টিআইএন॥ দুনিয়ার কোন সামরিক শাসকই ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর টিকে নেই বা থাকতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে এরশাদই শুধু ব্যতিক্রম। মুলধারার রাজনীতিতে তিনি এখনো দাপুটে। জনসমাবেশ, বক্তৃতা, বিবৃতি নিজ দল ও জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব প্রধান, নিঃসংকোচে সর্বত্র বিচরন, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন, সবই করেছেন। মিডিয়াতেও উপেক্ষিত থাকেননি কখনো, এখনও নয়। যদিও অনেকেরই জানা, তারপরও রাজনীতিকদের এরশাদের এই ‘ইতিহাস’ আবিস্কার করেছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে ৮তম জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে আলোচনার ফাঁকে এই বিষয়টি উল্লেথ করেন। এরপর বিভিন্ন সভায়ও তিনি এরশাদের এই ইতিহাস বলেছেন।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দকী বলেন, এরশাদ শুধু রাজনীতিতেই টিকে নেই, যিনি জেলে বসেই দ্বিতীয়বারের মত ৫টি আসনে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু যা কপালে জোটেনি পাকিস্তানের আইয়ূব খান, ইয়াহিয়া খান, ইস্কান্দার মির্জা কিংবা আমাদের জিয়াউর রহমানেরও। অবশ্য জিয়াউর রহমান নির্বাচনে অংশ নেননি। নিলে জিততে পারতেন কি না, জানি না। প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সাল থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এরপর ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকে শুরু হয় দীর্ঘ কারাবাস। ৯১’র নির্বাচনে জেলে বসেই নিজ জেলা রংপুরের সবকটি আসন লাভ করেন। অন্য সেনা শাসকরা যা কল্পনাও করতে পারেন না। এমনকি ৯৬’র নির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৯৭’র ৯ জানুয়ারী জেল থেকে ছাড়া পান এরশাদ। তবে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার হারান। সেনাশাসকের দৃশ্যপট ইতিবাচক থাকলেও পরে জনঅসন্তোসের সব শাসকেরই পরিনতি হয়েছে কল্পনার চেয়েও ভয়াবহ। ব্যতিক্রম শুধু এরশাদ। একনায়কতন্ত্রের রাজদন্ড ছাড়ার পরও মুলধারার রাজনীতিতে তিনি এখনো সক্রীয়। নামের আগে এখনো লেখা হয় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান!
জ্ঞানেন্দ্র, মোশারফ বা অন্যরা কি তা ভাবতে পারেন? একদেশের রাজার নাম জ্ঞানেন্দ্র। রাজার কোন কাজ নেই। জ্ঞানেন্দ্রের কথা ভাবতেই এখন মুকুট মাথায় রাজপোশাক গায়ে ভ্যাবাচেকা খেয়ে ঠায় দাড়িয়ে থাকা একটা মনুষ্যরূপী কাকতারোয়ার দৃশ্য আসতে পারে। অথচ, ক’দিন আগেও তার কি সে প্রতাপ। কেউ কিছু বললেই ধরে পিষে মার। সেই জ্ঞানেন্দ্র এখন স্রেফ পাপেট। তাকে দিয়ে কি করানো যায়, তা অনেক ভেবেও ঠিক করতে পারছে না। নেপালের বর্তমান সরকার। পাকিস্তানের আইয়ূব খানেরও পতন হয়েছিল নির্মমভাবে। পরে আর রাজনীতিতে ঠিকে থাকতে পারেনি। ইয়াহিয়ারও পতন হয়েছিল একইভাবে। উগান্ডার এককালের শাসক ইদি আমিনের আরেক নাম আফ্রিকার কসাই। হেভিওয়েট ঐ নেতা বৃটিশদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ১৯৭১ সালে উগান্ডার নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন। তার বাহিনীকে প্রশিক্ষিত করে তুলে সিআইএ মার্কিন মিলিটারি। অস্ত্রও আসে ঐসব বন্ধু দেশগুলো থেকে। কিন্তু আরো ক্ষমতার লোভের আশায় তানজানিয়া আক্রমন করেই বেকায়দায় পরে যান। আন্তর্জাতিক চাপে বৃটিশ ও আমেরিকানরা তার বন্ধুত্বের হাত গুটিয়ে দেয়। ১৯৮০ সালে তাই সৌদি আরবে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় এককালের জগন্যতম স্বৈরশাসক ইদি আমিন। জেদ্দার একটি খামার বাড়িতে ছাগল ও মুরগির দেখভাল করেই জীবনের অন্তীম মূখুর্তগুলো কাটাচ্ছেন সাবেক ঐ ফিল্ড মার্শাল। পানামার মিগুয়েল নামের এক প্রফেসর বলেছেন, ‘বিশ্বের তাবৎ রাজনৈতিক উচ্ছিষ্টগুলোর জন্য আমাদের দেশটা যেন মস্ত বড় ময়লার ঝুড়ি।’ হাইতির এককালের স্বৈরশাসক রাওল সেদ্রাসের উদ্দেশ্যে তিনি একথা বললেও পানামায় আশ্রয় নিয়েছিল বেশ কয়েকজন স্বৈরশাসক। এদের মধ্যে আছেন আর্জেন্টিনার জন ডোমিঙ্গো, শাহ এফ ইরান, গুয়াতেমালার জর্জ সেরানোর। একে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে মরক্কোর সম্রাট হাসান দ্বিতীয়, ফিলিপাইনের ফার্দিনান্দ মার্কোস, নাইজেরিয়ার জেনারেল সানির মত আরো অনেককে। সর্বশেষ লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট কর্ণেল গাদ্দাফি ও মিশরের সামরিক শাসক হোসনি মোবারকের করুণ পরিনতি সবার জানা। এইচ. এম. এরশাদই একমাত্র সাবেক জেনারেল ও রাষ্ট্র নায়ক যিনি এখনও বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে ইস্কাবনের টেক্কা।