উন্নয়ন দৃশ্যমান; অধম্য স্বপ্ন; নির্মানাধীন দেশ

ফারুক আহমেদ॥ মামুন ফার্মগেট সিগনালে বসে আছে, চোখ পড়লো ওপরের দিকে একটা ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডে। যেখানে ৬টি স্ক্রিনে লাইভ ডেটা দেখাচ্ছে, সরকারী টেন্ডারের সংখ্যা আর অর্থ মূল্য। সিগন্যাল ছেড়ে দিলেও সে ব্যাপারটিকে মাথায় নিয়ে বাসায় ফিরে গেলো। সে সদ্য দেশে এসেছে, কুয়েট থেকে বের হয়েই সুযোগ পেয়েছিল মালয়শিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ নিয়ে কাজ করবার। যদিও মাত্র কয়েক বছর থেকেছে সে, তবুও দেশে ফিরে দেশের ছোট ছোট পরিবর্তন তার চোখে নতুন করে ধরা দিচ্ছে। মেট্রোরেল, মগবাজার ফ্লাইওভার, সবক্ষেত্রে অনলাইন আবেদন ব্যবস্থা, মোবাইল মানি ট্রান্সফার; তবে বাংলায় ডিজিটাল বিল বোর্ড সে অবাক হয়ে দেখছে অনেকক্ষণ ধরে। এলোমেলো আর অসংখ্য ব্যানার দেখে অভ্যস্ত হওয়া মামুনের চোখকে চমকে দিয়েছে ডিজিটাল বিলবোর্ড। আমাদের মত স্বল্প উন্নত দেশে খরুচে ডিজিটাল বিলবোর্ডের প্রয়োজন কেন পড়লো ভেবে সে কিছুটা বিরক্তও। বাসায় ফিরে ডিজিটালাইজেশন ব্যাপারটি বুঝতে সে ইন্টারনেটে খুঁজে দেখতে শুরু করলো। digital sighboard
সে যে তথ্যটুকু পেল তা হলো- এই প্রজেক্টটি করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের অধীনে সিপিটিইউ এর ই-গর্ভমেন্ট প্রকিউরমেন্ট বা ই-জিপি। ই-জিপি সিস্টেমটি কি? ই-জিপি হলো অনলাইন টেন্ডারের প্লাটফর্ম, যা অনলাইনে সরকারি ক্রয়কারী সংস্থা আর প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্রয়কার্য সম্পাদনের করে। যা আবার সরকারের ‘তথ্য অধিকার আইন ২০০৯’ কেও নিশ্চিত করে। ই-জিপি কেন করা হয়েছে? দেশের উন্নয়নের জন্য কেনা পণ্য বা সেবা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে, উন্মুক্ত দরপত্র আহবানের মাধ্যমে হলে, বেশী সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগীতা তৈরী হবে এবং এতে করে সরকারি ক্রয়ের গুণগত মানও বাড়বে। আর অনলাইনে হওয়ায় জনসাধারণের কাছে সরকারী কার্যক্রমের স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা পুরোপুরি নিশ্চিত হবে; বাস্তবায়নও থেমে থাকবে না আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। সিপিটিইউ’র উদ্যোগকৃত এই বিলবোর্ডটি ই-জিপিতে সরকারের কেনা নিয়মিত টেন্ডারের সংখ্যা আর এর মোট অর্থমূল্যকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সহজ বাংলায় সাধারণ জনগণকে সরাসরি দেখায়, যাতে তারাও জানতে পারে তার কষ্টে উপার্জিত টাকায় দেয়া কর বৃথা যাচ্ছে না।
মামুন বুঝতে পারলো উদ্যোগটি ক্ষুদ্র কিন্তু এর আবেদনটি গভীর। এবার সে খুঁজতে শুরু করলো এই বিলবোর্ডটি সরকার কীভাবে তৈরী করেছে, উন্মুক্ত স্থানে এরকম তারহীন একটি বিলবোর্ড স্থাপন করা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং মনে হলো তার কাছে। সে তার ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান দিয়ে যতটুকু বুঝলো- ডট ম্যাট্রিক্স ব্যবহার করে ডিসপ্লেটিতে বাংলা অক্ষরে তথ্য দেখানো হয়েছে। সে জানে ডট ম্যাট্রিক্স ডিসপ্লে সবচেয়ে সাশ্রয়ী, ব্যবহারেও দীর্ঘস্থায়ী। ডিসপ্লেটি আগে থেকে অপারেটেড কোন তথ্য দেখায় না বরং তথ্যকে নির্ভুল রাখতে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থেকে নিজে থেকে তথ্য হালনাগাদ করে, এমনকি অনুমতি ছাড়া অনাকাঙ্খিত কোন অ্যাক্সেসও পেতে দেয় না ফলে বিলবোর্ড থাকে ঝুঁকিহীন। উন্মুক্ত আবহাওয়ায় থাকতে এটা পানি নিরোধক করা হয়েছে এবং বিরূপ পরিবেশেও এটি কাজ করতে পারে। হাই প্রসেসিং মাল্টি কোর এআরএম প্রসেসর, জিএসএম/জিপিএস ভিত্তিক নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয়, ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকতে এটি সিপিটিইউ ওয়েবের সাথে যুক্ত থাকে।
তার ভালোলাগা আবেগে পরিণতি পেল যখন সে জানলো এই সবগুলো ফিচারই দিয়েছে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। অর্থাৎ এটি তৈরী করা হয়েছে বাংলাদেশেই, তার মতই বাংলাদেশে পড়ুয়া কিছু ইঞ্জিনিয়ারদের অদম্য ইচ্ছায়। প্রতিষ্ঠানটি অটোমেশন ভিত্তিক প্রোডাক্ট যেমন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন, অটোমেটিক কার পার্কিং সল্যূশন, গাড়ির ফুয়েল মনিটরিং সিস্টেম, শিল্প প্রতিষ্ঠানের মেশিন নিয়ন্ত্রণের জন্য ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল টাইমার তৈরী করে। যাতে মানুষের জীবন হয় সহজ আর নিরাপদ; উন্নত দেশগুলোর মতই! কিন্তু প্রযুক্তিকেন্দ্রিক হয়েও প্রতিষ্ঠানটি কর্মসংস্থানের সুযোগকেও রেখেছে প্রযুক্তির মতই অবারিত। মামুন সিদ্ধান্ত নিলো সে পিএইচডি করতে আর বাইরে যাবে না, কারণ সে জেনেছে পাই ল্যাবস প্রযুক্তি পণ্য উদ্ভাবনের পাশাপাশি, আগ্রহী শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনে গবেষণার সুযোগও দেয়। সম্ভাবনাময় এই দেশকে সে পেছনে ফেলে যাবে কোন যুক্তিতে!

অসীমের হাতছানি

প্রযুক্তিভিত্তিক সফলতার জন্য প্রয়োজন একটি দেশের প্রযুক্তির শক্তিশালী ভিত্তি, প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি আর দেশী সমস্যাগুলোর সমাধান। কিন্তু ভিত্তি তৈরী করার মত পর্যাপ্ত উদ্ভাবন আমাদের নেই, উপরন্তু আছে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা। স্বভাবতই, উদ্ভাবনের চাইতে বাইরের প্রযুক্তির অ্যাডাপ্টেশন বেশী এ দেশে। অন্যদিকে, উদ্ভাবন ছাড়া একটি দেশের উন্নয়ন নির্দিষ্ট সময় পর আটকে যায় বৈদেশিক বাণিজ্য আর ব্যবসায়িক মুনাফায়। কিন্তু আমরা তো স্বনির্ভরতা চেয়েছি, আমাদের দেশীয় সমস্যাগুলো কি বিদেশী প্রোডাক্ট দিয়ে করা সম্ভব?
তাই বাংলাদেশকে স্বনির্ভর হতে, উন্নত দেশে পরিণত করতে ২০০৮ সালে সরকার হাতে নিয়েছিলো অনেকগুলো উদ্যোগ। ডিজিটাল যন্ত্রপাতি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অর্থাৎ আইসিটির বহুল ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ২০২১ সালে সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করা তার মধ্যে অন্যতম। ই-গর্ভনেন্স, ই-কমার্স, ই-এডুকেশন, ই-মেডিসিন, ই-এগ্রিকালচার ইত্যাদি ডিজিটালাইজেশনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগ। একুশ সাল কেন? কারণ একুশ সালেই বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার করবে। সুর্বণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে একটি উন্নততর বাংলাদেশের।
ডিজিটালাইজেশনের জন্য বাংলাদেশ সরকার করেছে উন্মুক্ত তথ্য ভিত্তিক জাতীয় ডেটা সেন্টার, ইলেক্ট্রনিক দরপত্র পদ্ধতি, ডিজিটাল স্বাক্ষর পদ্ধতির প্রবর্তন, বাস্তবায়নাধীন হাইটেক পার্ক, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, নাম না জানা আরো নানা উদ্যোগ, আছে শীর্ষ ৩০ আউটসোর্সিং দেশের তালিকায় বাংলাদেশ।
যে দেশ চূড়াকে স্পর্শ করার স্বপ্ন দেখে, তা কি থামবার?
আমাদের অসংখ্য সীমাবদ্ধতা, অপ্রতুলতা কাটিয়ে বাস্তবতার সমস্যাসংকুল পথকে মসৃণ করতে পাই ল্যাবস বাংলাদেশ কিংবা বেসরকারি উদ্যোগগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সীমিত। তাই সরকারি সহায়তা আর বেসরকারি উদ্যোগের সম্মিলনই পারে প্রযুক্তির বাংলাদেশ তৈরী করতে।
অন্যান্য সেবাসমূহ
পার্কিং ম্যানেজমেন্ট করতে হিমশিম খাচ্ছেন ? জটিল পার্কিং এর স্মার্ট – অটোমেটেড সমাধান জানতে প্লে বাটন ক্লিক করুন। দেশের অগ্রযাত্রায় স্ব-স্ব ক্ষেত্রে আপনার এবং আপনার প্রতিষ্ঠানের অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের পথচলায় আপনাদের সাহচার্য, উৎসাহ, অভিজ্ঞতা, মতামত, সমালোচনা পাথেয় হয়ে থাকবে। আমরাও চেষ্টা করবো এই অগ্রযাত্রায় লব্ধ অভিজ্ঞতা, প্রয়োজনীয় রিসোর্স নিয়মিত শেয়ার করার। চলুন সবাই মিলে গড়ে তুলি আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ – অন্যরকম বাংলাদেশ …।

Leave a Reply

Your email address will not be published.