প্রশান্তি ডেক্স॥ গত ২৪/০৭/২০১৮ইং রোজ মঙ্গলবার আইডিবি ভবন সম্মেলন কক্ষে কমিশনারেট ঢাকা এর উদ্যোগে এক সচেতনতামুলক মত বিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় ঢাকার সকল কাষ্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারগণ উপস্থিত ছিলেন। তাদের আমন্ত্রণে সারা দিয়ে উক্ত সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন ঢাকার সকল নামী-দামী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলদ্বয়ের কর্ণদ্বার এবং প্রতিনিধিবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন কিছু সাংবাদিকবৃন্ধও বটে। মত বিনিময় সভার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ভ্যাট আদায় করা। এই আলোচনাতে আবার প্রচ্ছন্ন খুমকীও ছিল; পাশাপাশি আইনি পথে মোকাবিলার রাস্তাও দেখানো হল।
ভ্যাট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; এই ভ্যাট এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের এমনকি সরকার ও উন্নয়ন পরিকল্পনার রসদ যুগিয়ে থাকে। নাগরিক হিসেবে ভ্যাট দেয়ার অধিকার রয়েছে এবং সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী হিসেবে ভ্যাট আদায় করারও অধিকার রয়েছে। তবে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় চিন্তায় এনে বিন¤্র পদক্ষেপে এগিয়ে গেলে রাষ্ট্র তথা নাগরিক উভয়েই সম্মানিত বোধ করে।
এখানে মতবিনিময় কালে প্রকারান্তরে সুন্দর যুক্তি এমনকি সাংবিধানিক ব্যাখ্যাও উঠে আসে। যার জন্য ভ্যাট আদায়ে জটিলতা বৃদ্ধি পায় এবং না দেয়ায়ও জটিলতা জড়িয়ে থাকে। কথা হলো ভ্যাট কাদের জন্য এবং কে ভ্যাট দেবে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলি কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই অবস্থিত এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের সন্তানরাই পড়া লেখা করে। সুতরাং শিক্ষার ক্ষেত্রে একই দেশে দুই ধরনের আইন থাকতে পারে না। যদি ভ্যাট আরোপিত হয় তাহলে সমস্ত শিক্ষা ব্যাবস্থায়ই আরোপিত হবে। এখানে সংবিধানকে পাশ কাটানো বা দ্বিখন্ডিত বা প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। সাংাবিধানিক অধিকার এবং সংবিধানকে রক্ষা করা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব।
দ্বিতীয়ত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো হলো মাধ্যম। তারা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে ভ্যাট অফিসে জমা দিবে মাত্র। কিন্তু তারা যদি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ই না করে থাকেন তাহলে ভ্যাট এর প্রশ্ন আসে কোথেকে এবং ভ্যাটই কোথায়? কেন আপনরা বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছেন ভ্যাট দেয়ার জন্য। যেখানে রাষ্ট্রের আইনানুযায়ী মহামান্য আদালত কর্তৃক রায় ঘোষিত হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রের গার্ডিয়ান থেকে ভ্যাট আদায় করতে পারবে না। সেহেতু স্কুল কর্তৃপক্ষ ভ্যাট দিতে বাধ্য নয়। অপরদিকে আদালত এই আদেশ দিতে পারেন না যে, ভ্যাট আদায় না করে ভ্যাট পরিশোধ করা। যা ভ্যাট আইনের পরিপন্থি এবং ন্যায় বিচারেরও পরিপন্থি।
এমতাবস্থায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দিয়ে বিচার ব্যবস্থার সমাপ্তী না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাট আদায় হতে বিরত থাকাই বাঞ্চনীয়। তবে তরিঘরি করে জোর পূর্বক কোনকিছুই আজকাল ভাল ঠেকে না। হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার যে ঘোষণা দিয়েছে এবং ছাত্র-ছাত্রীরাও যে ঐক্যবদ্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, এখান থেকে বের হতে হলে সংবিধান এবং সমস্ত শিক্ষা ব্যবস্থার এক রূপ ও আইনি কাঠামোয় অগ্রসর হওয়া আশু বাঞ্চনিয়। নতুবা আবারও কোন নতুন এক আন্দোলন, অবরোধ এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়ে দেশের এবং সরকারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো এবং এর আওতাধীন ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকগুলোতো বাংলাদেশেরই নাগরিক। এই নাগরিক অধিকার আদায় করার যথেষ্ট সুযোগ সংবিধান দিয়েছে। আগামী দিনের ভোটের বাজারেও এদের কদর কমকি। তাই সময় ও সুযোগ কাজে লাগিয়ে এর একটি যৌক্তিক সমাধান আশু দৃশ্যমান হওয়া উচিত। সকল দিকই যে প্রধানমন্ত্রী সমাধান করবেন তা কেন? আপনারা নিজেরাতো সমাধান করে একটি ঐক্যবদ্ধ এবং সুদুরপ্রসারী দৃশ্যমান শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রদর্শন করতে পারেন।
এই দেশের মানুষ, প্রতিষ্ঠান এবং ভুক্তভোগীদেরকে ভ্যাট দিতে উৎসাহিত করুন; প্রতিবন্ধকতা নয়। প্রতিবন্ধকতায় কোটি কোটি টাকা বাতাসে উড়ে যায়, পকেট ভারি হয় কর্তাবাবুদের; কিন্তু সরকার বঞ্চিত হয় রাজস্ব থেকে। তাই সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করবেন না। উভয়ের সমন্বিত প্রচেষ্টায় দেশ এগিয়ে যাবে।