প্রশান্তি ডেক্স॥ আলোকচিত্রী শহীদুল আলম উত্তরাধিকার সূত্রেই পাকিস্তানি চেতনার ধারক বাহক। বিশেষ বিশেষ সময়ে মাথায় তিনি যে পাগড়িটি পড়েন তা বাঙালিয়ানার সাথে যায় না, সেটি আইএসআই-এর প্রতীক হিসেবে বেশী মানানসই। শহীদজননী জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ থেকে আমরা জানতে পারি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে তাঁর মায়ের সখ্যতা ছিল। শহীদজননী তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন-
‘এপ্রিলের মাঝামাঝি বাদল খালেদ মোশাররফের স্ত্রী রুবী ও তাঁর মাকে ঢাকা থেকে নিয়ে খালেদের কাছে পৌঁছে দেয় অনেক কষ্ট করে।…কিন্তু মেয়ে দু’টি রয়ে যায় ঢাকাতে। রুবীর ভাই দীপুর বন্ধু মাহমুদের বাসায় ছিল মেয়েরা। পাক আর্মি দীপু ও মেয়ে দু’টিকে ধরে ফেলে। তারপর সামরিক কর্তৃপক্ষ অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয়ের হেডমিস্ট্রেস মিসেস আনোয়ারা মনসুরের (শহীদুল আলমের মা-লেখক) হেফাজতে রেখে দেয় খালেদ মোশাররফের মেয়ে দু’টিকে।
মেজর খালেদ মোশাররফের স্ত্রীকে ঢাকা থেকে পার করে দেবার অপরাধে সামরিক সরকার হুলিয়া বের করে বাদলের নামে। তবুও এই ঝুঁকি মাথায় নিয়েই বাদল কিছুদিন পর ঢাকায় চলে আসে। এবার তার কাজ খালেদের মেয়ে দু’টিকে নিয়ে বাবা মা’র কাছে পৌঁছে দেয়া। খুব কঠিন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। আনোয়ারা মনসুরের বাসা হলো এলিফ্যান্ট রোডের ‘নাশেমন’ সরকারি ভবনে, তিনতলা ফ্লাটে। সেখান থেকে দু’টি বাচ্চাকে হাইজ্যাক করে আনা বড় সহজ কাজ নয়। বাদলের এ কাজে তার সঙ্গি হলো বদি, কাজী, স্বপন ও চুল্লু। চুল্লু নিচে গাড়িতে বসে রইলো স্টার্ট দিয়ে। বাকি চারজন অস্ত্রসহ তিনতলায় উঠে গেল। কিন্তু দু’টি মেয়েকেই নিয়ে আসতে পারলো না ওরা। আনোয়ারা মনসুরের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বাড়ির অন্য কেউ একজনকে টেলিফোনের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে স্বপন পিস্তলের একটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে দেয়ালে। তারপরই হুলস্থূল লেগে যায়। আনোয়ারা মনসুরের বড় বোন ছুটে আসলে একজন তাঁর পায়ের দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলি পায়ের চামড়া ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। আনায়ারা মনসুরের মাথায় স্টেনের বাঁটের আঘাত লাগে। বড় মেয়ে বেবী বাদলকে চিনতো, কিন্তু ছোটটি চিনতো না। মিসেস মনসুর ছোট মেয়ে রূপনকে বুকে জাপটে ধরে বসেছিলন। গুলির পর বাদলরা এখানে আর বেশীক্ষণ থাকা নিরাপদ মনে করে নি। বাদল বেবীকে তুলে নিয়ে সঙ্গীদের সঙ্গে নিচে নেমে আসে। দেখে গাড়ির কাছাকাছি লোক জমে যাচ্ছে।… ওরা দ্রুত গাড়িতে উঠে উধাও হয়ে যায়।… বাদল আর কাজী বেবীকে নিয়ে মানিকনগর দিয়ে গিয়ে দাউদকান্দি হয়ে পথে অনেক বিপত্তি পেরিয়ে তারপর খালেদ মোশাররফের ক্যাম্পে পৌঁছায়।’(জাহানারা ইমাম, একাত্তরের দিনগুলি, সন্ধানী প্রকাশনী, তেত্রিশ মুদ্রণ, পৃষ্ঠা-২৩০/২৩১)
শহীদুল আলম বিখ্যাত আলোকচিত্রী। তিনি পাকিস্তানি ভাবাদশের মানুষ হতে পারেন, বর্হিবিশ্বের মিডিয়াকে সাক্ষাৎকারও দিতে পারেন, তাতে অপরাধের কিছু নাই। কিন্তু তিনি বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে পারেন না।