রাইসলাম॥ উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে আইনের খসড়া প্রায় পস্তুুত বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, কিছুদিনের মধ্যেই খসড়াটি পাসের জন্য মন্ত্রিপরিষদে তোলা হবে। ২০১৩ সালে অধস্তন আদালতে তালিকাভুক্ত আইনজীবীদের মধ্যে গত শনিবার সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বিচারক নিয়োগে যোগ্যতা নির্ধারণ করে আইন প্রণয়নে বিলম্বে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি অসন্তোষ প্রকাশের চারদিন পর অঅইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য এলো। রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আয়োজিত অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “আমি আপনাদের বলতে পারি, অনেকেই এখানে দাঁড়িয়ে বলেছেন, অনেকেই দাবি করেছেন যে, বিজ্ঞ বিচারপতি বানানোর জন্য একটা আইন প্রয়োজন। আমি সম্পূর্ণ একমত এই ব্যপারে এবং এ কথাও বলতে চাই যে, এই আইন করার শুধু প্রস্তুতি নয়, এই আইনটার ড্রাফট তৈরি প্রায় হয়ে গেছে। আমি মনে করি যে, কিছু দিনের মধ্যেই এটি কেবিনেটে অ্যাপ্রুভালের জন্য নিয়ে যেতে পারব।” তবে আইনের মাধ্যমেই ভালো বিচারপতি নিয়োগ হবে, তা নিয়ে সন্দিহান আইনমন্ত্রী।
“আমি বলব, আইন দিয়েই না, পেশায় কাজ করে যারা অত্যন্ত উজ্জ্বল নক্ষত্র তারা কিন্তু বিচারপতি হতে পারেন না। আমি বলতে পারি প্র্যাকটিসিং আইনজীবী যারা বিচারপতি হয়েছেন তাদের সংখ্যা অত্যস্ত কম পাকিস্তান আমল থেকেই। “এর কারণ হচ্ছে আইনাঙ্গনে আইন পেশাটা করার মধ্যে একটা মজা আছে। আর বিচরপতি হওয়ার মাঝে আরেকটা মজা আছে। যারা আইন পেশার মজা পেয়ে গেছেন তারা আর বেঞ্চে যেতে চান না। তবে ইনশাল্লাহ এই দাবি (আইন প্রণয়ন) আমরা পূরণ করব। নতুন একটা আইনের মাধ্যমে সবচেয়ে ভাল আইনজীবী যেন বিচারপতি হতে পারেন।”
আইনমন্ত্রী বার কাউন্সিলের আইনজীবী কল্যাণ তহবিলে বড় অনুদানের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি বর্তমান বার কাউন্সিল ভবন ভেঙে পঞ্চাশ তলা ভবন করার পরিকল্পনার কথা জানান। অনুষ্ঠানে সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীদের শপথ পাঠ করান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। পরে কয়কজনের হাতে সনদও তুলে দেন তিনি।
সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, “বিচার প্রশাসনে আইনজীবী এবং বিচারক একে অন্যের পরিপূরক। আইনি সুরক্ষায় আইনজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আদালতে তারা কেবল একটি মামলায় কোনো পক্ষের আইনি প্রতিনিধিত্বই করে না, আইনজীবীরা আদালতের কর্মকর্তা হিসেবে বিচারকাজেও সহযোগিতা করে থাকেন। মানবাধিকার এবং দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় আইনজীবীদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।” নবীন আইনজীবীদের আইন পেশায় যতœশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “বার এবং বেঞ্চ একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাদের পরস্পরকে হাতে হাত রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। আইনজীবী এবং বিচারকরা একই আইনি দক্ষতা সম্পন্ন হলেও তাদের ভূমিকা আলাদা। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে দুই পক্ষের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক বা লেনদেনের সম্পর্ক নৈতিক ভিত্তিকে ধ্বংস করে। ফলে বার এবং বেঞ্চের নৈতিক ভিত্তিকে ধ্বংসের হাত থেকে আমাদের সুরক্ষা দিতে হবে। সর্বোপরি বেঞ্চ এবং বারের মধ্যে যুক্তিসঙ্গ, আনুগত্যপূর্ণ এবং সুষম সম্পর্কের চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।”
বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান, সদস্য ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য ও ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম, সদস্য জেড আই খান পান্না।
অনুষ্ঠানে বার কাউন্সিলের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক এম মাহবুব উদ্দিন খোকন মঞ্চে থাকলেও তিনি বক্তব্য দেননি। অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের হোই কোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। বার কাউন্সিলের সদস্য আইনজীবী নজিবুল্লাহ হিরু অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল অধস্তন আদালতের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার অনুষ্ঠানে সনদ দেওয়া হয়।