জেলখানার দিনগুলি

চলমান…jailhanar-dingolo
বিছানাটি আসলে পরিপটি ছিল না বা পরিবেশের উপযোগীও ছিল নিা। তারপর ঐ জেলে এটিই রাজকীয় বিছানা বলে খ্যাত। ঐ বিছানায় কতক্ষন অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও হাঠু গেরে বসলাম। তখন পলক বা সাগর নামে এক ভদ্রলোক যা দেখতে ভয়ঙ্কর নেশাখোর ও বদ মেজাদি মনে হয়; সে আমদানীতে সবাইকে তল্লাসী করে এবং ভয় দেখায় এমনকি কাউকে কাউকে পেটায়। ঐ পলক সাহেব আমাকে বলে আপনি ঐ বিছানায় কেন? এদিকে আসুন। তখন বললাম ভাই আমাকে আলতাফ ভাই বসতে অনুমতি দিয়েছে। তখন ঐ ভদ্রলোক বলল ঠিক আছে।
রুমে কয়েক লক্ষ হাজার কোটি মশা। শ্বাস প্রশ্বাসেও মশা। জীবনের প্রথম দেখা মশার রাজত্ব। ঘন্টাখানেক পরে আমাদেরকে সারিবদ্ধ করে লাইনে বসায় এবং এক প্লেটে দুইজনকে মুখোমুখি বসিয়ে করলার খিচুরী খাইতে দেয়। আমি ক্লান্ত ও অসুস্থ্য। আমি ঐ খিচুরী খাইনি তবে এর স্বাদ নিতে অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও চোখ বন্ধ করে এক আঙ্গুলে একটু খেয়ে দেখি ভিষন তিতা ও অরুচীকর। যা আমার রুচীয় বাধে। তারপর বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন রকম মানুষের  ঝগড়া এবং চিৎকার ও চেচামেচি দেখতে ও শুনতে হয়। আমি জানতে চাইলাম কোথায় শুভ। তখন তারা আমাকে দেখায়  এ খালি পাকায় এবং ঐ পাকায় মনিরুর চাদর বিছিয়ে দুজন সুয়ে পড়ি। পড়ে দেখি একজনের পায়ের মধ্যে আরেক জনের পা ঢুকিয়ে শুয়ানো হয়। যাকে ক্যচকি ফাইল বলা হয়। ওদের তুলনায় আমি ঐ ফারুক সাহেবের বলা রাজার হালেই শুলাম এবং ঘুমালাম। ক্যচাক ফাইলের যন্ত্রনা থেকে রক্ষা পেলাম। কিন্তু মশা খেয়ে উপুষ পেট ভরে না খুমিয়ে রাত যখন ৪টা তখন সবাইকে ধমকিয়ে ঘুম থেকে তুলে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় কেস টেবিলে। একটু হাট হলো ভোরের শিশীর। কেস টোবল হলো একটি টিন শেভ ঘর যার চারিদিক খোলা ঐ ঘরে পাতা ময়লা ফ্লোরে বসতে হলো আসন পেতে। যদিও আসন পেতে বসার অভ্যাস ছিল না তারপরও কষ্টকরে বসলাম। বলে রাখা ভাল মামার সঙ্গে যরা আমদানীতে ছিল তার সবাই হল গাজা হেরোইন এবং বাবও বিভিন্ন মামলার দাগী আসামী। তাদের প্রত্যকেরই জেলের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা কোন শৃংখলা বা কারো কথা শুনে না বরং বকে অন্যের সঙ্গে জগড়া করে। কেস টিক বিলের সুবেদার কারা রক্ষি মিয়াসার সুপার এবং সাজাপ্রাপ্ত দাগী আসামীদের শাস্তি বা মারধৌর। মারধৌর বড় কঠিন ও নিমর্ম। ঐ কেস টেবিলে শিক্ষায় শিক্ষিত বা গেনী মানুষের চরম অভাব অনুভব করলাম। পাশাপাশি নিজেকে কী প্রচার দিলাম। নিজেকে পিপড়ার চেয়েও ছোট ভাবলাম। অবশেষে সুযোগ হল টেবিলে যাওয়ার কয়েকবার নাম ডাকার পর গেলাম নিজের পরিচয় ও নাম ঠিকানা বললাম এবং গায়ের কাপড় খুলে শরীরের চিহ্ন ও বিবরন দিলাম। যহার বিষয় পরিচয় দেয়ার সময় আমার স্ত্রী ও সন্তানদের নাম ও দেয়ার প্রয়োজন হল। নাম ঠিকানা দেয়া শেষ আবার লাইনে দাড়ালাম। কিছুক্ষণ দাড়ানোর পর জোড়পূর্বক বসানো হলে। বসার পর আবার বিশংখলা সৃষ্টি হল। তারপর আবার ডাক পেলাম ছবি ওঠানো জন্য। ছবি ওঠানো শেষে আবার লাইনে বসানো হল। কিছুক্ষন পর আবার ডাক আসল ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেয়ার জন্য। অবশেষে আবার বিরাট লাইন দাঁড় কওে গুনা শুরু করল। গুনা শেষে আমাকে ঐ লাইন ধরে হাটাতে হাটাতে দিয়ে যাওয়া হলো আমদানীতে। তখন বেলা প্রায় ১২.৩০ মিনিট নিয়ে যাওয়ার পর দেয়া হল একটি আটার ময়লা রুটি ও এক কুরা গুর। ঐ রুটি খাওয়ার কোন ইচ্ছাই আমার ছিলনা কিন্তু সহস্ত্রী মনিরুল আমাকে বলল ভাই যতপটুকু পারেন খান এবং একটু পানি খান। তখন রুটির চার ভাগের একভাগ গুও সহ খেলাম এবং টেবের পানি যা শিক্ষা মেশানো তাই খেলাম। এই হল সকালের নাস্তা। তারপর আমাদেরকে ডাকা হল এবং জিজ্ঞাসা করা হল আমরা কোথায় যাব। যেহেতু আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই তাই মনিরুল উপর ভরসা করেই তাকিয়ে রইলাম। দেখলাম বিভিন্ন লোক আসছে আামাদেরকে নেয়ার জন্য কিন্তু শেষে মিঠু নামে এক দালালের কাছে জন প্রতি ৫০০ টাকায় বিক্রি কওে দেয়া হলো। আমি হ্যা সুকে সম্মতি দিয়ে তার পিছনে পিছনে গেলাম এবং করতোয়া ৪ এর ৭ বোয়ে উঠলমে। যাওয়ার পথে মিঠু বলল আপনাদের কোন সমস্যা নেই। যা লাগবে আমাকে বলবেন আমি সবই করে দিব। কাপর ধোয়া প্রেন্ট ধোয়া থেকে খাবার আনায়ন করা সবই আমি করব। কোন চিন্তা করবেন না। বিনিময়ে আমি আপনাদের সঙ্গে থাকব।

Leave a Reply

Your email address will not be published.