চীন আর পাকিস্তানের দ্বারস্থ বিএনপি

এস কে কামাল॥ সহায়ক সরকারের ব্যাপারে ভারত এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে সাড়া পায়নি বিএনপি। এদের সাড়া না পেয়ে চীন আর পাকিস্তানের দ্বারস্থ হয়েছে বিএনপি। পাকিস্তান বিএনপিকে প্রকাশ্য এবং গোপন সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও চীন এখনো কোনো অবস্থান নেয়নি। কূটনীতিক সূত্রে এই খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। bnp nocked pk and china door to help to power
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপির প্রধান শর্ত হলো একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার। নির্বাচনের ৯০ দিন আগে এ ধরনের একটি সরকারের যৌক্তিকতা গত ৫ বছর ধরে বিএনপি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। ২০১৪ সালে বিএনপির এই দাবির প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহানুভূতিশীল ছিল। কিন্তু ভারত সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের গণতান্ত্রিক ও স্বীকৃত নীতি’র পক্ষে অবস্থান নেয়। গত চার বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন উপমহাদেশে ভারতপন্থী নীতি নিয়ে চলছে।
উপমহাদেশে নতুন মার্কিন নীতি হলো, ভারতের সিদ্ধান্তই মার্কিন সিদ্ধান্ত। এ কারণেই, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উৎসাহ নেই। যুক্তরাজ্য আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি সমর্থন করলেও গত দুই বছরে এই দাবি থেকে সরে এসেছে। যুক্তরাজ্য মনে করে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া জরুরি, তবে এই নির্বাচন হতে হবে সংবিধানের আওতায়। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সংকট নিরসনে রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার উপর গুরুত্ব আরোপ করে। তবে যুক্তরাজ্য মনে করে, এই উদ্যোগ এদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিতে হবে। যুক্তরাজ্য মধ্যস্থতার কোন চেষ্টা করবে না। প্রায় অভিন্ন অবস্থান ইউরোপীয় ইউনিয়নের। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেউই বিএনপিকে আশার বাণী শোনাতে পারেনি।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমর্থনহীন বিএনপি দ্বারস্থ হয়েছে পাকিস্তান এবং চীনের। পাকিস্তান সবসময়ই বাংলাদেশের রাজনীতিতে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ঐতিহাসিক ভাবেই পাকিস্তানের তাবৎ কূটনৈতিক তৎপরতা আওয়ামী লীগ বিরোধী। বিএনপির সঙ্গে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সম্পর্ক ওপেন-সিক্রেট। ২০০১ এর নির্বাচনে আইএসআই বিএনপিকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল বলে পাকিস্তানের আদালতে আইএসআইয়ের প্রধান জবানবন্দি দিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের এখন ষড়যন্ত্র ছাড়া বাংলাদেশকে চাপ দিয়ে বাধ্য করার যোগ্যতা এবং সক্ষমতা নেই।
পাকিস্তান আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির পক্ষে দীর্ঘদিন ধরেই তৎপর। কিন্তু চীন কোনো দেশেরই অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে না। চীন অর্থনৈতিক কূটনীতির নীতিতে বিশ্বাস করে। বর্তমান সরকারের সঙ্গেও চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও কূটনীতি চলমান। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে বর্তমান সরকারের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক কূটনীতি কিছুটা টানাপোড়নের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ভারতের সঙ্গেও চীনের সম্পর্ক এখন অনেক শীতল। বিশ্বে এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি হবার পর চীন এখন উপমহাদেশে হাত বাড়িয়েছে। ভুটান, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালে চীনের কার্যক্রম এখন চোখে পড়ার মতো। তাই বিএনপি এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীনের হস্তক্ষেপ চাইছে। আর চীন যেন এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে তার মধ্যস্থতা করছে পাকিস্তান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.