দুর্নীতি আর ষড়যন্ত্র একসূত্রে গাঁথা

Vector-Smart-Objectদুর্নীতি একটি শব্দ কিন্তু এই দুর্নীতিকে বিশ্লেষন করলে দেখা যায় বিষবাষ্পে ধ্বংস অভিসম্ভাবী হয়ে সকল ক্ষেত্রে বিরাজমান। এই দুর্নীতি যখন সমাজে, পরিবারে ও রাষ্ট্রে, সংগঠনে এমনকি ব্যক্তি জীবন আক্রমন করে তখন এর থেকে রেহাই বা মুক্তি মিলে না। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে মজবুত ভীতের কারণে রেহাই পাওয়া যায়; তবে এইক্ষেত্রে সংখ্যা খুবই নগন্য। একটি দুর্নীতিকে ঢাকার জন্য আরো অজ¯্র দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হয়। দুর্নীতি এখন সমাজের; পরিবারের এবং সংগঠনের কাঠামোকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। দুর্নীতির করাল ঘ্রাসে শেষ হয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, সাংগঠনিক অবস্থা এবং সর্বোপরি পরিবারের পরিবারিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।
বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দূর্নীতিকে ঢাকার জন্য বা চলমান রাখার জন্য মন্দ আত্মা বা খারাপ স্বত্মা কাজ করে এবং কাজ করায় ভালমানুষদের দিয়ে। কাজ করানোর পরে ঐ ভালমানুষগুলো দুর্নীতি বা খারাপ কাজের চালিকাশক্তিতে পরিণত হয় শুধু এর ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যে। সব সময় চিন্তা করে কিভাবে নিজের দুর্নীতিকে চাপা দেয়া যায় বা ঢেকে রেখে নিজেকে ভাল মানুষ হিসেবে জাহির করা যায়। আর এই চিন্তা থেকেই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন আটা শুরু হয়। বিশেষ করে পরিবারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা অব্যাহত না রাখতে পারলে পরিবার ভেঙ্গে বহুধা বিভক্ত হবে এবং শান্তি ও আনন্দ উদাও হয়ে শুন্যতা এবং হতাশা বিরাজ করে অশান্তিময় আবহ তৈরী করে রাখবে।
সংগঠন হলে সেই জায়গায় নের্তৃত্বের পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব হবে কিন্তু নিয়মের আবর্তে নের্তৃত্ব পরিবর্তন হবে ঠিকই কিন্তু দুর্নীতির কোন পরিবর্তন হবে না। কারন একে চলমান রাখার জন্যই পিছনে কাজ করে যাচ্ছে একদল ছদ্দনাম নিয়ে ভালমানুষ রুপী নেতা বা নের্তৃবৃন্দ। তবে তাদের তৈরী নতুন নের্তৃত্বের কাছ থেকে নতুন কিছু আশা করা যায় না কারন পুরানের ঐ চলমান ধারাবাহিকতা এবং নতুন করে আরো কৌশলী কোন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখাই এর মুল লক্ষ্য। যারা নতুন নের্তৃত্বে আসে তারা পুর্বের তাদেরই উত্তরসূরী, তাই পুর্বের কোন কিছু যাচাই বাছাই করার কোন প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি না করে বরং অনুমোদন দিয়ে নতুন করে এই ধারাবাহিকতার গতি সঞ্চার বা বৃদ্ধি করেন। তবে কেউ যদি ঐ অসচ্ছতার কোন দিক প্রকাশ করে যাতে আগামীতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা যায় সেই ক্ষেত্রে বাধে লঙ্কাকান্ড, দোষারোপ এবং জাদুময়ী মায়ার খেলা। আর এই খেলায় মদদ দেয়ার জন্য বেছে নেই কতিপয় স্বচ্ছ ইমেজের মানুষ এবং পরিচ্ছন্ন ব্যক্তির সহযোগীতা। সেই ক্ষেত্রে কোন সময় দুর্নীতি জয়ী হয় আবার কোন কোন ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা জয়ী হয়। তবে স্বচ্ছতা জয়ী হওয়ার পালে এখনোও জোড়েশোড়ে কোন খাওয়া লাগেনি। তবে ভবিষ্যতে হয়ত লাগার অপেক্ষায়রত রয়েছে।
নির্বাচন এবং সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে দলীয় প্রধাননের বা সংগঠনের প্রধানের সৎ ও সঠিক এবং কঠোর মনোভাবের প্রয়োগে কিছুটা পরিবর্তন সাধিত হয়। এতে বিবেধ এবং মনোমালিন্যের মাত্রা বৃদ্ধির আশংকা প্রকাশ পায়। সেই ক্ষেত্রে শক্তির উপর নির্ভর করে কোন দিকে পাল্লা ভারি হবে। তবে দুর্বল ক্ষমতা এবং দুর্বল কৌশল দুর্নীতিকে রুখতে অপারগ। কিন্তু সবল এবং কৌশলে কৌশলী হলে দুর্নীতি রোখা সম্ভব এবং নতুন আঙ্গিকে সাজানো এমনকি দৃষ্টান্তে পরিণত করা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমরা এখন দেখছি ও শিখছি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে। আরেকটি দৃষ্টান্ত হতে পারে আইন মন্ত্রী মহোদয় এবং ডাক ও টেলিযোগা মন্ত্রী মহোদয়ের কাছ থেকে। তবে এই শিক্ষায় আঁকড়ে ধরে থাকলে ভাল আর যদি ঢিলেঢালা ভাব নিয়ে অগ্রসর হয় তাহলে বিপদ সংকুল অবস্থায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ষড়যন্ত্র এবং দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে যদি কারো সর্বনাশ বা বিপদে ফেলার কাজ করা হয় বা কাজে সহায়তা করা হয় তাহলে এই বিষয়টি দৃষ্টিকটু ও নেতিবাচক। যা মানব সভ্যতার কোন মানদন্ডেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি ধর্মীয় আবেশেও স্বীকৃত নয়। সেই ক্ষেত্রে এই ধরনের চর্চা বন্ধ করা সময়ের দাবি। তবে যারা এইসকল কাজে লিপ্ত বা লিপ্ত হওয়ার অপেক্ষায়রত, তাদের জন্য বলছি সময় ও সুযোগ প্রায় শেষলগ্নে, তাই ফিরে আসুন নতুন এই সুন্দর ও আনন্দময় পরিবেশে, শান্তির সমান্তরাল বহমান বিশ্বে। নতুবা অন্ধকারই আপনার বা আপনাদের জায়গা হিসেবে গন্য হবে।
ইতিবাচক এবং নেতিবাচক ও ধর্মীয় আবেশে গ্রহণযোগ্য অথবা সর্বদিক থেকে গ্রহনযোগ্য কাজে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আগে থেকে প্রস্তুত হতে হয়। সেই প্রস্তুতির সময়টুকু হলো শৈশব বা শিশু বয়সের দিনগুলি। আর এই দিনগুলিতেই শিখানো হয় ভাল এবং মন্দ এই দুটো বিষয়। পাশাপাশি শিখতে হয় সৃষ্টিকর্তার আদেশ ও নিষেধ। এই শিক্ষাই আমাদের জীবনের ভীত বা ফাউন্ডেশন ঘরে দেয়। যার উপর পঁজি করেই বাকি জীবনের শিক্ষা এবং দীক্ষায় কাজে ব্যবহৃত হয়। এই শৈশবের শিক্ষার ক্ষেত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে, সে হলো মা এবং তারপরে বাবা। এই দুজনকেই অনুসরণ ও অনুকরণ করে আমাদের বেড়ে উঠা। তবে পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা, তারপরে পরিবেশ ও সমাজ ব্যবস্থা, ধর্মীয় ব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিক সংস্কৃতি। এই সবের মাঝেও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলে শৈশবের স্কুল। এই স্কুল এবং স্কুলের পরিবেশ ও শিক্ষকদের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ যা মা বাবার সঙ্গে তুলনাযোগ্য।
তাই মা-বাবাকে হতে হবে স্বচ্ছ এবং সততায় পূর্ণ। ইতিবাচক এবং ন¤্র ও সেবার দৃষ্টান্তে ভালবাসায় পূর্ণ। ক্ষমা এবং কথা ও কাজের সমন্বয়ে পারদর্শী। কারণ শিশুটি সব সময় মা ও বাবাকে অনুসরন করে এবং অনুকরণও করে। তাই মা বাবার জীবন ও দেখানো পথে শিখানোতেই তাদের জ্ঞানের যাত্রা এবং ভিত্তিমূল স্থাপিত হয়। সেইজন্যই সচেতন হউন এবং প্রস্তুতি নিন আগামীর জন্য। পরিবেশকে, সমাজ ব্যবস্থাকে পরখ করুন এবং দৃষ্টিসীমার মাঝে রেখে সন্তানদের বেড়ে উঠতে সুযোগ দিন। তাহলে আপনার সন্তান ঘড়ে উঠবে নীতি ও নৈতিকতা এবং আদর্শে পুর্ন হয়ে সততার দৃষ্টান্ত নিয়ে। সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন যেন অপসংস্কৃতির কোন ছোয়া সন্তানের উপর পড়তে না পারে। তেমনি ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রেও নজর দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। যেন উগ্রতা ও হীং¯্রতা ঘাস করে অধার্মিকতার ছোয়া লাগাতে না পারে। তাই এবার বলি স্কুল নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। সেই দিকটিতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে এবং সকল হিসেব নিকেশ মিলিয়ে সন্তানের শিক্ষার দায়িত্ব দিতে এবং নিতে হবে।
এই সচেতনাই পারে আমাদের জীবনের, সমাজের, পরিবেশের এবং রাষ্ট্রের ভীত মজবুত করতে। আগামীর সমৃদ্ধী, সুখী, আনন্দ এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ/ পরিবার/ দেশ দেখতে চাইলে ফাউন্ডেশনে কাজ করতে হবে। নতুন দিগন্তের পালে হাওয়া লাগাতে চাইলে বা দোলা দিতে চাইলেও ঐ একই কাজ করতে হবে। তাহলে মিলবে সুখ/ শান্তি/ আনন্দ এবং স্থিতিশীল নিশ্চয়তার সমারোহ। আসুন আমরা আমাদেরকে পরিবর্তন করি এবং নতুন করে সাজিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে চর্চা বা কাজে পরিণত হওয়ার চেষ্টায়রত থাকি। নতুবা স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। আমরা যেন কথা বেশী না বলি; আবার কথা বলা যেন বন্ধও না করি। কারণ চলমান সময়ে সকল অনৈতিকতা এবং নেতিবাচকতা যেন ইতিবাচকতায় এবং নৈতিকতায় পরিণত হয়েছে। এর কারণ হলো একটি মিথ্যা বার বার বলে গেলে একসময় ঐ মিথ্যাটিও সত্যে পরিণত হয়। তাই লক্ষ রাখতে হবে যেন, আমরা কথা বলি এবং কাজ ও কথার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে দৃষ্টান্তের আলোকে পথ চলি। তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্র এবং অনুসরণকারী / অনুকরণকারীরা সঠিক পথের দিশা পেয়ে সামনে অগ্রসর হতে পারবে। সকল নেতিবাচকতা এবং মিথ্যার এমনকি ষড়যন্ত্রের ও দুর্নীতির অভিষাপ বা করাল ঘ্রাস থেকে মুক্তি মিলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.