প্রশান্তি ডেক্স॥ চুল মানুষের সবচেয়ে সুন্দর দৈহিক বৈশিষ্ট্য। চুল তেমন বাইরের রোদ ও অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে মাথার ত্বক ও মস্তিষ্ককে রক্ষা করে, তেমনি আপনাকে সুন্দর দেখাতেও চুল ভূমিকা রাখে। আপনার বয়স যতই হোক না কেন, চুল পড়ে গেলে আপনার বয়স তিনগুণ বেশি দেখাবে। কিন্তু চুল পড়া এক বিশ্বব্যাপী সমস্যা। বেশি চুল পড়া রোধ করতে বড় বড় কোম্পানিগুলো মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে কিন্তু থামানো যাচ্ছে না।
অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ চুল পড়া একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার। প্রতিদিন ৫০-১০০ টি হেয়ার ফলিকল পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এর চেয়ে বেশিমাত্রায় চুল পড়লে তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিজ্ঞানীরা এবং গবেষকরা চুল পড়ার কারণ প্রতিকার নিয়ে গবেষণা করছেন সেই মিশরীয় যুগ থেকেই। বিভিন্ন তথ্য আমাদের হাতে এলেও চুল পড়া সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন কারণে বেশি চুল পড়তে পারে। শারীরিক অসুস্থতা, বংশগত কারণে কিংবা মানসিক চাপ অথবা শরীরের অযতেœর কারণেও অনেকের চুল পড়ে যায়। এছাড়া মানুষের শরীর নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের কমবেশি হলেও চুল পড়ে। চুল হয় মাথার ত্বকের ফলিকলে। হরমোনের তারতম্য হলে ফলিকল শুকিয়ে যায় এবং ফলিকলে থাকা চুল দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়া অযতেœর কারণে ফলিকল বন্ধ হয়ে গেলেও চুল পড়তে শুরু করে। আর ফলিকল থেকে চুলে সঠিক পুষ্টি না পেয়ে চুল পড়ে যেতে থাকে।
চুল গজানোর ধাপসমূহ ; Source: Hair budda
চুল গজানোর উপায় এখন পর্যন্ত চুল পড়ার চিকিৎসা বলতে হরমোন নিয়ন্ত্রণ এবং নতুন করে চুলের ফলিকল গজানোকেই বুঝানো হয়। তাই অতিরিক্ত চুল পড়া রোধ করতে হলে আপনার চুলের ফলিকলকে নিয়মিত সুস্থ এবং সতেজ রাখতে হবে।
চুল গজানোর প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম বেশ কিছু উপায় আবিষ্কৃত হয়েছে। কৃত্রিম উপায়ে দ্রুত চুল গজিয়ে ফেলা সম্ভব কিন্তু এই প্রক্রিয়া সাধারণ মানুষের জন্য খুবই ব্যয়বহুল। বাকি থাকে প্রাকৃতিক উপায়ে চুল গজানো বা সুস্থ ফলিকল তৈরি করা। অনলাইনে ঘাঁটলে রকম হাজার হাজার রেসিপি চোখে পড়বে আপনার। তবে এর মধ্যে একটি কার্যকরী উপায়ের কথা আপনাদের জানাচ্ছি। প্রাকৃতিক উপায়ে চুল গজানোর ওষুধ বানানোর জন্য যা যা লাগবে
বিছুটি পাতাঃ বিছুটি পাতা আমাদের চোখে শত্রু হলে ভেষজ গুণের জন্য বহু আগে থেকেই আয়ুর্বেদের গবেষণার বিষয়। এতে রয়েছে আয়রন, ভিটামিন এ, সি এবং কে প্লাস, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। ভেষজ চিকিৎসায় এবং চুলের যতেœর বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহার করা হয় এই গাছের নির্যাস। চুল গজাতে এই পাতার ব্যবহার অনেক দিন ধরেই হয়ে আসছে।
বিছুটি পাতা ; Source: Pinterest
হর্সটেইলঃ ঘোড়ার লেজের মতো দেখতে বলে এই গাছের এই নাম। এই গাছের পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সিলিকা যা নতুন চুল গজাতে খুব সহায়ক।
ঘৃতকুমারীর রসঃ স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের প্রথম পছন্দ এলোভেরা। এর দেশীয় নাম ঘৃতকুমারী। এমনকি ঢাকা শহরেই ফুটপাতের এই রস সকাল বিকেলে বিক্রি হয়। চুলের যত্নে ঘৃতকুমারীর কথা না বললেই না। চুলের যত্নে র যত পণ্য মেলে তার সবগুলোতেই ঘুরে ফিরে ঘৃতকুমারী বা এলোভেরার নাম খুঁজে পাবেন। ঘৃতকুমারীর রস চুলকে নরম করে মাথার চুলের গ্রন্থিতে পুষ্টি জোগায় বলেই এর এতো ব্যবহার। আমাদের ঘরোয়া রেসিপিতে তাই ঘৃতকুমারী লাগবেই।
দরকারী তেলঃ নারিকেল তেল থেকে শুরু করে কালিজিরার তেল কিংবা ক্যাস্টর অয়েল, যেকোনো তেলই এতে ব্যবহার করা যাবে।
ঘৃতকুমারী ; Source: Pinterest
এই রেসিপিতে প্রয়োজনীয় উপকরণের পরিমাণ
১/ ১ কাপ বিশুদ্ধ পানি
২/ ২ চামচ শুকনো বিছুটি পাতার গুঁড়ো
৩/ ২ চা চামচ হর্সটেইল পাতা
৪/ ২ চা চামচ এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীর রস
৫/ ১০ ফোঁটা বাগান ঋষি(স্যালভিয়া ) ফুলের তেল
৬/ ১০ ফোঁটা রোজমেরি গাছের তেল
যেভাবে প্রস্তুত করবেন
১। প্রথমেই বিশুদ্ধ পানি আগে ফুটিয়ে নিন, ফুটন্ত পানিতে শুকনো বিছুটি পাতার গুঁড়ো এবং হর্সটেইল পাতা ছেড়ে দিন।
২। মিনিট দুয়েক ফুটিয়ে নামিয়ে ফেলুন দ্রবণ এবং দ্রবণটি ঠান্ডা হতে দিন।
৩। মিশ্রণটি ঠান্ডা হলে পাতা ছেঁকে ফেলে দিন এবং স্প্রে বোতলে মিশ্রণটি ভরে ফেলুন।
৪। এরপর বোতলে ২ চামচ এলোভেরা জেল মিশিয়ে বোতলটি ঝেঁকে নিন।
৫। এই মিশ্রণ ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করুন। তিন মাস পর্যন্ত এই মিশ্রণ ব্যবহার করা যায়।
মিশ্রণটি বোতলে ভরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন; Source: Pinterest
যেভাবে ব্যবহার করবেন ফ্রিজে সংরক্ষণ করা এই ঘরোয়া ওষুধ নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত। সম্ভব হলে দিনে দুই বার করে মাথার ত্বকে স্প্রে করুন । তবে প্রতিদিন রাতে ঘুমের আগে এই ওষুধ ব্যবহারে ফলাফল আসে দ্রুত এবং সন্তোষজনক।
নিয়মিত যত্ন নিলে আপনার চুল হয়ে উঠবে সতেজ ও প্রাণবন্ত ; Source: Pinterest
অতিরিক্ত চুল পড়া রোধে বেশ কিছু টিপস:
১। কখনোই গরম পানিতে চুল ধোবেন না, গরম পানিতে চুল ধুলে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে।
২। নিয়মিত চুলে শ্যাম্পু না করে সম্ভব হলে প্রতিদিন ঠান্ডা পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন।
৩। চুলে নিয়মিত জেল,স্প্রে ব্যবহার করবেন না।
৪। ধূমপান এবং এলকোহল সেবন কে না বলুন।
বেশি চুল পড়ার সমস্যা নতুন নয়, তবে ধৈর্য ধরে চুল ধরা রোধের চেষ্টা করলে বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। তাই সময়মতো ব্যবস্থা নিন এবং নিজের চুলের যত্ন নিন।