‘খালেদা জিয়ার কারাদন্ড ভারতের জন্য কি অর্থ বহন করে?’

দোলোয়ার হোসেন ফারুক॥ আগামী ডিসেম্বরে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যেহেতু কারো বিরুদ্ধে দুই বছরের বেশি কারাদন্ডের রায় থাকলে তিনি নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষিত হবেন, তাই বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ের কারণে আসন্ন নির্বাচনে তার দলের অংশগ্রহণই অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হয়তো ক্ষতিগ্রস্থ হবে, তবে এতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন প্রভাব ফেলবে না। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তারা ক্ষমতায় টিকে গেলে সেটা ভারতের জন্যই ভালো হবে।HELADA JAIL
২০০৪ সালে হাসিনার এক সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করা হয়। ওই হামলার জন্য আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানকে দায়ি করে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে নয়াদিল্লী হাসিনাকে পৃষ্ঠপোষকতা করে এবং নির্বাচনকে সমর্থন দেয়। এতে করে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হয় এবং সরকারের বৈধতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের গুঞ্জন থেমে যায়। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে সহিংসতায় জড়িত যে সব জঙ্গি গ্রুপ বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছিল, তাদেরকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করে হাসিনা। (বিএনপি সরকার মূলত তাদের উৎসাহ যোগাতো।) দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বেড়ে যায়, যেখানে বাণিজ্যের ভারসাম্য মূলত ভারতের দিকেই রয়েছে। ঢাকা এমনকি ভারতের মূল ভূখন্ডের সাথে এর উত্তরপূর্ব অঞ্চলের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য নিজের ভূমি ব্যবহার করতে দিতেও সম্মত হয়। দেশ বিভাজনের কারণে যে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হয়েছিল সেটি কাটিয়ে উঠতে এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ভারতের প্রবেশ সহজ করতে এটা সহায়ক হবে।
২০১৫ সালে ঢাকার জন্য ২৪ বিলিয়ন ডলারের ক্রেডিট লাইন অনুমোদন দেয়। সেটার সাথে ভারসাম্য রাখতে গত বছর নয়াদিল্লীও ঢাকাকে ক্রেডিট লাইনের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু সেটার পরিমাণ মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার। নয়াদিল্লীর জন্য আরও উদ্বেগের বিষয় হলো ২০১৬ সালে চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন কিনেছে বাংলাদেশ, যেটা বঙ্গোপসাগরে টহল দেবে। চীন ও বাংলাদেশের নৌবাহিনী যৌথ মহড়াতেও অংশ নিয়েছে।
ভারতের অর্থনীতি যখন হোচট খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে। ২০১৬ সালে জিডিপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.১ শতাংশে। বিজনেস সংবাদ ওয়েবসাইট কোয়ার্টজ এটাকে বলেছে, “বিশ্বের সুখী অর্থনৈতিক গল্পগুলোর একটি”। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশ। এই শিল্প শুধু অর্থনীতিকেই মজবুত করছে না, কর্মসংস্থানও করছে ব্যাপক। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার, আর সারা বিশ্বে নবম। এছাড়া, ভারতের বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেমন এয়ারটেল, রিলায়েন্স এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির অংশ। এভাবেই, নিরাপত্তার বাইরেও ঢাকার সাথে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে নয়াদিল্লী।
ধারণা করা হচ্ছে আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসবে, সেক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আর বিরোধীদলের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য এতটাই কমে যাবে যে, ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ মনে করছে এতে দুই-দলীয় ব্যবস্থাটাই ধসে পড়বে, কারণ খালেদা জিয়ার কারাদন্ডের কারণে বিএনপির পতনই শুধু ত্বরান্বিত হবে। নয়াদিল্লী এতে অখুশি হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.