প্রহসনের বিচার দেহকে মারতে পারে কিন্তু আত্মা ও ন্যায়-পরায়নতাকে মারতে পারে না

প্রশান্তি ডেক্স॥ মহাজ্ঞানী সক্রেটিস। বয়স ৭১। প্রহসনের বিচার। অপরাধ: দৈববাণীর বিরুদ্ধতা, রাষ্টবিরোধী ষড়যন্ত্র ও তরুণদের বিপথগামী করা। রায়: মৃত্যুদন্ড। মৃত্যুদন্ড কার্যকর হবে ঠিক সন্ধ্যায়। তখনকার নিয়ম অনুযায়ী পরিবারের সবাই এবং একান্ত prohoson becher শিষ্যরা তার চারপাশ ঘিরে আছেন। প্রধান কারারক্ষী এসে শেষ বিদায় নিয়ে গেলেন। তার চোখেও অশ্রু। হায়, কি অদ্ভুত শাস্তি। যে মরবে সে ধীরস্থির, শান্ত। আর যে মারবে তার চোখে জল। কারাগার প্রধান বললেন, ‘এথেন্সের হে মহান সন্তান, আপনি আমায় অভিশাপ দিবেন না। আমি দায়িত্ব পালন করছি মাত্র। এতবছর কারাগারে কাজ করতে গিয়ে আপনার মতো সাহসী, সৎ এবং জ্ঞানী কাউকে আমি দেখিনি। মৃত্যুর ঠিক আগে সক্রেটিস তার পরিবারের নারী ও শিশুদের চলে যেতে বললেন। সুন্দর পোষাক পরলেন তিনি। শিষ্যরা সবাই কাঁদছে কিন্তু সক্রেটিস যেনো বেপরোয়া। মৃত্যুতে কি কিছুই যায়-আসেনা তার? মৃত্যুদন্ডটা চাইলেই তিনি এড়িয়ে যেতে পারতেন। নিয়ম অনুযায়ী খোলা মাঠে তার বিচার বসেছিলো। বিচারক ছিলেন সমাজের ৫০০ জন জ্ঞানী মানুষ। তবুও হয়তো প্রাণে বেঁচে যেতেন সক্রেটিস। কিন্তু কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও বিচারকদের নিয়ে উপহাস করতে ভুললেন না। ফলাফল হেমলক বিষপানে মৃত্যু। মৃত্যুর আগে একমাস কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি। নিয়ম ছিলো এমন। এই একমাসে কারারক্ষীরাও তার জ্ঞানে মুগ্ধ হয়ে গেলো। তারা তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করতে চাইলো। সক্রেটিস বিনয়ের সাথে না করে দিলেন। বললেন ‘আজ পালিয়ে গেলে ইতিহাস আমায় কাপুরুষ ভাববে।
ঐ সন্ধ্যায় প্রধান কারারক্ষী চলে যাওয়ার পর জল্লাদ এলো পেয়ালা হাতে। পেয়ালা ভর্তি হেমলকের বিষ। সক্রেটিস জল্লাদকে বললেন কি করতে হবে আমায় বলে দাও। জল্লাদ বললো পেয়ালার পুরোটা বিষ পান করতে হবে, একফোঁটাও নষ্ট করা যাবেনা। সক্রেটিস বললেন তবে তাই হোক। তিক্ত বিষের পুরো পেয়ালা তিনি জলের মতো করে পান করে ফেললেন। চারপাশে বসে থাকা শিষ্যরা চিৎকার করে কাঁদছেন। এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। তখন জল্লাদ আরও কঠোর নির্দেশটি দিলো। বললো নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে এখন কিছুক্ষণ পায়চারী করতে হবে, যাতে বিষের প্রভাব পুরোটা শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পরতে পারে। হায় হায় করে উঠলেন সবাই। শুধু মন্টান হাসলেন সক্রেটিস। বললেন আজীবন আইন মেনেছি, মৃত্যুতে আইন ভাঙবো কেন? দূর্বল পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটলেন কিছুক্ষণ, যতক্ষণ তার শক্তিতে কুলোয়। এরপর বিছানায় এলিয়ে পড়লেন। শিষ্যদের বললেন তোমরা উচ্চস্বরে কেঁদোনা, আমায় শান্তিতে মরতে দাও। জল্লাদের পাষাণ মনেও তখন শ্রদ্ধার ভাব, বিনয়ে আর লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো সে। চাদর দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নিলেন সক্রেটিস। একবার চাদরটা সরালেন। একজন শিষ্যকে ডেকে বললেন প্রতিবেশীর কাছ থেকে একটা মুরগী ধার করেছিলাম আমি, ওটা ফেরত দিয়ে দিও। এই ছিলো তার শেষ কথা। ক্ষনিক পরেই অনিশ্চিত যাত্রায় চলে গেলেন মহাজ্ঞানী সক্রেটিস। তার শিষ্যদের মাঝে সেরা ছিলেন প্লেটো। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের এই ঘটনাগুলো প্লেটো লিখে রেখে গেছেন। প্রহসনের বিচারে সক্রেটিসের মৃত্যু হয়েছে ঠিকই কিন্তু মৃত্যু তাকে মারতে পারেনি। সূত্র খোরশেদুল আলম ও আরিফুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published.