এ কীসের আলামত? কিছুই তো বুঝতে পারছি না!

কাদের সিদ্দিকী॥ নির্বাচনের বছর। যদি নির্বাচন ডিসেম্বরে হয় তাহলে বলতে হবে একেবারেই ঘাড়ের ওপর চেপে বসেছে। জনমনে শঙ্কা, আদৌ নির্বাচন হবে তো? সেটা কি ভালো নির্বাচন হবে? কারও মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা নেই, আত্মবিশ্বাস নেই। সবাই কেমন যেন অস্বস্তিতে ভুগছে। শুধু রাস্তার না-জানাদের কথা নয়, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও দেখা হলে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কাদের ভাই! কী হচ্ছে, কী হবে?’ বিএনপি বা অন্য দলের নেতা-কর্মীর তো কথাই নেই। ২০১৪ সালের শেষের দিকে বিএনপি যখন লাগাতার অবরোধ-হরতাল দিয়েছিল এক পর্যায়ে ২০১৫-এর ২৮ জানুয়ারি ঘর থেকে বেরিয়ে ফুটপাথে জায়গা নিয়েছিলাম। বলেছিলাম, ‘বেগম খালেদা জিয়া হরতাল-অবরোধ বন্ধ করুন/জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশ বাঁচান, আলোচনায় বসুন।’ ৩০৮ দিন ঝড়-বৃষ্টি-তুফানে সে যে কী কষ্ট করেছি। ত্রিশালের আছিম ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সে যে কী তুফানে পড়েছিলাম বলার মতো নয়। তবু ৩০৮ দিন ঘরের বাইরে ছিলাম।kader siddiki a kisher alamot
কাউকে বোঝাতে পারিনি। কিন্তু এখন রাস্তাঘাটে যেখানেই যাই সেখানেই দেখি নেতা-নেত্রীরা, বিএনপি-আওয়ামী লীগ না বুঝলেও সাধারণ মানুষ বুঝেছিল। এখন অনেকের মধ্যে সে সময় অবস্থানে থাকার কথাবার্তা শুনি। কেউ এক রাত ছিল, কেউ দুই রাত। কত মানুষ কত কথা বলে। সেই কর্মসূচিতে গিয়েছিলাম সোনারগাঁয়। রাত কাটিয়ে ছিলাম সোনারগাঁ জি আর (জিঙ্গাবাসী, আর— রামচন্দ্র পোদ্দার) ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে। বেশ ভালো লেগেছিল। পানাম সিটি, জাদুঘর, গোয়ালদী শাহি মসজিদ আরও যা দেখার দেখে কটিয়াদী গিয়েছিলাম। যেদিন সোনারগাঁ ত্যাগ করি সেদিন সকালে দেখতে শুনতে খুবই সুন্দর চকচকে নতুন হোন্ডায় চড়ে রাশতা নিয়ে এসেছিল। চিনি না, জানি না, কোনো দিন দেখিনি। কিন্তু সে সকালের রাশতা নিয়ে এসেছিল।
আরও দু-চার জন নাশতা খাওয়াতে তৎপর ছিল। ‘মা রান্না করে দিয়েছে’ কথাটা শুনে বেশ উৎসাহী হয়েছিলাম। রুটি-তরকারি-ভাজি-ডাল-খিচুড়ি আরও কী কী যেন ছিল। ছেলেটা ধনী না গরিব, জানা ছিল না। তবে কাপড়-চোপড় বেশ ভালো ছিল। মোটরসাইকেল ছিল আনকোরা নতুন। টিফিন ক্যারিয়ার ও হট ক্যারিয়ারগুলোও ছিল অভিজাত। হঠাৎই জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বিয়ে করেছ? বলেছিল, ‘না’। বলেছিলাম, বিয়েতে খবর দিলে আমি আসব। সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেছে। কোনো দিন কোনো খবর ছিল না। সেদিন সোনারগাঁর গোয়ালদীর আবু সালেহ মুসা এসে হাজির। ২৭ জুলাই তার বউভাত। বিয়ে হয়েছে চার-পাঁচ মাস।
ভাইয়েরা দেশের বাইরে থাকে বলে বউভাত হয়নি। ছেলেটিকে প্রথম বলেছিলাম, আমি যাব না, যেতে পারব না। তোমার বিয়েতে যেতে চেয়েছিলাম। এর মধ্যে এক বা দুবারও যদি যোগাযোগ হতো নিশ্চয়ই যেতাম। মুসা তার বন্ধুদের নিয়ে এসেছিল। তারা মানতে চাচ্ছিল না। তবু অনেক বলেকয়ে বিদায় করেছিলাম। মনটা উশখুশ করছিল। অনেক কাজ ছিল। ২৬ জুলাই একবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল। কত কথা, দেশের কথা-বিদেশের কথা, ভালোমন্দ অনেক কথা। সেতুমন্ত্রীকে ভালোবাসি, স্নেহ করি। তার স্ত্রী আমাকে অসম্ভব সম্মান করেন, ভালোবাসেন। সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর প্রচারমাধ্যমে কেন যে নাড়া পড়েছিল বুঝতে পারিনি। তিনি তো আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে হাসপাতালেও দেখতে গেছেন। কতবার কত সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে। কিন্তু এবার কি
তেমন হয়েছে বুঝতে পারিনি। সবাই একেবারে অস্থির। নিশ্চয়ই সারা জীবন রাজনীতি করি, সেতুমন্ত্রীও একজন রাজনীতিবিদ। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক। খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার সঙ্গে কথা হলে কিছু তো রাজনৈতিক কথা হবেই। দেশের ভালোমন্দ নিয়ে কথা হবে সেটাই স্বাভাবিক। অনেক কথা হয়েছে। সাংবাদিক বন্ধুদের বলেছি, মন্তব্য নেই। আসলেই যে কথা হয়েছে তা বলতে গেলে অনেক কথা। সময়মতো নিশ্চয়ই বলব। ছোট্ট দেশ কত কথা হয়। ২৬ তারিখ একটু ব্যস্ত থাকলেও ২৭ তারিখ কোনো ব্যস্ততা ছিল না। রিফাতুল ইসলাম দীপের বিয়েতে যাওয়ার কথা সে ছিল রাত ৯টার পর। তাই দিনে তেমন কাজ ছিল না।
একসময় ঠিক করেছিলাম সোনারগাঁ যাব। পরে মুসার বউভাতে যাব বলে জানিয়েছিলাম। সেইমতো আমাদের দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নারায়ণগঞ্জের সভাপতি দেলোয়ারকে তৈরি হতে এবং সাইনবোডের কাছে স্পিডবোটের ব্যবসায়ী প্রিয় আবুল মিয়াকে তৈরি থাকতে বলেছিলাম। বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম ১০টায়।
আবুল মিয়ার ওখান থেকে ১১টা ৩০ মিনিটে কাঁচপুর সেতু থেকে নেমে গাড়িতে গ্যাস নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম দেড়-পৌনে দুই ঘণ্টা। কত আর হবে বড়জোড় ছয় কিমি সোনারগাঁ জাদুঘরের রাস্তা। মূল রাস্তা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই মুসাদের বাড়ি। অসম্ভব যতœ নিয়েছে। বড় বড় রোস্ট, খাসি-গরু-মুরগি কোনো কিছুর অভাব ছিল না। আমি মাংস খাই না। তাই তারা মাছের ব্যবস্থা করেছিল। খাওয়া-দাওয়ার চেয়ে আন্তরিকতা ছিল বেশি। বউভাতের প্যান্ডেল থেকে একটু দূরে বাড়ির ভিতরে খাওয়ানো হয়েছে।
বেশ বড়সড় বাড়ি। বাবা-ভাই, আত্মীয়স্বজন প্রায় সবার সঙ্গে দেখা হয়েছে। দেড়-দুইশ ছাত্র-যুবক ছবি তোলার জন্য ভিনভিন করছিল। সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান খুবই স্বতঃস্ফূর্ত মানুষ। মেঘনাঘাটের আশপাশের যাই বলা হচ্ছিল ওটা তাদের জমিতে, পুল তাদের জমিতে, হামদর্দ ইউনিভার্সিটি তাদের জমিতে আরও অনেক কিছু বলছিলেন। বিএনপি করেন। ২৭-২৮ মাস সাসপেন্ড করে রাখা হয়েছিল তাও বললেন। ছোট-বড় সব মিলিয়ে আড়াই-তিনশ মানুষের মধ্যে একজনও সরকারি সমর্থক পেলাম না। সব বিএনপি। মনটা খুঁতখুঁত করছিল। তবে কি কোনো বিএনপি সমর্থকের বিয়ের দাওয়াতে আওয়ামী লীগ বা সরকারি দলের কেউ যায় না? যাকে নিয়ে বউভাত তখনো তার কোনো খবর নেই। সে ছিল বিউটি পারলারে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যখন গাড়িতে উঠতে যাব তখন বউ সেজেগুজে আসে। মুসার বউ আমাকে চিনত না। যাত্রাবাড়ীর মেয়ে। পত্রপত্রিকা, রেডিও-টিভির সঙ্গে কতটা পরিচিত তা সেই জানে। মুসা যখন বার বার পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল মেয়েটির তেমন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ছিল না। তবে বলে এসেছি, আমাদের বাসায় এসো। মনে হয় আসবে। সোনারগাঁ মুসার বউভাতে খুবই ভালো লেগেছে। আল্লাহ ওদের শান্তিময় জীবন দান করুন।
রাতে ছিল মিরপুর ফ্যামিলি গ্র্যান্ড হলে দীপের বিয়ের অনুষ্ঠান। অনেকের ভুল হতে পারে এই দীপ আমার ঔরসজাত দীপ নয়। এই দীপ কিশোরগঞ্জের রিফাতুল ইসলাম দীপ। যেহেতু আমার ছেলে দীপ, সেও দীপ। সেহেতু আমায় বাবা বলে ডাকে। আমাদের ভালো গুণ না থাকুক, খারাপ গুণ অনেক আছে। ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে মাঝে সাজে আমার স্ত্রী বলেন, ‘দীপের বাবার ছেলেমেয়ের শেষ নেই। ওঁর যে কত মেয়ে, কত ছেলে গুনতি করে শেষ করা যাবে না।’ কথাটা একেবারে মিথ্যা নয়। রিফাতুল ইসলাম দীপের সঙ্গে পরিচয় মারাত্মক ঘটনার মধ্য দিয়ে। ২০০২-০৩ সালের কথা। করিমগঞ্জে এক সভা ছিল।
ঢাকা থেকে দলবল নিয়ে কিশোরগঞ্জের শহীদি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে আজিজ অ্যাডভোকেটের বাড়িতে খাবার খেয়ে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে করিমগঞ্জের পথ ধরেছিলাম। কিশোরগঞ্জ থেকে দু-তিন কিলোমিটার পেরোতেই বৌলাই মসজিদের পাশে ছাত্রলীগের কিছু ছেলে রাস্তা অবরোধ করেছিল। তারা করিমগঞ্জে মিটিং করতে দেবে না। কত হবে, ২০-২৫টা ছেলে ‘করিমগঞ্জের মাটি মিজানুল হকের ঘাঁটি’ স্লোগান দিয়ে রাস্তা অবরোধ করেছিল। পুলিশ ছিল, ইউএনও ছিলেন। তারা একবারের জন্যও রাস্তা পরিষ্কার করার চেষ্টা করেননি। ভাটি অঞ্চলের একমাত্র রাস্তা। হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত। দুপুর থেকে বন্ধ করে রেখেছিল। আমরা বসে ছিলাম রাস্তার পাশে। আসরের নামাজ আদায় করি বৌলাই মসজিদে। মনে হয় শেষ পর্যন্ত মিজানুল হকের রাস্তা অবরোধকারী ১০-১৫ জনে নেমে এসেছিল।
আমরা বসে ছিলাম। অবরোধকারীদের মধ্য থেকেও দুচার জন এসে কথাবার্তা বলছিল। কেউ কেউ এও বলছিল, ‘স্যার, চলে যান। নেতা চলে যান। আপনি গেলে আমরাও যেতে পারি।’ তার মানে আমি যতক্ষণ থাকব ততক্ষণ তাদের থাকতে হবেই এটাই তাদের সেদিনের ডিউটি। আসর-মাগরিব-এশার নামাজ আদায় করে ঢাকায় ফিরেছিলাম। ভেবেছিলাম, এই আওয়ামী লীগ! এর পরিণতি কী হবে। ২৮ জুলাই দীপের বউভাতে কিশোরগঞ্জে যাওয়ার কথা ছিল। ২৭ তারিখ সোনারগাঁ যাওয়ার পথে আদম আলীর মেয়ে সাথী ফোন করেছিল, ‘কাকা, শুনলাম আপনি কিশোরগঞ্জ আসছেন। বাবা কাঁদছেন, কখন মরে যাবেন। মরার আগে আপনাকে দেখতে চান।’ বলেছিলাম, ঠিক আছে। আমি আসব। তাই বউভাতে যাওয়ার আগে করিমগঞ্জ আদম আলীকে দেখতে গিয়েছিলাম।
স্ট্রোক করে কেমন হয়ে গেছে। লোকজন ধরে হাঁটতে পারে। আদম আলী এক মহান মানুষ। যতবার করিমগঞ্জ গেছি উন্মাদের মতো যতœ করেছে। অবস্থান কর্মসূচির সময় চামড়াঘাট হয়ে যেদিন ইটনা যাই সেদিনও শতাধিক লোকের রান্নাবান্না করে সঙ্গে দিয়েছিল। আদম আলীর তুলনা হয় না। করিমগঞ্জের আবু সুফিয়ান এক অসাধারণ নেতা। আদম আলীর বাড়িতে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আনোয়ারের খবর কী? বলেছিল, ‘স্যার! আর বলবেন না। আনোয়ার ধনী মানুষ। যেখানে লাভ সেখানেই তারা।’ আদম আলীকে দেখে ফেরার পথে কত কথা মনে পড়ছিল। করিমগঞ্জ সভা করতে যারা বৌলাই বাধা দিয়েছিল আমার দীপও তাদের একজন।
আরও যারা ছিল তাদের অনেকেই গামছা ধরেছে। অবস্থানে যখন ভাটগাঁও ছিলাম দীপের বোন জ্যোতি এক বাড়ির কাউকে কিছু না বলে রান্নাঘরে ঢুকে আমার জন্য ভাত এনেছিল। বাড়ির লোকজন চিৎকার করছিল, ‘ও মা! কী সুন্দর মেয়ে ভাত চুরি করে!’ পরে যখন জেনেছিল সে আদতে চোর না, আমার জন্য ভাত আনতে গেছে। এদিক-ওদিক কাউকে না দেখে সে রান্নাঘরে ঢুকেছিল। দীপের পুরো পরিবারই এখন আমাদের সঙ্গে। অথচ মিজানুল হক, করিমগঞ্জের মাটি যার ঘাঁটি তার কোনো খবর নেই। কদিন সাদা কাপড় পরে ঘুরেছেন। এখন তাও নেই। তাই ভাবী, সময় কেমন নিয়ামক শক্তি। আজ যে রাজাধিরাজ কাল সে ভিক্ষা চায়।
দীপের বিয়েতে কতজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। বেশ ভালো লেগেছে। মেয়েটাকেও আমার পছন্দ। দোয়া করেছি, ওদের দাম্পত্যজীবন যেন শান্তিময় সুখের হয়। বিয়ের দাওয়াতে থাকতেই ড. কামাল হোসেন ফোন করেছিলেন। তিনি কিছু বলতে চান। বলেছিলাম, স্যার! আমি কিশোরগঞ্জে। শুনেই বললেন, তাড়াতাড়ি আসুন। সকালেই কিছু বলতে হবে। ড. কামাল হোসেন প্রবীণ মানুষ। তার কথা ফেলতে পারিবারিক ঐতিহ্যে বাধে। তাই সাড়ে ৪টায় কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার পথ ধরেছিলাম পরদিন তার সঙ্গে কথা বলতে। অবস্থানের সময় হোসেনপুর প্রাইমারি স্কুলমাঠে এক রাত ছিলাম। চলে আসার সময় সিংহবাড়িরা ডাল-ভাত খাইয়েছিল। সে ডাল-ভাত, শাক-সবজি-মাছ নানা ব্যঞ্জনে অমৃত।
সেই থেকে তাদের সঙ্গে পরিচয়। সে বাড়ির মেয়ে তৃষ্ণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আর অর্পণা রানী ময়মনসিংহে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কোচিং করছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মোবাশ্বিরা আক্তার মুক্তা স্বামীকে নিয়ে এসেছিল। আমরা যেদিন তাদের স্কুলের মাঠে ছিলাম সেই ৮ জুন ছিল তার জন্মদিন। সারা জীবন আমি চকলেট বিলাই। সে সেদিন আমায় দুটি চকলেট দিয়েছিল। তাই এবার তাদের জন্য শাড়িসহ দুটি চকলেট নিয়ে গিয়েছিলাম। মুক্তার বিয়ে হয়েছে বেশ কিছুদিন। স্বামী সোনালী ব্যাংকে চাকরি করে।
আগে থাকত অনেক দূরে। এখন হোসেনপুরে এসেছে। শুধু আনন্দ আর আনন্দ। দোয়া করি, তাদের জীবন যেন সুখের হয়। হোসেনপুর থেকে গফরগাঁও-ভালুকা-টঙ্গী হয়ে রাতে ঢাকা ফিরেছিলাম। যাওয়ার পথে গাজীপুর চৌরাস্তা পৌঁছতে ২টা ১০ মিনিট লেগেছিল। ফেরার পথে লেগেছে সাড়ে ৪ ঘণ্টা। তার আধঘণ্টা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য। আমরা যখন ১১টা ৩ মিনিটে বঙ্গবন্ধু আস্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পূর্বপাশের রাস্তায় তখন কী এক অনুষ্ঠান করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নীড়ে ফিরছিলেন। কয়েক মিনিট আগে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের ২০-২৫ গজ পশ্চিম দিয়ে তার গাড়ি পেরিয়ে যায়। প্রথমেই পুলিশের রেকার তারপর এক মোটরসাইকেল আরোহী।
এর দু-তিনটি গাড়ির পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি। তারপর লম্বা বহর। ৩০-৩৪টি গুনেছিলাম। ওরপর আর গুনতে পারিনি। ভেবেছিলাম প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরপরই রাস্তা ছেড়ে দেবে। কিন্তু না, রাস্তা বন্ধই থেকে গেল। ডিজিএফআই-এনএসআই-জেনারেল-মন্ত্রী একের পর এক ৩০-৩৫ মিনিট ধরে পার হলো। রাস্তায় অবরুদ্ধ যাত্রীরা কীসব বিশ্রী কথাবার্তা বলছিলেন যা কান পেতে শোনার মতো নয়। প্রধানমন্ত্রীর জন্য যে যে রাস্তা বন্ধ রাখা জরুরি ছিল তার বাইরেও রাস্তা বন্ধ দেখলাম।
পরদিন সকালে কোনো কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভবনে গিয়েছিলেন। ৯টায় বাড়ি থেকে বেরোতে গিয়ে রাস্তাঘাট বন্ধ দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছিলাম। এক পুলিশ সার্জেন্টকে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভবনে এসেছেন।’ বলেছিলাম, তিনি সংসদ ভবনে এসেছেন বলে আসাদ গেটের রাস্তা বন্ধ— এটা কী! প্রধানমন্ত্রীর গণভবনের চারদিকে রাত ১১টার পর রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এগুলো কেন বা কী? শুধু ষড়যন্ত্রের কথা শুনি। মাননীয় নেত্রীকে অপ্রিয় করার সত্যিই কি এটা এক সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র? কেন যেন মনটা ভারী করে তোলে। চারদিকে কেমন যেন এক গুমোট ভাব। দুই ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে হয় আট ঘণ্টায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদিক-ওদিক যাবেন বলে রাস্তাঘাট বন্ধ। তার নিরাপত্তার জন্য রাতে গণভবনকে এক দুর্গ বানিয়ে ফেলা এ কীসের আলামত? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। কেউ কি দেখার নেই? দেখার থাকলে সময় থাকতে দেখা ভালো।
লেখক : রাজনীতিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.