মাদ্রাসার ছাত্রের লাশ উদ্ধারের এক মাস পর হত্যা মামলা, মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ তিনজন গ্রেপ্তার

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় নিখোঁজের একদিন পর মো. মুনিম আহমেদ (১০) নামের এক মাদ্রাসার ছাত্রের লাশ খাল থেকে উদ্ধারের এক মাস পর গত সোমবার রাতে কসবা থানায় হত্যা মামলা করেছে নিহত ছাত্রের বাবা মো. নিজাম। এ ঘটনায় পুলিশ ওই দিন রাতেই মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ৩ শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।kasba madrasa teacher গ্রেপ্তার হওয়া তিন শিক্ষক হলেন; কসবা পৌর এলাকার আড়াইবাড়ি ইক্বরা তাহফিজুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাব্বির আহাম্মদ (৩৩), শিক্ষক মাসুদ রানা (৫৫), মনিরুল ইসলাম (৩১)। তাদেরকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিচারিক হাকিমের আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। আদালত তাদেরকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। গত সোমবার (৩০ জুলাই) নিহত মুনিমের ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায় তার আঘাত জনিত কারনে মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাতে নিহত মুনিমের বাবা মো. নিজাম বাদী হয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাব্বির আহাম্মদসহ তিনজনকে আসামী করে কসবা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ রাতেই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা করেন। নিহত মো. মুনিম আহমেদ কসবা উপজেলার বাদৈর ইউনিয়নের হাতুরাবাড়ি গ্রামের মো. নিজামের ছেলে। কসবা পৌর এলাকার আড়াইবাড়ি ইক্বরা তাহফিজুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র ছিল। জানা যায়, মো. মুনিম আহমেদ আড়াইবাড়ি ইক্বরা তাহফিজুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে পড়াশুনা করতো। ওই মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে থেকেই পড়াশুনা করতো। বাসা থেকে খাবার পাঠিয়ে দেয়া হত। মুনিমের ছোট বোন গত ২৯ জুন সকালের নাস্তা নিয়ে এসে তাকে মাদ্রাসায় পাওয়া যায়নি। মাদ্রাসা থেকে অধ্যক্ষ সাব্বির আহাম্মদ জানিয়েছিলেন মুনিম মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে খেলাধূলা করছেন। পরে আবার মুনিমে মা নাস্তা নিয়ে এলে অধ্যক্ষ আবারও জানিয়েছেন তাকে তাঁর বাসায় নাস্তা আনার জন্য পাঠিয়েছেন। নাস্তার বক্সটি রেখে তিনি বাসায় চলে যান। ওই দিনই আবার দুপুরের খাবার নিয়ে মুনিমের মা-বাবা মাদরাসায় এসে দেখেন ওই তিন শিক্ষক বিষন্ন মনে পায়চারী করছে। তাদের দেখে তারা কিছু প্রশ্ন করার পূর্বেই ওই তিনজন বলে উঠেন মুনিম বাসায় গেছে। ওই শিক্ষকদের রহস্যজনক আচরনে মুনিমের মা-বাবার সন্দেহ হয় বলে জানায় মুনিমের বাবা। পাগলের মতো সন্তানকে খুঁজা শুরু করে মুনিমের মা-বাবা । মাইকিংও করা হয়। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরদিন ৩০ জুন ভোর ৫টায় মাদ্রাসা সংলগ্ন খালে মুনিমের লাশ ভাসতে দেখে পরিবারকে খবর দেয় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। পরে মুনিমের পরিবার তার লাশ সনাক্ত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। থানায় করা হয়েছিল অপমৃত্যুর মামলা। নিহতের বাবার দাবী ; তাঁর ছেলেকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে। খুনের সাথে জড়িতেদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী করেছেন তিনি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কসবা থানার উপপরিদর্শক (এস.আই) মো. জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন; নিহত মাদ্রাসা ছাত্রের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আঘাত জনিত কারনে মৃত্যু হয়েছে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ তিনজনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের বাবা। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান; এদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.