তাজুল ইসলাম নয়ন॥ সবাইকে বলতে শুনি কি ছিল আওয়ামী লীগের এই কাউন্সিলে? কেউ বলে বেড়ায় ভয় ও শঙ্কার কথা। আবার কেউবা খুঁজে বেড়ায় খুটি-নাটি দোশ-ত্রুটি। আবার কেউ বা বিভিন্ন সমালোচনায় মুখর। সত্য কথাটি খুব কম সমালোচক ও বিরোধীতাকারীরা বুঝতে পেরেছেন এবং উপলব্দি করেছেন বলে আমার মনে হয়। আবার এটাই মনে হয় তারা জ্ঞানপাপী। এবং তাদের পাপের অর্জনতো সর্ববৈব মিথ্যায় পরিণত হয় আর সেই মিথ্যার বুলিই আওড়িয়ে যাচ্ছেন বৈকি। আমি কাউকে দোষারোপ করছি বা বলছিও না যে আপনারা ভুল করছেন বা বুঝছেন। কারণ আমাদের সকলেরই বলার-চলার এবং বোঝার- জানার স্বাধীনতা আছে। স্বাধীন দেশে স্বাধীন মত প্রকাশের যেমন সুযোগ রয়েছে তেমনি মিথ্যার রাজনীতি চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। তেমনি সময় এসেছে এই মিথ্যা থেকে বের হয়ে এসে সত্যের আবর্তে ঝর তোলা বার্তাদিয়ে জাতিকে একত্রিত করার। আমি শুধু আমার লিখায় ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিবাচক অর্জন এবং দিকনির্দেশনাগুলিই বলব আমার দেশের নতুন প্রজন্ম তথা ডিজিটাল প্রজন্ম ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি।
এই ডিজিটাল আওয়ামী সম্মেলনের ১ম অর্জন হলো সারা দেশব্যাপী তথা বিশ্বে এই সম্মেলন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন দেশের লোকজন এই সম্মেলনে এসে তাদের দেশ এবং দলের ইচ্ছার বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছে। বাংলাদেশকে বিশ্বের রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন স্থানদিয়ে নতুন মাত্রায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। নতুনভাবে এদেশের মানুষ এবং মানুষের মনের ঐকান্তিক ইচ্ছার ডিজিটাল প্রতিফলন বিশ্ববাসী ডিজিটাল কল্যাণে দেখাতে পেরেছে। বিশ্বের নেতা বা নেত্রীস্থানীয়দের মণের ভুল ধারণাটুকুর অবসান ঘটেছে এই সম্মেলনের সফল আয়োজন এবং সমাপ্তির মাধ্যমে।
২য় অর্জন হলো সকলের মুখে একটি শব্দ প্রচলিত ছিল পরিবারতন্ত্র এবং পরিবার কেন্দ্রিক একনায়ক তন্ত্রের রাজনীতি কর্তা শেখ হাসিনা। কিন্তু এটা সত্য নয়। মিডিয়া এবং দেশবাসির দাবি ছিল বিশেষ করে জয়কে দলীয় কোন পদে দেখতে। বিশেষ করে আমরা যারা মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত তারা এই বিষয়টিকে এমনভাবে প্রচারিত করেছিলাম যেন সম্মেলনের পূর্বেই ঘোষিত হয়েছিল জয় দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এমনকি সাধারণ সম্পাদক হয়ে আসছেন। এমনকি শেখ রেহানা, পুতুল ও ববি দলের কোন না কোন পদে যুক্ত থাকবেন। সেই চিরাচরিত ভুল ধারনার অবসান ঘটিয়ে দেশবাসীসহ বিশ্ব বাসিকে এই বার্তাই দিল যে, দলের প্রয়োজন এবং দেশের প্রয়োজনের কথা চিন্তা ও ভাবনায় রেখে সমস্ত আবেকগে পাশকাটিয়ে কাউন্সিলরদের মতামত এবং সিনিয়র উপদেষ্টা এবং চুলছেড়া বিশ্লেষণকারীদের মতামতের ভিত্তিতেই এই দলের সকল কর্মকান্ত পরিচালিত হওয়ার প্রমান যুক্তিসহ উপস্থান করেছে দেশীয় এবং বিশ্ব পরিমন্ডলে। যার মাধ্যমে সমালোচক, বিরোধীতাকারীর সমালোনার দৃষ্টান্তমূলক পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
৩য় অর্জন হলো দলীয় শৃঙ্খলা এবং আনুগর্তের পরিচায়ক। যা দৃষ্টিনন্দ এবং আদর্শীক ও নির্মোহ ক্ষমতার ও লোভের উর্দ্ধে থেকে দলকেন্দ্রিক এবং দেশ সেবার ব্রতীর পরিচায়কও বটে। কাউন্সিলর ও নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে ছিল না কোন নেতা হওয়ার বাসনা এবং দলের প্রয়োজনে সবাই একযোগে কাজ করতে প্রস্তুত। যার উদাহরণ একটি সফল কাউন্সিলই হতে পারে। আগামি দিনের ডিজিটাল রাজনীতির জন্য এটিই ছিল অতিব গরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর রাজনীতি পরিচালিত হউক এটাই আমাদের সকলের কামনা। নেত্রী চেয়েছেন নতুন নেতা নির্বাচন করতে এবং তিনি নতুনের মধ্যেদিয়ে দলের কর্মকান্ড নিয়ে এগিয়ে যেতে তাঁর ঐকান্তিক মনোবাসনা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু সমর্থক এবং কাউন্সিলর ও নেতৃবৃন্দ কেউ তা হতে দেননি এটিও একটি শিক্ষনীয় দৃষ্টান্ত। কোন প্রতিদ্বন্ধি না থাকাও একটি উদার মনোভাবাপন্ন লক্ষনীয় উজ্জল দৃষ্টান্ত। নি:র্লোভ ও সফল সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ দেখিয়েছেন আরেকটি দৃষ্টান্ত। যা আগামী দিনের সকল রাজনৈতিক দলের জন্য শিক্ষনীয় হয়ে থাকবে। আর এই দৃষ্টান্তই কেবল একটি দলকে শৃঙ্খলা, হানা-হানি ও ভেদাবেদ ভুলে একযুগে অভিষ্ট লক্ষের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। বিশ্বদরবারে এর গুরুত্ব অতুলনীয় হয়ে থাকবে আগামীর দৃষ্টান্ত হিসেবে।
৪র্থ অর্জন হলো দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দিক নির্দেশনামূলক একটি যুগান্তকারী ভাষণ। এই থেকেই দল হয়েছে উজ্জীবিত এবং পেয়েছে আগামীর করনীয় দিক নির্দেশনা। সর্বোপরি একটি দলের জন্য যা প্রয়োজন এবং দলকে সক্রিয় রেখে লক্ষ্যে পৌঁছার সফল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেশ বিদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় দৃষ্টান্তের স্বাক্ষর রেখে গেল এই সম্মেলন।
৫ম অর্জন হলো কোন দোষ-ত্রুটি নিয়ে ঘাটাঘাটি না করে বরং ইতিবাচক এবং আগামীর করণীয় নিয়েই অগ্রসর হয়েছে দলের সদ্য শেষ হওয়া সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দু। যা সমালোচন, নিন্দুক এমনকি বিরোধীতাকারীদেরও ভ’রো কুচকে যাওয়ার মত কাজ হয়েছে। তারা খুঁজে পায়নি কোন অসাড়তা বা খোদ যা নিয়ে তাদের গলাবাজি অব্যাহত রাখবে। সময়ের প্রয়োজনে এবং নতুনত্বের ছোয়ায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণকারী দলের একটি ডিজিটাল সফল সম্মেলনই উপস্থাপিত হলো বিশ্ব দরবারে। যা প্রমাণ করে বাংলাদেশ এগিয়েছে এবং মধ্যম আয়ের দেশের পর্যায় অতিক্রম করতে যাচ্ছে।
৬ষ্ট হলো সম্মেলন আয়োজনে সক্ষমতা। নেই কোন বিশৃঙ্খলা এবং লক্ষনীয় ত্রুটি। দেশী বিদেশী অতিথীদের নবাবী আপ্যায়ন এবং নিরাপত্তাই প্রমান করে দেশ পরিচালনায় সক্ষমতা অর্জনের দৃষ্টান্ত। দৃষ্টিনন্দন আয়োজন, আলোকচ্ছটা এবং মঞ্চ ডিজাইনও প্রমান করে শিল্প, সংস্কৃতি, সৌন্দর্য্য, কৃষ্টি, কালচার ও আতিথীয়তায় আমরাই এগিয়ে। এই সম্মেলন সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে সর্বদিক দিয়ে সফলভাবে প্রকাশ করেছে উন্নয়নের বার্তাবহ দিয়ে। সম্মেলনের যে শ্লোগান ছিল তা ছিল সুচিন্তিত চিন্তার একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। এই শ্লোগান কেন্দ্রীক সমস্ত কিছুই সফল হয়েছে। আগামীর জন্য রেখেছে স্বীকৃতি এবং পর্যায় থেকে পর্যায়ক্রমে উন্নতির ধারাবাহিক লক্ষণস্বরূপ দৃষ্টান্ত।
৭ম হলো পুরো সম্মেলনই ছিল চমকে ভরপুর। যা কেউই আঁচ করতে পারেনি। বিশেষ করে মিডিয়াকে আড়াল করা কঠিন এবং সেই কঠিন কাজটুকুই করেছে নিখুঁতভাবে। শেখ রেহানা, পুতুল, জয় ও ববিকে নিয়ে প্রচারিত সমস্ত খবর অসাড় প্রমানিত এবং কাদের আশ্রাফ, তাজকে নিয়ে প্রচারণার অসাড়তা সবইতো মিথ্যাই প্রমানীত করে বুদ্ধিমতী নেত্রী কি প্রমান করলো যে, মিডিয়ায় প্রচারিত ও প্রকাশিত সবকিছুই সত্য বলে ধারনা করা বা ধরে নেয়া ঠিক নয়। তাঁর পিছনেই প্রকৃত সত্য রয়েছে আর এর জন্য অপেক্ষা করা প্রয়োজন। অপেক্ষা বা ধৈয্য শিক্ষার বিকল্প নেই। রাজনৈতিক অঙ্গণে ধৈয্য একটি বড় বিষয়। এই ধৈয্য এবং পরমত সহিষ্ণুতা অতিব জরুরী। এই শিক্ষাই প্রকারান্তরে এই সম্মেলণ আমাদের দেশবাসীসহ বিশ্ববাসিকে দিয়েছে। মিডিয়ার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য কিন্তু অতিরঞ্জিত ভাব এবং অসত্য তথ্যনির্ভরতা পরিহার করাও এই সম্মেলনের শিক্ষা বটে।
৮ম হলো দেশবাসী পেয়েছি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ইঙ্গিত। দেশীয় রাজনৈতিক দলগুলো পেয়েছে নির্বাচনী প্রচারণার দিনক্ষণ। সুতরাং এই সম্মেলনের মাধ্যমেই সরকার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে আগামী দিনের একটি সর্বজন স্বীকৃত নিরপেক্ষ নির্বাচনের। দেশবাসী আজ উদ্বেলিত এবং আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিলগ্নের শুরুম্ভ করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার, কর্মকান্ড, উদ্যোগ এবং আগামীর দিক নির্দেশনা এমনকি সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার দ্বারপ্রান্তে পৌছতে গতিশীল নেতা এবং সরকার নির্বাচণ করতে এখন থেকেই নানাবিধ হিসেব নিকেশ চলছে। চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণও। এই নিয়েই সম্মেলন ও চিন্তা ভাবনায় ইতিবাচক মঙ্গলজনক পাওয়া এবং আগামীর চাওয়া।