের পরাজিত হওয়ার। আর হয়েছেও তাই। জনাব ইউসুফ জনপ্রতিনিধি হয়েও অর্থের লোভ না করে করেছেন সততা এবং মানবতা ও নৈতিকতা মিশ্রিত বিবেকের সেবা। সেই বলিষ্ট মানুষ পরাজিত করেছিলেন এক রাঘব বোয়াল এবং সন্ত্রাসের বরপত্র, মানবতা অপরাধী এবং মৃত্যুর আগমুহুত্ব পর্যন্ত ক্ষমতাধর ব্যক্তি। কিন্তু জনতা এবং সততার জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন সেই ইউসুফ। দু:খের বিষয় হলো এই সততা এবং অন্ধকারের আলোসমেত মানুষটিই কিনা রয়েছিল পর্দার অন্তরালে। দু:ভার্গ্য আমাদের যে, আমরা এই সততাকে দলীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক অঙ্গকে ব্যবহার করতে পারিনি।
সবচেয়ে দু:খের বিষয় হলো দলীয় নেতা এবং কর্মীরা এতোদিন এই সততা এবং দলীয় দৃষ্টান্তস্থাপনকারী মানুষটিকে চিনাতো দুরের কথা আমলেই নিতো না। যাই হউক নিয়তির নির্মম পরিহাস শেষ পর্যন্ত এসেছে গতিশীল আলো ও দৃষ্টান্ত স্থাপনের উৎস হিসেবে। মানবতার মা এবং দলের কান্ডারী ও জাতীর বিবেক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই সকল অসম্ভবকে সম্ববে পরিণত করেন এবং করেছেন। আরো যারা (আমরা) কি করেছি আর করব তা কিন্তু শিক্ষা থেকেও শিখতে চাই না। সর্বোপরি ইউসুফ সাহেব প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য পাওয়া বড় নয় বরং বড় হয়েছে দেশবাসির কাছে সততার দৃষ্টান্ত প্রস্ফুটিত এবং দলীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে মানুষ এমন নেতাই দেখতে চাই এই ধারনার পুনজন্ম হওয়র একটি উপকরণ। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী তাঁর সকল গুনাবলীগুলোকে প্রকাশ করে দেশ, দল, রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সকল স্থানে একটি আগামীর দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করার উপলক্ষ হয়ে থাকবে।
তবে অনলাইন পত্রিকা পূর্বপশ্চিমের নিউজকে ধন্যবাদ জানাই এই গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি পরিবেশন করার জন্য। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার অসহায় সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফের পাশে দাঁড়িয়েছেন মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অসুস্থ এ সাবেক এমপির চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এই নির্দেশনা ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে পৌঁছে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ‘একজন আদর্শিক রাজনীতিক ও সাবেক এমপি ইউসুফের করুণ পরিণতি, কার লজ্জা?’ শিরোনামে একটি খবরও প্রকাশ করা হয়।
এরপরই গত রোববার সকালে শেখ হাসিনা সাবেক এমপির চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম জানান, গত কিছুদিন ধরে রাঙ্গুনিয়ার সাবেক এই সংসদ সদস্যের মানবিক জীবন যাপন ও শারীরিক দুরারোগ্যের সংবাদ সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত হয়। এছাড়া গণমাধ্যমেও এসেছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সাবেক এমপি মোহাম্মদ ইউসুফ চট্টগ্রাম-৭ আসন থেকে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ৮ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হয়েছিলেন। আজীবন কমিউনিস্ট সংসদ সদস্য মোহম্মদ ইউসুফের সতীর্থদের কেউ কেউ পরে বিএনপিতে যোগ দেন। কেউ যান গণফোরোমে, আর তিনি যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগে।
বাবার দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান মোহাম্মদ ইউসুফ সারাজীবন দুঃখী মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। নিজের যেটুকু সম্পদ তাও মানুষকে দান করেছেন। এখন তিনি নিজেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সারাজীবন সততার রাজনীতি করে পথ হাঁটা মানবমুক্তির এই বাম নেতা পায়ে ঘাঁ নিয়ে গলায় গামছা ঝুলিয়ে ময়লা শার্ট লুঙ্গি পরে জীর্ণশীর্ণ কুটিরের বারান্দার বসে থাকেন। তার চিকিৎসার জন্য পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়; প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সেখান থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা আশংকাজনকই রয়েছে তবে সকলের দোয়া ও ডাক্তারদের চেষ্টা এবং সৃষ্টিকর্তার কৃপায় তিনি আবারো ফিরে আসতে পারেন জনতার মাঝে। রাজনীতির নিতি ও আদর্শ উজার করে বিলিয়ে দিতে। আমরা তাঁর সুস্থ্যতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করি যেন তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের অংশীদারী হয়ে আগামীর স্বাক্ষী হয়ে থাকুক বাংলাদেশের সঙ্গে।