তাজুল ইসলাম নয়ন্। সমগ্রা ঢাকা শহর যেন ধোলার শহরে পরিণত হয়ে পড়েছে। দিন দিন এর মাত্রা বেড়ে বিপদ সীমা অতিক্রম করে অসীমের দিকে ছুটছে। কিভাবে এবং কেন এই বিপদে আমরা পতিত হচ্ছি। কেউ কি দেখার নেই? পৃথীবির বিভিন্ন দেশে এই নৈরাজ্যমূলক নরক থেকে মুক্তি মিলেছে কিন্তু আমাদের দেশে কেন নয়? আমরাও মুক্তি চাই, পরিত্রাণ চাই, মুক্ত বায়ূতে উন্মুক্ত থেকে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। এই চাওয়ারও কি একটি সীমানা থাকবে নাকি তাও বিপদসীমা অতিক্রম করে অসীমের পথে ছুটবে? জানিনা কখন কে জাগ্রত হয়ে ঐ পৃথিবীকে সৌন্দয্যের মহিমায় মহিমান্তিত করবে; যার সাথে সাথে আমরা আমাদের বাংলার আকাশে ও বাতাসে ধূলা-বালি মুক্ত নিশ্বাস নেয়া ও ফেলার সুযোগ পাব। আগে ধুলা শুধুই অচমকা বানকুড়ালিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন এই ধূলা ও বালির কাছে বানকুড়ালি যেন পড়াজিত এবং পরাভুত।
আমরাই পারি পেরেছি এবং করে দেখিয়েছি। তাহলে এই ধুলার বেলায় কেন হবে না। তবে আমি আশাবাদি মানুষ আর স্বপ্ন দেখতেও প্রারঙ্গম। তাই বলছি হবে এবং এটা আমাদের দ্বারাই হবে। কিভাবে হবে সেটাই একটু অনুধাবনের বিষয়। কি কারণে হচ্ছে এই ধোলামিশ্রীত বায়ূর উপদ্রব এবং কারা সৃষ্টি করেছে এই ধোলায় ধূসর বায়ূ; কারাই বা এই প্রতিকারে নিয়োজিত?। এখানেই আমাদের একটু সচেতনতা বৃদ্ধি দরকার। আর এই সচেতনতা বৃদ্ধিতেই যদি সকলে মিলে প্রয়াসকে কাজে পরিণত করি তাহলে অচিরেই এই ধোলায় ধুসরতা এবং প্রাণঘাতি মরণব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যুক্তিযুক্ত হবে।
রাস্তা খুড়া, নুতন রাস্তা করা, বালি ভর্তি বা মাটি ভর্তি ট্রাক এই শহরে যত্রতত্র দাপিয়ে বেড়ানো। নতুন বাড়ি করা এবং ঐ বাড়ির ধোলামাটি ও এর সরঞ্জাম নিয়ে যত্রতত্র ফেলা এবং গুড়ে বেড়ানো। টাইলস কেটে মিহি ধোলা সৃষ্টি করা, পাথর ভেঙ্গে ও ইট ভেঙ্গে বিভিন্ন রঙ্গিন ধোলায় ধূসরতা বৃদ্ধি করা। আরো অনেক উপকরণ থেকে এই ধোলা নামক মরণব্যধির উৎপত্তি হয়। তাই এইখানেই আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করলে মুক্তি মিলবে এমনকি রক্ষা পাবে বহুল পরিচিত শব্দ পরিবেশ।
খুব কাছের দেশ এবং অতি ক্ষুদ্র দেশ সিঙ্গাপুরে এবং মালয়েশিয়ায় তথা উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশেতো বট্ইে এই ধোলা থেকে মুক্ত রয়েছে বাতাস ও পরিবেশ এবং মরণব্যাধি থেকে অনেক দুরে আছে সেইসকল দেশের মানুষ। কিভাবে শুধু সচেতনতা এবং আইন ও জনগণের প্রতি দায়ত্বদ্ধতা সহ পরিচ্ছন্ন কাজের ফলে। ধরা যাক আমাদের বাংলাদেশও ঐ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে: কিভাবে-সচেতনতা ও পরিচ্ছন্ন এমনকি জবাবদিহী কাজের মাধ্যমে।
যখন কোন ট্রাক বালি, মাটি, সুরকি, পাথর কণা, সিমেন্ট অথবা এই জাতিয় কিছু নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে তখন ভালভাবে ঢাকনায় আবৃক্ত করতে হবে এবং ট্রাকের চাকা ভালভাবে পরিস্কার করে রওয়ানা দিতে হবে। যাতে রাস্তায় ঐ চাকা থেকে কোনপ্রকার ধোলা-ময়লা স্পর্শ করতে না পারে।
যত্রতত্র বালি, সিমেন্ট, ইট, পাথরগুড়ো এবং মাটি ফেলে রাখা যাবে না। যেখানেই রাখা হবে সেখানেই ভালভাবে ঢেকে রাখতে হবে এবং কাজ করার সময় ধোলা আচ্ছন্ন না করে কাভার দিয়ে কাজ করলেই হবে।
রাস্ত-ঘাট পরিস্কার করার জন্য পানি ছিটিয়ে কাজ করতে হবে। ধোলার উৎসে উসকানী না দিয়ে বরং নিবৃত্ত করতে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। গর্ত বা খানাখন্দ দেখলে সেখানে দেখামাত্র নিজ উদ্যোগে প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হব। কোন ভাবেই অন্যের আশায় বসে থাকা যাবে না।
সরকারী দায়িত্ব বা বেসরকারী দায়িত্ব বলে অপেক্ষা করা যাবে না। সকল দায়িত্ব এক এবং অভিন্ন। সরকারও আমাদের এবং বেসরকারীও আমাদের। তাই আমরাই করব ভেবে দেখামাত্র কাজ শেষ করলেই হবে। তবে সরকারী বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে অসৌজন্যতা বা অসহযোগীতা বন্ধ করে ঐক্যের স্বরে কথা বলা ও কাজ করার মনোভাব পোষণ করে এগিয়ে যেতে হবে। কাউকে ছোট বা বা দোষারোপ করে নিজেকে জাহির করা যাবে না। আরো অনেক কাজ করা যায় যা উন্নত মেশিনারিজ ব্যবহার করেও পরিত্রানের ব্যবস্থা করা যায়।
তারপরও বলব এই ছোট এবং সম্ভব পদক্ষেপগুলো নিয়ে দেখি কতটুকু মুক্তি ও ভরসা পাওয়া যায়। পাশাপাশি তদারকির ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টিদিয়ে পরিচ্ছন্ন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়। আর আইন তৈরী এবং প্রয়োগ তো রয়েছেই। এইসকল দায়িত্বের জায়গাটুকুও স্ব্চছ করে জনবান্ধব হওয়া আমাদের আশু প্রয়োজন। আশার কথা হলো উন্নয়নের কাজ চললে এবং সেই কাজগুলো গুছালো ও পরিচ্ছন্নভাবে করলে এবং মানুষ ও পরিবেশের কথা মনে রাখলে নিজ থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলেই মুক্তি সম্ভব। ময়লা এবং ধ্বংসস্তুপ খোলাবস্থায় ফেলে রাখা যাবে না। যদি যত্রতত্র দেখা যায় তা ঢেকে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যাদের দ্বারা এগুলি হচ্ছে তাদেরকে জরিমানা বা খরচের আওতায় এনে কার্য সম্পাদন করতে হবে। তখনই সম্ভব আমাদের ধোলার কবল থেকে মুক্তি।
জ্ঞান ও চেতনা ফিরে আসুক। জাগ্রত হউক আমাদের উন্নত বিবেক এবং মননের বিকাশমান ইতিবাচক যাত্রা।