ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় খাড়েরা গ্রামে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়–য়া এক শিশুকে ধর্ষন করে একই গ্রামের সরু মিয়া (৫৫) নামক এক ব্যক্তি । ঘটনার একদিন পর ধর্ষিতার মা শিশুটিকে নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও পুলিশ রহস্যজনক কারনে মামলা রেকর্ডভূক্ত করেননি। পরে ওই ধর্ষনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে ধর্ষককে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেন গ্রামের সাহেব সর্দারগন। ধর্ষক ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে এবং ১ লাখ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে শিশুটির বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা চান। ধর্ষনের ঘটনায় অভিযুক্ত সরু মিয়া খাড়েরা গ্রামের মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে।
থানায় দেয়া অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে; গত ৭ আগস্ট সকালে শিশুটি সরু মিয়ার খামারের পাশ দিয়ে মক্তবে যাওয়ার সময় তাকে আমড়া দেয়ার কথা বলে সরু মিয়া শিশুটিকে খামারে ডেকে নেয়। সেখানে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ সময় স্থানীয় এক ব্যক্তি খামার থেকে ডিম আনতে গিয়ে শিশুটি চিৎকার করছে দেখতে পায়। পরে শিশুটির মা ও স্থানীয় লোকজন গিয়ে শিশুটিকে ব¯্রহীন, রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। এ সময় খামার মালিক সরু মিয়া দৌড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার দিন থেকেই ধামাচাপা দিতে একটি প্রভাবশালী মহল তৎপর হয়ে উঠে বলে জানা যায়।
পরদিনই শিশুটির মা বাদী হয়ে তার মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষনের অভিযোগে কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছেও অভিযোগের নকল কপি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারনে মামলা রেকর্ড হয়নি। ঘটনার কয়েকদিন পর সাহেব সর্দারগন ঘটনা চাপা দিতে শিশুটির বাড়িতে এক সালিশ সভায় বসে। ওই গ্রামের হেলু মিয়ার সভাপতিত্বে এ শালিস সভায় সাবেক ইউপি সদস্য মফিজ মিয়া, বর্তমান সদস্য মো. মিজান মিয়া, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মীর হেলালসহ গ্রামের শতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সভায় ধর্ষক তার দোষ স্বীকার করেন। সাহেব সর্দারগন তাকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেন। তাৎক্ষনিক ভাবে ৫০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। অবশিষ্ট টাকা মামলা তুলে নেয়ার পর সর্দার আবুল কালামের কাছে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে বলে জানায় আবুল কালাম। অবশিষ্ট ১ লাখ টাকার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন অভিযুক্ত সরু মিয়া। পরে বাদীনি খবর নিয়ে জানতে পারেন থানায় কোন মামলা এফআইআর ভূক্ত হয়নি।
গত সোমবার বিকালে বিষয়টি জানতে শিশুটির বাড়িতে গেলে কথা হয় তার মা-বাবা ও ফুফার সাথে। তাঁরা বলেন; ৫৫ বছর বয়সী তাদের গ্রামেরই সরু মিয়া জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে তার মেয়েকে। ঘটনাটি পরদিনই থানায় লিখিত অভিযোগ করেছিলেন এবং সাংবাদিকদেরকেও জানিয়েছেন। আবুল কালাম বলেন; তিনি বাকী টাকার গ্রামীণ ব্যাংকের একটি চেক পেয়েছেন। ব্যাংক ঈদের বন্ধ থাকায় টাকা তুলতে পারেননি। ব্যাংক খুললে টাকা তুলে তাদেরকে দিয়ে দিব।
ধর্ষনের ঘটনা মিমাংসার বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রীম কোর্টের জৈষ্ঠ্য আইনজীবী ড.মো. ইদ্রিছ ভূইয়া সাংবাদিকদের বলেন; ধর্ষনের ঘটনা আপোস ও মিমাংসাযোগ্য নয়। এটি আইনী প্রক্রিয়ায় বিচার হবে। খাড়েরা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর হেলাল বলেন, ধর্ষনের ঘটনাটি সমাজের সকল শ্রেণীর লোকজনের উপস্থিতিতে মিমাংসা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি সরু মিয়া তাঁর দোষ স্বীকার করেছেন। শিশুটি ছোট ও গরিব পরিবার হওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই কথা বলেছেন সালিশকারী খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. মিজান মিয়া ও সাবেক সদস্য মফিজ মিয়া।
অভিযুক্ত সরু মিয়ার বাড়িতে গত সোমবার বিকালে গিয়ে কথা বলতে চাইলে কেহ বের হয়ে আসেননি। কিছুক্ষন পর এক যুবক বের হয়ে বলেন আমি মেহমান, বেড়াতে এসেছি। সরু মিয়া বাড়িতে নেই। ফোন নম্বর চাইলেন প্রতিবেদকের কাছে। বাড়িতে আসলে কথা বলিয়ে দেব। আর যোগাযোগ করেননি কেউ।
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মালেক মুঠোফোনে বলেন, শিশুটির মা ঘটনার পরদিন অভিযোগ দিয়েছিলেন। পরিদর্শক (তদন্ত) মৃনাল দেবনাথকে পাঠিয়েছিলাম। পরে থানায় আর কেউ আসেনি। এ কারনে মামলা এফআইআর হয়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান বলেন; থানায় অভিযোগ দিলেও রেকর্ড হয়নি কেন খোজঁ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ধর্ষণ মিমাংসাযোগ্য অপরাধ নয়। যদি কেহ মিমাংসা করে থাকেন এদেরও খুঁেজ বের করা হবে।
এই ধর্ষনের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য ৬/৭জন জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গত সোমবার রাত ৮টায় কসবা থানায় গেলে কর্তব্যরত পরিদর্শক (তদন্ত) মৃনাল দেবনাথ সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করে। যার ফলে সাংবাদিকরা গত মঙ্গলবার দুপুরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করে।