ইসরাত জাহান লাকী॥ মানুষ মানুষের জন্য; জীবন জীবনের জন্য। এই কথাগুলো এখন রূপ, লাবণ্য এবং রস ও গুণ হারিয়ে বৈকল্যে পরিণত হয়েছে। আমরা কেমন যেন দিনদিন বুনো হয়ে যাচ্ছি। মানুষ মানুষের কষ্ট দেখে পৈশাচিক আনন্দ পায়, বুনো উল্লাস করে। একজন নারীকে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে তাতে তাদের আনন্দের শেষ নেই। মেয়েটির বুকভাঙ্গা কান্নাতেও তাদের মন গলেনি বরং আনন্দ আর কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এতবড় একটা ঘটনা ঘটছে কোনো নারীকে নারীর প্রতি ব্যথিত হতে দেখিনি, কোনো প্রতিবাদ দেখিনি, দেখিছি বুনো উল্লাস। অথচ সেখানে সবাই ছিল উচ্চ শিক্ষিত। এটাই কি সমাজে মানুষের প্রতি মানুষের সম্মান? শ্রদ্ধা? যদি তাই হয় তাহলে সেই সমাজেকে আমরা ঘৃনা করি। এশা কি শুধুই ছাত্রলীগের? এশা কি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়? সেও তো নিজের মেধার পরিচয় দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে ঢুকেছে। সেও তো আপনাদের মত মানুষ; তারও আপনাদের মত সুখ-দুঃখ অনুভূতি আছে, ব্যক্তিগত জীবন আছে, পরিবার পরিজন আছে।
একজন এশা এমনি এমনি তৈরি হয় না। আপনারা যখন নিজের ভবিষ্যত গড়তে ব্যস্ত তখন দেশে জঙ্গি হামলা হয়। আপনারা নিজের স্বার্থটা বুঝে নিরাপদে চলে যান আর এই এশারাই প্রতিবাদ করতে করতে ক্লাসরুম থেকে তপ্ত রাস্তায় নেমে আসে। কেনো আসে জানেন? যাতে আপনাদের পড়ায় কোনো বিঘœ না ঘটে; যাতে আপনাদের ভবিষ্যতটা নিরাপদ হয়; যাতে আপনারা একটু ভালো থাকেন। জীবন হাতে নিয়ে সে আপনাদের জন্যই বিদ্রোহী হয়, বিক্ষোভ করে।
আমি জানি, আমরা যত কিছুই করি না কেনো এশার প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে তা কোনো ভাবেই পূরণ হবে না। এশার যে পরিচয় সেটা তার নিজের যোগ্যতায় অর্জন করেছে। রাজপথের প্রচন্ড রোদে যখন সবার মাথা ধরে আসে তখন আমাদের মিছিলে এশাও থাকে। যে মিছিল হতে পারে আমাদের জীবনের শেষ মিছিল সেই মিছিলের অগ্রভাগে থাকে এশা। সেও গাঢ় কণ্ঠে স্লোগান ধরে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’।
এশা, সান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই, শুধু জেনো রেখো তুমি যত আঘাত পেয়েছ তারচেয়ে দ্বিগুণ আঘাত আমাদের গায়ে লেগেছে। তোমার প্রতি যে তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার জন্য আমরা ব্যথিত। মাঝে মাঝে সময় মানুষকে তার অনুকূলে চলতে বাধ্য করে। তবে মনে রেখো, আমরা জেগে আছি ভয় নেই তোমার। তুমি আমাদের বোন, আমাদের মিছিলের মানুষ। তোমার সম্মান ফিরে আসবে আরো বিশাল কোন দায়িত্বের মাধ্যমে। এগিয়ে যাও এবং আমাদের ভালবাসা ও স্প্রীট তোমার সঙ্গে ছায়া হয়ে থাকবে।
খুবই অবাক লাগে একটি বিষয়: তা হলো বহিস্কার এবং ছাত্রত্ব বালিত। একটি সিদ্ধান্ত নিতে যেমন সময় লাগে, আলোচনা লাগে এবং প্রমান লাগে, বিশ্লেষণ লাগে; তারপরে সময় নিয়ে পরামর্শ নিয়ে ঘোষণা করা হয় আমলনামায় লেখা ফল বা রায়। তবে এশার ক্ষেত্রে কোনটিই করা হয়নি। কেন জানেন? শুধুই অজ্ঞানতা এবং অন্ধকারের ঘোরে বসবাসের কারণে। ছাত্রলীগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তও মিলে যাবে তা কখনো কল্পনা করা যায়নি। কারণ এটা সামরিক শাসন নয়। এটা গনতন্তের শাসন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে এত নিচে নেমে গিয়েছে তা বুঝতে পারি নি। শুধু এক এশাই প্রমান করে দিয়ে আমাদেরকে আরো অনেক বদলাতে হবে। পরিবর্তন আনতে হবে জ্ঞানের চর্চায়। যাক বেশী কিছু লিখে আর কষ্ট পেতে চায় না। কারন উপরে থুথু ফেললে নিজের গায়েই পড়ে। তারপরও বলব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সময়, জ্ঞান এবং বিচক্ষণতা ব্যবহার আবশ্যক।
এশা একা নয় বরং এশার সঙ্গে পুরো দেশ; তাই সততা এবং আন্তরিকতা ও নিস্বার্থ ভালবাসার কাছে পরাজিত হয়েছে পাকি শক্তির আছরে আবৃত আমাদের ছাত্রলীগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়। ফিরিয়ে দিয়েছে এশার ছাত্রত্ব এবং দলীয় পদ। সবই অর্জন এবং গর্জন। কিন্তু ফিরিয়ে দিতে পারেনি সেই অসম্মানীত হওয়ার মুহুর্ত্ব। তাই বোন তোর সঙ্গে রয়েছে মানবতার মা এবং তাই আদর্শের সৈন্যসকলসহ দেশবাসী। এগিয়ে যাও সত্য ও ন্যায়ে পূর্ণ হয়ে। আগামীর দায়িত্ব পালন করো সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ে। এই কামনাই রইল তোমার জন্য।