টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া প্রভাত ফ্রি এর একই দশা

তাজুল ইসলাম নয়ন॥ ভাষা শহীদদের সম্মান জানানো রেওয়াজে পরিণত ছিল প্রভাত ফ্রি। আমরা শৈশকের করেছি দেখেছি এবং শিখেছি। আজও সেই রীতি রয়েছে কিন্তু খোলসে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারী আসলেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি ভাষা ভিত্তিক এমনকি মুক্তিযোদ্ধ ভিত্তিক নাটক গান ও চেতনার মূলে আলোচনায়। প্রতিটি স্কুল কলেজ সেই আয়োজনে অনুঘটকের ভুমিকা পালন করত। গ্রামাঞ্চল, এবং শহরাঞ্চলের ভেদাভেদ তখন প্রায় থাকত না। মানুষ স্মরণ করতো সেইসব শহীদদের এবং তাদের আত্মত্যাগের এক গৌরব কাহিনীর। নতুনেরা জানতে পারতো ছালাম ছালাম হাজার সালাম। সালাম শহীদ স্মরণের কাহিনী। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি। tajul Islam kutubpalong
আমি শিখেছিলাম সেই ইতিহাস এবং ইতিহাস রচিত বীরদের স্মরণে শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা ও দিবসটির তাৎপর্য এবং নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার অসামান্য ও অনবদ্ধ ইচ্ছার এক স্পৃহা। আমি দেখেছিলাম এবং শিখেছিলাম সারা রাত জেগে কিভাবে ঐ শ্রদ্ধা ও সম্মান এবং ভালবাসা এমনকি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অনুষ্ঠান বা আয়োজনটি সফল করতে হয়। প্রভাব ফ্রির জন্য খালি পায়ে সুবেহ সাদেক থেকে শুরু করে সুর্য্য উদীয় হওয়ার সময় বা তার কিছুক্ষণ পর কিভাবে শহীদ মিনারে পুস্পাঙ্গ অর্পন করতে হয়। আর ঐ শহীদ মিনারটি নিজেদেরই তৈরী। কোথাও কোথাও আবার স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার তৈরী থাকে আর যেখানে নেই সেখানে বাশ দিয়ে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার তৈরী করে শ্রদ্ধ এবং ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতার কাজটুকু আন্তরিকভাবে সারা হতো।
এই কাজের পরে স্ব স্ব বাসা বাড়িতে ফিরে গিয়ে খাওয়া দাওয়া শেরে টিপ টপ বা ফিট ফাট হয়ে পুনরায় (স্কুল বা কলেজ) পুর্বনীর্ধারিত অনুষ্ঠানস্থলে ফিরে এসে বাকি কর্মসূচি উপভোগসহ ভবিষ্যত শিক্ষা এবং নিজেদের করনীয় বিষয় আত্ম্যস্থ করে বাড়ি ফিরে যাওয়া হতো। আজ আর এ কি দেখি যা পুর্বের দেখা ও শেখা থেকে কিছুটা হলেও ব্যক্তিক্রম। তবে যুগের চাহিদাই ও মিলিয়ে নিতে অন্তত একটু কষ্ট হচ্ছে; যখন দেখি জুতা পায়ে প্রভাত ফ্রি এবং শহীদ মিনারে পুস্পাজ্ঞ অর্পন করা হয়।
গত কয়েক বছর ধরেই এই বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিবারই একটু একটু লিখে মনকে হালকা করছি মাত্র। কিন্তু যখনই ২১ আসে আর ঐ পোগ্রামে যাই আবার কষ্টের সেই পুরোনো জায়গাটুকু জিবীত হয়ে কষ্টের মাত্রাটুকু বৃদ্ধি করে। কেউ কি আছেন আর ঐ কষ্টের মাত্রাটুকু কমিয়ে আগামী প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সঠিক ইতিহাস এর ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার (টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া) সকল জায়গায় একই দৃশ্য দৃশ্যমান। আমি নিজে পরখ করে দেখেছি এবং বিভিন্ন স্কুল শিক্ষক বা কলেজ শিক্ষকদেরকে বিনয়ের সঙ্গে বলেছিও বিষয়টি। কেউ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছেন আর কেউ বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে চালিয়ে দিয়েছেন। যেমন রাস্তা খড়-কুটো বা ক্ষতিকর জিনিস থাকতে পারে তাই খালিপায়ে না হেটে জুতা পায়ে হেটে যাচ্ছি ইত্যাদি ইত্যাদি।
সময় যখন দেখি ৯, ১০, ১১, ১২, ১, ২টা তখন বিনয়ের সঙ্গে বললে কেউ চেতনার পুনরুদ্ধারে আগামী দিনে কাজ করবে বলেছেন আর কেউ বলেছেন ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয় এবং এত সকালে কেউ আসতে চায় না। আর স্কুল ও কলেজ এইভাবেই পোগ্রাম সেট করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই জায়গাতে কে কাজ করবে? কার মাধ্যমে একটা শৃঙ্খলা ও নিয়মের মাধ্যমে জতীয় এই দিবসগুলো পরিপালিত হবে। বর্তমানে একটি নিয়মের আশু প্রয়োজন কারণ জাতি একই ¯্রােতে প্রবাহিত হবে এটাই যুগের দাবি। কারো মনগড়া নিয়ম জাতীয় দিবসগুলোর সঙ্গে মানানসই হয় না। আমাদের বিবেক ও জাতির অভিভাবকের কাজে তাই এবারও এক আরতি বা মিনতি এই জায়গাতে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে এবং বিনয়ের সঙ্গে দাবী রাখছি যেন আগামীতে আমরা এই ¯্রােতে প্রবাহিত হয়ে আরো গতিশীল এবং সুশৃঙ্খল জাতি হিসেবে আমাদের অহঙ্কার গুলিকে সমৃদ্ধ করে আগামীর জন্য রেখে যেতে পারি সেই ব্যবস্থা করণার্থে আমার এই ক্ষুদ্র মনের বিশাল প্রার্থনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.