বিএম হাবিবুল্লাহ॥ নদী মার্তৃক বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস নির্ভর, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংযোগ সড়কের, আমাদের প্রিয় আলোকিত চকোরিয়া-মাতামুহুরী সেতু ৬ লেনেই নির্মিত হওয়ার আশু শুভ সংবাদ শোনা যাচ্ছে। চলমান বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার সপ্তাহ খানেকের ব্যাবধানেই শুরু হচ্ছে চকরিয়ায় দ্বিতীয় মাতামুহুরী সেতুর আনুষ্ঠানিক নির্মাণকাজ। ফলে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে চকরিয়া সহ গোটা কক্সবাজার জেলাবাসীর। ইতিমধ্যেই ভূমি অধিগ্রহন সহ এ সংক্রান্ত আর্থিক কার্যাদীও সম্পন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সুত্র মতে, ভুমি অধিগ্রহনের একটি ফান্ডও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চলে এসছে।
এ সঙ্গে মহাসড়কের পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতু, চন্দনাইশের বরগুনি সেতু ও দোহাজারীর সাংগু সেতুও ছয় লেন করতে নকশা চূড়ান্ত করা হলেও ক্রস বর্ডার কানেকটিং প্রজেক্ট এর আওতায় নিতে তা ৬ লেনেই করা হচ্ছে সব সেতুই। কাজ শুরু করতে মাতামুহুরী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ২০ কোটি টাকার চেক কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ইতিমধ্যে জমা দিয়েছেন। অপরদিকে মহাসড়কের বাকি তিন সেতুর জন্য ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একই শাখায় চেক জমা দেওয়া হয়েছে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। তিনি জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতু নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে শিগগির। এ জন্য ক’দিন আগে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ২০ কোটি টাকার চেক জমা হয়েছে বলে তিনি সত্যতা নিশ্চিত করেন। কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বহুল প্রতীক্ষিত চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুটি ইতোপূর্বে চার লেনে নতুন করে নির্মাণের জন্য সকল প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হলেও মাতামুহুরী সেতুটি ক্রস বর্ডার কানেকটিং প্রজেক্ট এর আওতায় নেওয়ার জন্যই তা চার লেনের পরিবর্তে এখন ছয় লেনের নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, মাতামুহুরী সেতুর মতোই বাকি তিন সেতুও ছয় লেন করা হচ্ছে। সরকার কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যেমন-মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, পেকুয়া উজানটিয়া বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি থেকে চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক নির্মাণ সহ হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ক্রস বর্ডার কানেকটিং প্রজেক্ট এর আওতায় নেওয়া হয়েছে মাতামুহুরী সহ মহাসড়কের চার সেতুও। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি জাইকা’র অর্থায়নে সরকারের সেতু বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৩০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুগুলোর নির্মাণ বাজ করছে। সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার সৈয়দা তানজিমা সুলতানা বলেন-এ চার সেতু নির্মাণের জন্য মার্চে দরপত্র খোলা হয়। পরে দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার কাজ চলে। তিনি জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চার সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করতে অতিসম্প্রতি ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ প্রাথমিক পর্যায়ের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ছাড় করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের এ অর্থ চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় পাঠিয়েও দেয়া হয়েছে।তিনি আরো জানান, এসব সেতুর দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত করার পাশাপাশি ঠিকাদার নিয়োগেরও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে ঠিকাদার নিয়োগের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। তিনি আশা করেন, চলতি বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারবে। সেতু ও সওজ সূত্র জানায়, বিগত দু’ বছর ধরে চারটি সেতুর মাটি পরীক্ষা, স্থান নির্বাচন ও নকশা চূড়ান্ত করা হয়। সেতু নির্মাণে জাইকার অর্থায়নের বিষয়টিও পুরোপুরি নিশ্চিত। তিনি বলেন-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চার সেতুর মধ্যে মাতামুহুরী সেতুর অবস্থা খুবই নাজুক। তাই মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণ কাজ আগেই শুরু হবে। এ সব সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হতে তিন বছর সময় লাগবে বলে সুত্র জানায়। মাতামুহুরী নদীর উপর পাকিস্তান আমলে নির্মিত সেতুটি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে অন্তত তিন বছর। সেতুর উপরে-নিচে জোড়াতালি দিয়ে ধস ঠেকানোর কাজ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলতে গিয়ে একাধিক দুর্ঘটনায় অনেক প্রাণহানিও হয়েছে এ যাবত। এ নিয়ে শীর্ষ গণমাধ্যমে অনেক সংবাদও প্রকাশ পেয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে মাতামুহুরী সেতুর ভেঙে পড়া অংশের মেরামত করে দিয়ে ছোটখাট একটি সেতুও নির্মাণ করা যেতো। রেট্রোফিটিং ডিজাইন অনুযায়ী সেতুর নিচে দুর্বল পিলার গুলো মেরামত, স্টিল পাইপ বসানো এবং সেতুর উপরের ভাঙা অংশের মেরামত করে স্ল্যাব দিলেও তা দীর্ঘস্থায়ী নয়। চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলম বিএ অনার্স এমএ বলেন, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প সহ বড় বড় মেগা প্রকল্পের সুবিধার্থে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুুহুরী সেতুটি ছয় লেনের নির্মিত হবে এবং সেতুটির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে মাতারবাড়ি থেকে চকরিয়া ফাঁসিয়াখালী পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারের ছয় লেনের সড়কটিও। যা চকরিয়া-কক্সবাজারবাসীর জন্য আশার আলো যা শিগগির দৃশ্যমান হবে। চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন-পর্যটন খাতের ব্যবসার প্রায় পুরোটাই নির্ভরশীল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া হয়ে কক্সবাজার। মাতামুহুরী সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি।